ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমান। দেশটিতে উৎসবের মধ্য দিয়ে পবিত্র রোজাকে বরণ করা হয়। মসজিদের পাশে কোনো খোলা জায়গায় বিশাল ড্রাম বাজিয়ে পরস্পরকে অভিনন্দন জানায় সবাই।
ইন্দোনেশিয়ায় জাভার সেমারাং শহরের বাসিন্দারা দুগদেরান নামে একটি উৎসব পালন করে থাকেন। পবিত্র রমজান মাস শুরুর সংকেত হিসেবে প্রতিবছর মসজিদগুলোয় ঢাক পেটানো হয়। ‘দুগ’ শব্দটি এসেছে মসজিদের ওই ঢাকের শব্দ থেকে। এ ছাড়া কামান থেকে গোলাও ছোড়া হয়। সাধারণত রোজা শুরুর দুই সপ্তাহ আগে থেকে সেমারাংয়ের বাসিন্দারা উৎসবটি পালন করে থাকেন। উৎসবে বাসিন্দারা রংবেরঙের পোশাক পরেন, শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
পশু জবাই করার মধ্য দিয়ে পালিত হয় মিউগান উৎসব। মিউগান উৎসবের আরেকটি নাম ‘মাকমিউগানা’। এ উৎসব পালন করা হয় রোজা শুরুর দিনদুয়েক আগে।
ইন্দোনেশিয়ার সুদানিসি জাতিগোষ্ঠী মুংগাহান নামে উৎসব পালন করে। মুংগাহান শব্দটির পেছনে আছে ‘উনগাহ’ শব্দটি। এর অর্থ সামনে এগিয়ে চলা। রোজাদার যেন আগেরবারের চেয়ে আরও বেশি সংযমের সঙ্গে এবারের রোজা পালন করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে মুংগাহান উৎসব পালন করা হয়। এ উৎসবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়া হয়, প্রতিবেশীর সঙ্গে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়।
আরও পড়ুনহাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল কেন পড়ব০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪গোসল করে ও সাঁতার কেটে পালন করা হয় ‘পাদুসান’ উৎসব। নদী ও পুকুরে গোসল করে যেন শরীর ও মনকে পরিশুদ্ধ হয়। ইসলাম ধর্মে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। এই বিশ্বাস থেকেই ইন্দোনেশীয়রা উৎসবটি পালন করে থাকেন। মধ্য ও পূর্ব জাভার অনেক অঞ্চলেই এই উৎসবের প্রচলন রয়েছে। গোসল করে তাঁরা যোগ দেন প্রার্থনায়। প্রার্থনা শেষে নিয়ে আসা খাবার কলাপাতায় সাজানো হয়। এরপর সবাই মিলে খাবার খান।
ইন্দোনেশিয়ায় ইফতারকে বলা হয় বুকা। বুকা মানে শুরু করা। ইফতারে জনপ্রিয় খাবার আবহাম নামের পানীয় আর খেজুর। খেজুরের সঙ্গে কোলাক নামের একধরনের মিষ্টান্নও পরিবেশন করা হয়। রাতের খাবারে তারা ভাত, সবজি, মুরগি ও গরুর গোশত খেতে পছন্দ করে।
পবিত্র রমজানে তাদের প্রতিদিনকার খাবার আপেম। আপেম দেখতে চিতই পিঠার মতো। নারকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে আপেম তৈরি করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় নিওরোজ নামের উৎসব পালন করা হয়। নিওরোজ শব্দের অর্থ পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করা। তাই রমজানের আগে বাবা-মা, দাদা-দাদি, শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ অন্য স্বজনদের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পাঠানো হয়। সাধারণত এই খাদ্যদ্রব্যের তালিকায় থাকে গোশত, কফি, দুধ, চিনি, মিষ্টিসহ অন্যান্য পণ্য।
আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়২৫ মার্চ ২০২৪ইন্দোনেশিয়ার মানুষেরা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রমজান মাস পালন করেন। ইন্দোনেশিয়ার বন্টেন প্রদেশে পবিত্র রমজানে কোরআন পাঠের সংস্কৃতি আরেকটি ভিন্নতর। সাহ্রির সময়ে সেখানে মিকরান নামে কোরআন পাঠের একধরনের আয়োজন হয়। সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াতের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা তুলে ধরার সুযোগ পান তরুণেরা। সব মসজিদে ৮ থেকে ১৬ জনকে নির্বাচন করা হয়।
পবিত্র রমজান মাসের শেষ দিকে ইন্দোনেশীয়রা গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যায়। রোজায় শ্রমিকদের দেওয়া হয় এক মাসের বেতনের সমান টাকা।
রমজান মাসের শেষ দিনে সন্ধ্যায় তাঁরা ঢোল বাজান, নামাজ পড়েন আর বয়ান করেন। ঈদের নামাজের পর ঘরে ফেরার পথে পড়শি বা বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যায়। আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে ক্ষমা চায়। ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল ফিতরকে বলে লেবারান। ‘সালামাত ঈদুল ফিতর লাহির বাতিন’ বলে তারা এই সময় সবাইকে সম্ভাষণ করে। এর অর্থ, ‘শুভ ঈদুল ফিতর, আমাদের সব পাপের জন্য ক্ষমা করো।’
আরও পড়ুনতুর্কমেনরা তারাবি পড়ে ফজর পর্যন্ত২৯ মার্চ ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন দ ন শ য় র ইন দ ন শ য় য় রমজ ন ম স মসজ দ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় এবার ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা, বেড়েছে ২২টি মন্ডপ
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার মন্ডপগুলোতে চলছে নানা প্রস্ততি। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় বেড়েছে ২২টি পূজা মন্ডপ। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। জেলায় ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আবার কোথাও শুরু হয়েছে রঙের কাজ। আপন মনে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। এখন শেষ সময়ের পূজার প্রস্ততি নিচ্ছেন আয়োজকেরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমা শিল্পীরা ৫টি থেকে ১০টি পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করেছেন।
প্রতিমা শিল্পী কুমারেশ দাস ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল জানান, শেষ সময়ে প্রতিমা শিল্পীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে চাহিদাও বেশি।
এদিকে সকলের সহযোগিতায় অনাড়ম্বরভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে চান আয়োজকরা।
হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দিরের উপদেষ্টা বিপ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আশা করছি প্রতিবছরের মতো এবছরও উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসনের সহযোগিতা ও আশ্বাসে আমরা আমাদের পূজার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।”
মিলপাড়া সাবর্জনীন পূজা মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী বাগচী বলেন, “প্রত্যেক ধর্মকে সন্মান জানানো প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার সকলেই আমাদের পাশে থাকেন। আশাকরি এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।”
কুষ্টিয়া মহাশ্মশান মন্দিরের পুরোহিত পলাশ চক্রবর্ত্তী বলেন, “আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী এবং ২ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দশভূজার আগমন হবে হাতিতে চড়ে আর কৈলাশে ফিরবেন দোলায়।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় ২৫০ মন্দিরে শারদীয়া দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮১টি, খোকসা উপজেলায় ৫৯টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫৯টি, মিরপুর উপজেলায় ২৮টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ১১টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ১২টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ বছর গত বছরের তুলনায় ২২টি মন্ডপে পূজা বেড়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ২২টি পূজা বেশি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসনের সাথে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।”
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিটা পূজা মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পূজা মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে।”
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, যার যার ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে ও উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা তাদের অধিকার। কোন প্রোপাগান্ডা ও গুজবে কান দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। মব সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস