সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি খারাপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনীতি ধ্বংসের পথে নেই; অন্তর্বর্তী সরকার বরং অর্থনীতি উদ্ধার করেছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ায় মানুষের আয়ে প্রভাব পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিল্পকারখানা যেন চালু থাকে সেজন্য দাম যাই হোক, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এজন্য এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় নেই। তবে ব্যবসাপাতিতে মন্দা, আয়ের উৎস কিছুটা কম। এ কারণেই কিছু মানুষ কষ্টে রয়েছে। এখনও নতুন কর্মসংস্থান কম হচ্ছে, যা নিয়ে একনেকেও কথা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সংশোধন করা হয়েছে। আগামীতে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে গতি আসবে। এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গার্মেন্টসে সরকার নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে। আরও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ খাত সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় দোষ রয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা তেমন নেই। এসব সমস্যা উত্তরণে বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।

বেক্সিমকোর ১৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, বেক্সিমকোর বিষয়টি আলাদা একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের দুর্নীতি ও ব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও তাদের প্রতি সরকারের নজর রয়েছে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকার টাকা দিচ্ছে। তবে সবাইকে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের দায় সরকারের ঘাড়ে দেওয়া ঠিক নয়। সরকারের টাকা মানে তো জনগণের টাকা; যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক বিষয়সহ নানা কাজে ব্যয় হয়। তিনি জানান, কাজহারা শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। তবে আরেকটু ভালো হতে পারত। গত বছরের তুলনায় অনেক পণ্যের দাম এখন কম। আসন্ন গ্রীষ্মকালে জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা নিয়ে আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এলএনজি সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। ধারাবাহিকভাবে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। দাম কম বা বেশি যা-ই হোক, সরবরাহ নিশ্চিতের চেষ্টা করছে সরকার। আশা করা যায়, শিল্প ও মানুষের বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের সমস্যা হবে না। 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি। দুই কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৭ লাখ ১৯ হাজার ৬৮০ টাকা। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জি গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে কেনা হবে এক কার্গো (৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ)। প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১৫ দশমিক ৭৩ মার্কিন ডলার দরে এ গ্যাস আমদানিতে স্থানীয় মুদ্রায় ব্যয় হবে প্রায় ৭৫৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। 

গুনভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে কেনা হবে বাকি এক কার্গো। এতে ব্যয় হবে ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের দাম পড়ছে ১৫ দশমিক ৪৭ ডলার। এর আগে গত কয়েক বৈঠকে বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ কয়েক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

গতকালের সভায় টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে বিক্রির জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি থেকে ৯৫ টাকা ৪০ পয়সা দরে এ ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ ছাড়াও বৈদেশিক উৎস থেকে বেসরকারি খাতের আমদানি করা চাল স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ টন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়টিও অনুমোদন হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম

ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।

আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।

সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।

পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
  • ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে
  • সুনামগঞ্জে তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী
  • কমেছে সবজির দাম
  • বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম