শিল্পে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
Published: 6th, March 2025 GMT
সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি খারাপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনীতি ধ্বংসের পথে নেই; অন্তর্বর্তী সরকার বরং অর্থনীতি উদ্ধার করেছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ায় মানুষের আয়ে প্রভাব পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিল্পকারখানা যেন চালু থাকে সেজন্য দাম যাই হোক, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এজন্য এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় নেই। তবে ব্যবসাপাতিতে মন্দা, আয়ের উৎস কিছুটা কম। এ কারণেই কিছু মানুষ কষ্টে রয়েছে। এখনও নতুন কর্মসংস্থান কম হচ্ছে, যা নিয়ে একনেকেও কথা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সংশোধন করা হয়েছে। আগামীতে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে গতি আসবে। এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গার্মেন্টসে সরকার নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে। আরও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ খাত সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় দোষ রয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা তেমন নেই। এসব সমস্যা উত্তরণে বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।
বেক্সিমকোর ১৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, বেক্সিমকোর বিষয়টি আলাদা একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের দুর্নীতি ও ব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও তাদের প্রতি সরকারের নজর রয়েছে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকার টাকা দিচ্ছে। তবে সবাইকে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের দায় সরকারের ঘাড়ে দেওয়া ঠিক নয়। সরকারের টাকা মানে তো জনগণের টাকা; যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক বিষয়সহ নানা কাজে ব্যয় হয়। তিনি জানান, কাজহারা শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। তবে আরেকটু ভালো হতে পারত। গত বছরের তুলনায় অনেক পণ্যের দাম এখন কম। আসন্ন গ্রীষ্মকালে জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা নিয়ে আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এলএনজি সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। ধারাবাহিকভাবে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। দাম কম বা বেশি যা-ই হোক, সরবরাহ নিশ্চিতের চেষ্টা করছে সরকার। আশা করা যায়, শিল্প ও মানুষের বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের সমস্যা হবে না।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি। দুই কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৭ লাখ ১৯ হাজার ৬৮০ টাকা। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জি গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে কেনা হবে এক কার্গো (৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ)। প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১৫ দশমিক ৭৩ মার্কিন ডলার দরে এ গ্যাস আমদানিতে স্থানীয় মুদ্রায় ব্যয় হবে প্রায় ৭৫৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
গুনভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে কেনা হবে বাকি এক কার্গো। এতে ব্যয় হবে ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের দাম পড়ছে ১৫ দশমিক ৪৭ ডলার। এর আগে গত কয়েক বৈঠকে বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ কয়েক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
গতকালের সভায় টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে বিক্রির জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি থেকে ৯৫ টাকা ৪০ পয়সা দরে এ ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ ছাড়াও বৈদেশিক উৎস থেকে বেসরকারি খাতের আমদানি করা চাল স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ টন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়টিও অনুমোদন হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪