শ্রমবাজারে নারীর প্রসঙ্গ এলেই আমাদের চোখের সামনে প্রথমে ভেসে ওঠে সকালবেলা রাস্তায় সারি বেঁধে হেঁটে যাওয়া পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের মুখ! কিংবা কৃষিজমিতে কাজে নিমগ্ন ঘোমটা টানা মাথা নিচু করে রাখা কোনো নারীর প্রতিচ্ছবি। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে শ্রমবাজারের সংজ্ঞা বা এর বিস্তৃতি আরও অনেক বেশি গভীরে প্রোথিত। প্রতিবছর বিশ্ব শ্রমিক দিবস বা নারী দিবস সামনে এলে আমরা শ্রমবাজারে নারীর উপস্থিতি, নারীর শ্রম মজুরি ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। এ প্রসঙ্গটি সারাবছরই আলোচনার কেন্দ্রে থাকা দরকার এই কারণে যে, একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে নারী কেন পুরুষের সমান শ্রম দিয়েও মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হবে।
এবার আসা যাক, শ্রমবাজারে আদিবাসী নারীর অবস্থান কোথায়, সে প্রসঙ্গে। অধিকাংশ সময় একথা বলতে শোনা যায়, আদিবাসী নারীরা পরিশ্রমী, তারা অনেক বেশি স্বাধীন, ক্ষেতে-খামারে আদিবাসী নারীরা সবচেয়ে বেশি সময় ও শ্রম ব্যয় করে ইত্যাদি। শুধু জুমভূমিতে, ক্ষেতে-খামারে বা ঘরের কাজে আদিবাসী নারীর শ্রম ব্যয়িত হয় না, তারা সরকারি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদে আসীন থেকে দক্ষ হাতে প্রশাসনও সামলাচ্ছেন। সাধারণ অর্থে শ্রমবাজার বলতে কেবল কল-কারখানা বা জমিতে কাজ করাকে বোঝালেও প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ধাপে আমাদের যে কাজের স্তর রয়েছে সেগুলোর প্রতিটি কাজই শ্রমবাজারের অংশ। তাই আদিবাসী নারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ হোক, জুম পাহাড়ের চুড়া হোক কিংবা চা বাগান বা পানপুঞ্জিতে হোক, নারী যেখানেই কাজ করুক না কেন প্রতিটি স্তরেই তার শ্রম, মেধা, প্রচেষ্টা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকে।
আদিবাসী সমাজে যদি মাতৃতান্ত্রিক বা মাতৃসূত্রীয় সমাজের কথা বলি তাহলে প্রথমে গারো আর খাসি জনগোষ্ঠীর কথা আসবে। মাতৃসূত্রীয় কথাটি শুনলে নারীর ক্ষমতায়নের কথাটিও মনে হওয়া স্বাভাবিক। যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরাই ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে থাকে, তাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে মাতৃসূত্রীয় সমাজের নারীরাও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। কিন্তু সম্পত্তির ওপর নারীর উত্তরাধিকার থাকলেও সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের নাটাই পুরুষের হাতেই থাকে। এমনকি সমতলের আদিবাসীদের মধ্যে যে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত আছে সেখানে পুরুষেরা নারীর প্রতিনিধি হিসেবে সমাজের বিচার-আচারে প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। যেমন, গারো সমাজে গ্রামপ্রধানকে বলা হয় ‘সংনি নকমা’। গারো সমাজ মাতৃসূত্রীয় হলেও নারীরা নকমা হতে পারেন না। নকমা হন পুরুষেরা। এমনকি গ্রামের যেকোনো সালিশ বা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নারীর পক্ষ থেকে একজন পুরুষ প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন, যাকে বলা হয় ‘চ্রা-পান্থে’। গারো বা খাসি সমাজ মাতৃসূত্রীয় বা মাতৃতান্ত্রিক যা-ই বলি না কেন নারীর নেতৃত্ব এখানেও বিপন্ন।
মাতৃসূত্রীয় পরিবারের সদস্য হওয়াতে গারো নারীদের মধ্যে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব প্রতিপালনের বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমন, শহরের বিউটি পার্লারগুলোতে গারো মেয়েদের একাধিপত্য রয়েছে। গারো মেয়েদের এ আধিপত্যের পেছনের গল্পের কথা আমরা কতজন খোঁজ রাখি? মধুপুরের বন যখন উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে, যে বনে গারো আদিবাসীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছে। বন বিভাগ যখন তাদের বন থেকে উচ্ছেদ করে মিথ্যা বন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় তখন তাদের একমাত্র পথ থাকে শহরে এসে ভিড় করা! গ্রামের মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উচ্চতর ডিগ্রি না থাকায় অফিস-আদালতেও তাদের কাজের সুযোগ কম থাকে। ফলে গারো নারীদের রূপবিশারদ হিসেবে শহরের পার্লারগুলোতে তাদের কর্মসংস্থান খুঁজে নেওয়া ছাড়া অন্য পথগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।
খাসি সমাজের নারীরা শহরমুখী না হলেও তাদের পানপুঞ্জি আজ চা-বাগানের মালিকদের আগ্রাসী দৃষ্টিতে পড়েছে। চা-বাগান মালিকেরা বিনা নোটিশে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়, দিনে-দুপুরে অথবা রাতের আঁধারে একরের পর একর পানের বরজ কেটে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এসব অন্যায়ের কোনো বিচার হয় না। বরং খাসি জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ আতঙ্কের মাঝে দিনাতিপাত করে। পানের বরজ ধ্বংসের কারণে খাসি নারী শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়ছেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে পড়ে খাসি নারী শ্রমিকেরা আরও প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছেন।
আদিবাসী নারী প্রতিদিন দরিদ্রতার ভেতর দিয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও তাদের কাছে ন্যায়-অন্যায়ের বিচার অত্যন্ত প্রখর। যেমন, বান্দরবানের লামা উপজেলার জয়চন্দ্র পাড়া, লাংকম পাড়া, রেংয়েন পাড়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার জন্য রাবার কোম্পানির লোকেরা আদিবাসীদের বসতভিটায় আগুন দেয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ দিতে গেলে ত্রাণদলের সঙ্গে দুর্বৃত্তরাও যুক্ত হয়। সেই সময় লাংকম ম্রো পাড়ার ‘সংলেম ম্রো’ নামের এক কৃষক নারী দুর্বৃত্তদের ঠিকই চিনে ফেলেন। তখন ওই ম্রো নারী চিৎকার করে বলতে থাকেন, যারা আমাদের বাপ-দাদার ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করে কেড়ে নিতে চায়, তাদের কাছ থেকে কোনো ত্রাণ নেব না। যে নারী দারিদ্রতার কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও লোভে না পড়ে একজন অন্যায়কারীর দান দম্ভের সঙ্গে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, সেই নারী তাঁর শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাবেন না কেন।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্যে আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো– ফসল আবাদে আদিবাসী নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের কদর বেশি। কারণ তারা পরিশ্রমী, বিশ্বাসী ও আস্থা নিয়ে কাজ করেন। কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কম। এই সহজ সরল বিশ্বাসী আদিবাসী শ্রমিককেই তাঁর ন্যায্য শ্রমমজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়। এ আদিবাসী শ্রমিকের দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে প্রতিনিয়ত ঠকানো হচ্ছে! অভাবের তাড়নায় আদিবাসী শ্রমিকেরা আগাম শ্রম বিক্রি করেন, ফলে দাদন হিসেবে নেওয়া টাকা পরিশোধের সময় তাদের দাদন ব্যবসায়ীরা স্বল্প মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করায়। এ মজুরি বৈষম্যের বিষয়টি আরও প্রকটভাবে দেখা যায়, লিঙ্গ ও বয়সভেদে। একজন আদিবাসী পুরুষ শ্রমিক যেখানে দৈনিক মজুরি পান ৩৭০ টাকা, সেখানে নারী শ্রমিক পান ৩৫০ টাকা এবং কিশোরী ছেলে বা মেয়েটি পায় ২৫০ টাকা। অথচ তারা একই কাজ একই ক্ষেতে একযোগে করেন। কাজেই আদিবাসী শ্রমিকদের অভাবের সুযোগ নিয়ে বিত্তশালীরা তাদের ওপর মজুরি বৈষম্য চাপিয়ে দেন।
পরিশেষে একথা বলতে হয় যে, নারীকে প্রতি পদে পদে যে বঞ্চনা ও বৈষম্যের মাঝে টিকে থাকতে হয়, সেই হতাশা ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু আশার আলো জিইয়ে থাকে। বেশ কয়েক বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কিছু আদিবাসী মেয়ে সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নিয়ে হংকংয়ে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যায়। বর্তমান বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতামূলক যুগে এসে এসব পেশা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পাহাড়ি আদিবাসী নারীরা তাদের চিন্তা, মেধা ও অভিজ্ঞতাকে চতুর্মুখীভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। যেমন- কৃষিকাজ, জুমচাষ, সরকারি চাকরির পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বয়ন ও হস্তশিল্পের ব্যবসা, পোলট্রি ফার্ম, মুদি দোকান, রেস্তোরাঁ, অনলাইনে পণ্য সরবরাহ, গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী, করপোরেট অফিসে অভ্যর্থনাকর্মী ইত্যাদি মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নারীরা নিজেদের আর্থিক স্বনির্ভরতা বাড়াতে সচেষ্ট রয়েছেন। অতীতের কষ্টকর অভিজ্ঞতা ও বর্তমান বিশ্বায়নের বাণিজ্যিক চাহিদার তাগিদ থেকেই পাহাড়ি নারী এখন তাঁর নিত্যদিনের কর্মজীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছেন। কাজের জন্য আদিবাসী নারীদের বিদেশে পাড়ি জমানোও একধরনের বিপ্লব। কারণ প্রথা ভাঙা এ নারীরা বিদেশের মাটিতে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত খুঁজে বের করেছেন– এটাও একটা বিপ্লব। বর্তমানে এ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাদের পরিবারে, সমাজে ও দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছেন।
বিশ্ব নারী দিবসে এটিই হোক অঙ্গীকার– শ্রমবাজারে সকল নারীর প্রতি মজুরি বৈষম্য দূর হোক। নারীর ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে আইন করে সরকারিভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ রমব জ র ক জ কর ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে ২৪৯ ও করোনা নিয়ে ভর্তি ২৬ জন।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ ৩০০ শয্যার হাসপাতাল ডেঙ্গু ও করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ১০ ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে থেকে আসা। করোনা আক্রান্ত তিনজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন একজনসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৮ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩, ঢাকা বিভাগে ৯, চট্টগ্রামে ৩৯, ময়মনসিংহে ৭, খুলনায় ৮, রাজশাহীতে ৫, রংপুরে ৩ ও সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৬৫৯ জন।
আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ এ রোগী একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছর করোনায় চারজনের মৃত্যু হলো। নতুন করে ২৬ জনসহ এ বছর আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২৪৬ জনে। গত এক দিনে ২৯১ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ রোগী পজিটিভ হয়েছেন।
ঢাকায় বাড়ছে বাইরের রোগী
ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালের ৩০০ শয্যা প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এখানে ২৫ রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা তিনজনের অবস্থা জটিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসাধীন রোগীর বড় অংশ ঢাকার বাইরের। প্রকোপ বাড়লে আগের মতো ধাপে ধাপে লোকবলের পাশাপাশি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে।
সরেজমিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ২০ থেকে ৩০ রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় দেখা যায়। জ্বর-সর্দি নিয়ে এসেছেন। লক্ষণ দেখে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলেও, অনেকেই তা না করে ফিরে যান। প্রায় আধা ঘণ্টার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে গাজীপুর থেকে এক রোগীকে পাওয়া যায়। স্বজন জানান, চার দিন ধরে শরীর ব্যথা, জ্বর। পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় এ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মাকে ভর্তি করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বাহার হোসেন। তিনি সমকালকে জানান, স্থানীয় হাসপাতালে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ডিএনসিসি হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। বর্তমানে অবস্থা ভালো। পেটে একটু ব্যথা আছে, আলট্রাসনোগ্রাম করে ছাড়পত্র দেবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, গত মাস থেকে রোগী বাড়ছে। মে মাসে করোনা নিয়ে ভর্তি হন ২৪ জন। এ মাসের ১৫ দিনে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। ডেঙ্গু নিয়ে মে মাসে ভর্তি হন ৪৭ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত এসেছেন ২৬ জন। রোববার বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ রোগী আসছেন জ্বর-সর্দি ও গায়ে ব্যথা নিয়ে। গুরুতর রোগীরা অন্য হাসপাতালের রেফারে আসছেন।
বাইরের রোগী বেশি হলেও তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভর্তি রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন লাইন রয়েছে। বর্তমানে একসঙ্গে ৩০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। ৪৫ আইসিইউ সক্রিয়, ৭৯ চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ৮৪ জন।
চট্টগ্রামে দুই হাসপাতালে শুরু পরীক্ষা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৬৫ শয্যা করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল এখানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। দুই হাসপাতালে বর্তমানে তিনজন চিকিৎসাধীন। পাঁচ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত করার কথা থাকলেও পারেনি কর্তৃপক্ষ। আজ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের করোনা শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে আইসিইউ শয্যাগুলো সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।’ চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আপাতত ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। আইসিইউ প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করব।’
খুলনার পিসিআর ল্যাব বিকল
খুলনা ব্যুরো জানায়, জেলায় সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার একমাত্র আরটিপিসিআর ল্যাব খুলনা মেডিকেল কলেজে। মেরামত না করায় দীর্ঘদিন পিসিআর ল্যাবটি বিকল পড়ে আছে। বর্তমানে র্যা পিড অ্যান্টিজেন্ট কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ৪০ শয্যা করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করেছেন তারা।
সিলেটের দুই বন্দরে বিকল থার্মাল স্ক্যানার
সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি নির্দেশে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর অধীনে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। অবশ্য গত শুক্রবার শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুই করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, দুই নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তামাবিল স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার বিকল হয়ে যাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে বিকল্প পদ্ধতি ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।