ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহের ধারণ করা অডিও ও ভিজ্যুয়াল ফুটেজ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। তৈরি করা হবে ওই সময়ের আন্দোলনে যুক্ত সমন্বয়ক, ছাত্র-জনতা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ৩০০ প্রামাণ্যচিত্র। শহীদদের ছবি ও ব্যবহৃত পোশাক দিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে একটি জাদুঘরও করা হবে।

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ‘দেশি-বিদেশি উৎস হতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, ২০২৪–এর অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ’ শিরোনামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৭ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে এ অর্থের জোগান দেওয়া হবে।

গত ৩ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্মতি দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এটি পাঠাতে হবে না। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিজ ক্ষমতাবলে এটি অনুমোদন করতে পারবেন।

আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে এটিই প্রথম প্রকল্প। এ অভ্যুত্থান নিয়ে আরও কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, যেগুলো চলতি বছর অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে।

আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণে এটিই প্রথম প্রকল্প। এ অভ্যুত্থান নিয়ে আরও কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, যেগুলো চলতি বছর অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত অন্যায়-অবিচারের নমুনা সংরক্ষণ করা হবে এখানে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের ওপর অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল (ফুটেজ) সংগ্রহে খরচ হবে ১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে জুলাই অভ্যুত্থানের ফুটেজ রয়েছে, তাদের কাছ থেকে এসব দলিল কেনা হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স থেকেও দলিল সংগ্রহ করা হবে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ১০০টি লটে সংগ্রহ করা হবে এসব দলিল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অনেক ফুটেজ দেশে ও দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সেসব ফুটেজ কিনে সংরক্ষণ করব।—ইয়াকুব আলী, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রকল্প পরিচালক

শহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্র-জনতার সাক্ষাৎকারভিত্তিক ৩০০টি প্রামাণ্যচিত্র তৈরিতে খরচ হবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনের তৃতীয় তলায় একটি জাদুঘর বানাতে খরচ হবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শহীদদের ছবি ও ব্যবহৃত পোশাক সংরক্ষণ করা হবে জাদুঘরে। এসব কাজ বাস্তবায়নে দুই পরামর্শক নিয়োগ বাবদ খরচ হবে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কম্পিউটার ও আসবাব কেনাকাটায় খরচ হবে আরও ১ কোটি টাকা।

জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ করার পাশাপাশি শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তা, আহতদের পুনর্বাসনে ‘জুলাই অধিদপ্তর’ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য এ মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে ৬৩৮ কোটি টাকা সহায়তা দেবে, যা বিতরণ হবে ওই অধিদপ্তরের মাধ্যমে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রকল্প পরিচালক ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অনেক ফুটেজ দেশে ও দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সেসব ফুটেজ কিনে সংরক্ষণ করব।’ এসব কাজের জন্য পরামর্শক দরকার কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কারিগরি ও বড় কাজ তুলে আনতে পরামর্শকের প্রয়োজন হয়। তাই দুজন পরামর্শক রাখা হয়েছে।

এদিকে অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ করার পাশাপাশি শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তা, আহতদের পুনর্বাসনে ‘জুলাই অধিদপ্তর’ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য এ মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে ৬৩৮ কোটি টাকা সহায়তা দেবে, যা বিতরণ হবে ওই অধিদপ্তরের মাধ্যমে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত প রকল প আহতদ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ