বাস্তব জীবনে কেমন ছিলেন রওশন জামিল
Published: 8th, March 2025 GMT
পঞ্চাশের দশকের প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আধুনিকতার স্পর্শ, বিশ্বায়নের স্বপ্ন তখনো অনেকের কাছে ছিল কল্পনা। নাটক–সিনেমা, গানবাজনার প্রচার–প্রসারও সেভাবে ছিল না। আর যেটুকু যা ছিল, সেখানে মেয়েদের উপস্থিতি একেবারেই ছিল না বললেই চলে। ‘নারী অভিনেত্রী’র চরিত্রের প্রয়োজনে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ছেলেরা মেয়ে সেজে অভিনয় করতেন, পত্রপত্রিকা সূত্রে এমনও খবরও পাওয়া যায়। এই যখন পরিস্থিতি তখন কলেজপড়ুয়া একজন তরুণীর নিজের কলেজে মঞ্চস্থ হওয়া শরৎচন্দ্রের দেবদাস নাটকে অভিনয় করার কথা শোনা যায়। তিনি আর কেউ নন, জনপ্রিয় অভিনেত্রী রওশন জামিল।
ঢাকার রোকনপুরে ১৯৩১ সালের ৮ মে তাঁর জন্ম। শৈশব থেকেই নাচ–গান ভালোবাসতেন। ঘর থেকেই শুরু করেছিলেন চর্চা। তবে শুরুটা এতটা সহজ ছিল না। কারণ, ওই সময়ে একজন মেয়ের নাচ শেখা আজকের মতো এতটা সহজ ছিল না। নানা ঘাত–প্রতিঘাত, দ্বিধা—দ্বন্দ্ব বাধা হয়ে দাঁড়াত। যদিও তাঁদের বাড়িতে ওই সময়ে গানবাজনার চল ছিল। তবে তা ছিল একেবারেই ঘরোয়া পরিবেশে, নিজেদের মধ্যে। বাড়িতে সাংস্কৃতিক আবহ বিরাজ করলেও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে থাকার জন্য তাঁকে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছে।
স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর তিনি কেবল নাচ দেখতেন। পরে বাড়ি এসে সেগুলো অনুশীলন করতেন। এভাবেই নাচ শিখতে থাকেন তিনি। জানা যায়, একদিন স্কুলের এক অনুষ্ঠানে একজন নৃত্যশিল্পী (শিক্ষার্থী) অনুপস্থিত থাকায় তাঁর নাচার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু মাকে রাজি করাতে হবে? অনেক জোরাজুরি করলে মা রাজি হন। কিন্তু নিজের নামের পরিবর্তে তাঁকে ওই শিক্ষার্থীর নামে নাচ করতে হয়। তারপরও নাচার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুশি হন তিনি। পরে অবশ্য তাঁর বিপুল আগ্রহ দেখে তাঁর বাবা বাড়িতে নাচের শিক্ষক রেখেছিলেন। কিন্তু তা–ও একসময় বন্ধ হয়ে যায়। রওশন জামিলের শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে থাকার স্বপ্ন হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যেত, যদি না গওহর জামিলের সঙ্গে তাঁর দেখা হতো। ঘটনাটা বলি, তখন তিনি তাঁর ছোট বোন মমতাজকে নাচের স্কুলে নিয়ে যেতেন। আর এখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় গওহর জামিলের।
‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে খান আতাউর রহমান ও রওশন জামিল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রওশন জ ম ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ মারধরের ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী মো. গোলাম আজম ফয়সাল চিকিৎসা কেন্দ্রেই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। হামলার পর গুরুতর আহতাবস্থায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
আরো পড়ুন:
তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা কেন্দ্রের ২৩ নম্বর কক্ষে ফয়সাল ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। প্রথমে একজন বহিরাগত এসে ফয়সালের পরিচয় নিশ্চিত করে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই ৭-৮ জন কক্ষে প্রবেশ করে ফয়সালকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে এবং কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মারধর শুরু করে।
এক পর্যায়ে তারা ফয়সালকে টেনেহিঁচড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে আসে এবং এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধর শেষে যাওয়ার সময় যারা হামলার দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী গোলাম আযম ফয়সাল বলেন, “হামলাকারীদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ‘জনি, আর মারিস না’ বলে থামায়। চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিয়ে যায়।”
নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকি। খুব আতঙ্কে দিন পার করছি।” হামলাকারীদের কাউকে চেনেন না বলে মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি। তিনি বলেন, “ফয়সাল আগে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে যেত বলে আমরা শুনেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই আতঙ্কিত। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে বহিরাগতরা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিকভাবে প্রহার করেছে। আমরা জনি নামে একজনের কথা শুনেছি, যার নেতৃত্বে এই হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা পুলিশের সহায়তায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমি মাত্র বিষয়টি জানতে পারছি। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গতকাল পুলিশর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। তারা নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কাজ করছে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী