‘৬ পার্সেন্ট’ ঘুষ চেয়ে ভাইরাল সেই প্রকৌশলীকে শোকজ
Published: 11th, March 2025 GMT
গাইবান্ধায় ‘৬ পার্সেন্ট’ ঘুষ চেয়ে ভাইরাল পৌরসভার সেই প্রকৌশলীকে শোকজ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শফিউল ইসলামের ঘুষ চাওয়ার অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরই শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।
১০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের অডিওতে শোনা যায়, প্রকল্পের বরাদ্দ অনুযায়ী এক ব্যক্তির কাছে তিনি ৬ শতাংশ ঘুষের অর্থ দাবি করছেন। ঘুষ কম দিতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, একটি টাকাও কম দেওয়া যাবে না। কম দিলে বিল পাস করা যাবে না। ওই অডিওতে ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়। অডিওটি ধারণ করেন ফিরোজ কবির নামে ভুক্তভোগী ঠিকাদার।
১৫ জানুয়ারি ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ঘুষ চাওয়ার অডিওসহ অভিযোগ দেন ফিরোজ কবির। তবে তখন এটি ভাইরাল করা হয়নি। অভিযোগের অনুলিপি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসককেও দেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত করেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন। পরে এক মাস পার হলেও তিনি প্রতিবেদন জমা দেননি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় তদন্ত কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তদন্তাধীন বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।’
উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম প্রায় ১৩ বছর ধরে গাইবান্ধা পৌরসভা কার্যালয়ে চাকরি করছেন। র্দীঘদিন থেকে অনিয়ম করলেও ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ছাড়াও দুর্ব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির আরও অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দ টাকার ৬ শতাংশ ঘুষ দিয়ে ফাইল ছাড় করতে হয়।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যোগদানের পর থেকে তিনি পৌরসভার নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব পালন করছেন। বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদনে তিনি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিতেন। টাকা না দিলে সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানি করতেন। এসব অবৈধভাবে টাকা আয় করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। জেলা ও ঢাকা শহরে জমিসহ বাড়ি কিনেছেন তিনি।
ঠিকাদার ফিরোজ কবির দাবি করেন, ‘আমিও ওই প্রকৌশলীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিল তুলতে বাধ্য হয়েছি। কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁর কাজে হয়রানি করতেন। এমনকি একটি সড়কের কাজ দুই থেকে তিনবার করিয়ে নিতেন। অতিষ্ঠ হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রকৌশলী শফিউল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সোমবার গাইবান্ধা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) হেদায়েতুল ইসলাম অভিযুক্ত প্রকৌশলী শফিউল ইসলামকে শোকজ করেছেন। এ ব্যাপারে তিন দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস