বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) ৩৮৫ কোটি টাকার দেনার ভারে ডুবতে বসেছে। ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ফলে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। একইভাবে কাজ শেষ করেও পাওনা না পাওয়ায় ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

২০০২ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। তখন প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। তারপর পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত সিটি মেয়র নির্বাচিত হন। 

গত ৫ আগস্ট অভ্যুন্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে বরখাস্ত করে এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়।

বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণের পর থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকবার ঝামেলা হয়। এমনকি, সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু কোনোভাবে পুরো বিল পরিশোধ করেনি কোনো মেয়রই।

বিগত ৫ বছরে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। একই পাথে হাটেন সাদিক আব্দুল্লাহর ছোট চাচা ও পরবর্তী মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। যে কারণে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪ কোটি টাকা।

একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন মেয়র। ঘুষ না পাওয়ায় অনেক বিল আটকে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতও তার সময়ে অনেক ঠিকাদারের বিল আটকে দেন। ফলে ঠিকাদারদের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার মতো। আর বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাওনা ৩০০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য ঠিকাদারেরা প্রতিদিনই ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু ফান্ড না থাকায় বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

শুধু বিদ্যুৎ বিল আর ঠিকাদারদের পাওনার টাকা নয়, ফান্ড সংকটের কারণে বিসিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশনের বকেয়া ২০ কোটি টাকাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সিটি কর্পোরেশন  সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আয়ের চারটি উৎস রয়েছে। তাদের মধ্যে রাজস্ব আয়, রাজস্ব খাত, সরকারি অনুদান এবং বিদেশি সহায়তা। তবে বরিশালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় রাজস্ব বাড়ানো যাচ্ছে না। একইভাবে বিগত ৫ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে চলছিল সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করার কাজ। এ ক্ষেত্রে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিছুটা সফল হলেও ঠিকাদার, বিদ্যুতসহ অন্যান্য বকেয়া বিল পরিশোধে সফলতা পাননি।

সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের টিকিটে নতুন মেয়র হন খোকন সেরনিয়াবাত। অসুস্থ হওয়ায় তিনি সিটি কর্পোরেশন চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে মেয়রের সহধর্মিনী লুনা আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনে অবৈধ হস্তক্ষেপ শুরু করেন।

অভিযোগ রয়েছে, লুনা আব্দুল্লাহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে গত এক বছরে খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি। আভ্যন্তরীণ আয় বাড়লেও সরকারি কম বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় বিদেশি অনুদান না পাওয়ায় বেহাল দশা বিসিসির।

কর্মচারীদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বর্তমান প্রশাসককে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দেনার পরিমাণ এত বেশি যে তা আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে কোনোভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব নয়। 

তিনি বলেন, ঠিকাদাররা প্রতিনিয়ত টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ আয় থেকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর যে টাকা থাকে, তা থেকে বিদ্যুৎ বিলসহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে।

ঢাকা/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর শ ল স ট পর ম ণ সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের পর এবার সমাবেশে অংশ নিতে বিশেষ ট্রেন ভাড়া ছাত্রদলের

জামায়াতে ইসলামীর পর এবার বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশে অংশ নিতে প্রায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম ছাত্রদল ২০ বগির এই বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে।  

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশ করবে ছাত্রদল।

এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ২০ বগির একটি বিশেষ ট্রেনের জন্য আবেদন করা হয়। ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ রেলওয়ে। আগামী রোববার সকাল সোয়া ৭টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে এই ট্রেন ছেড়ে যাবে। আর ঢাকায় পৌঁছাবে বেলা সোয়া ১টায়। এই ট্রেন সন্ধ্যা সাতটায় আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০ বগির ট্রেনটিতে ১ হাজার ১২৬টি আসন রয়েছে। বিশেষ ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের চট্টগ্রাম, ঢাকা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেল ভবনের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে নিয়মিত ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন,  এই ট্রেনে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মী যাবেন। সবাই একসঙ্গে যেতে চাওয়ায় ট্রেন ভাড়া করেছেন। বাসে হলে তা সম্ভব ছিল না।

এর আগে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করেছিল জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করে দলটি। এই চার ট্রেন ভাড়া করতে দলটিকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা।

জামায়াতের ট্রেন ভাড়া করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনায় স্বাভাবিক নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ