রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব, শুনলেন গণহত্যার বর্ণনা
Published: 14th, March 2025 GMT
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সেখানে তারা ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মিয়ানমারে তাদের ওপর চালানো গণহত্যার মর্মস্পর্শী বর্ণনা শুনেছেন।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে তারা সরাসরি উখিয়ার বর্ধিত ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান।
বর্ধিত ক্যাম্প ২০-এর এইচ/২, ব্লক-৩-এর বাসিন্দা বদর আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমাদের মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) জাতিসংঘ মহাসচিবকে মিয়ানমারের অত্যাচারের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। কীভাবে বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, চোখের সামনে স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, গণহত্যা চালানো হয়েছে—সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “রোহিঙ্গাদের দেওয়া শর্তগুলো মেনে নিলে আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে রাজি। এই বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা।”
লার্নিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনেছেন এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার কারণ জানতে চেয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো জোরালো ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
এরপর রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্র ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব। বিকেলে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করার কথা রয়েছে তাদের।
এই সফরকে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের নতুন বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা/তারেকুর/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।