আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা ও বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের আজ সোমবার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পুলিশের ভেতরেও এই অনুষ্ঠান ঘিরে রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের এ ধরনের অনুষ্ঠান উজ্জীবিত করবে বলে মনে করছেন অনেকে। আবার পুলিশ সদস্যরা স্বাধীন পুলিশ কমিশনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরবেন। এ ছাড়া মাঠ পর্যায় থেকেও অনেকে তাদের অম্লমধুর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে পারেন। 

পুলিশের ১২৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সিনিয়র সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহম্মদ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকে দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), রেঞ্জ ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক), মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব ইউনিটের প্রধান, পুলিশ সদরদপ্তরের তিনজন ডিআইজি ও সব অতিরিক্ত আইজিপি এবং আইজিপি উপস্থিত থাকবেন। 
অনুষ্ঠানে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের দাবি উপস্থাপন করা হতে পারে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশের একশ্রেণির সদস্য নির্বিচার গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পুলিশকে প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি ওঠে।
পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। এতে তারা উজ্জীবিত হবেন। বাহিনীতেও ইতিবাচক বার্তা যাবে। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হলে সেখানে স্বাভাবিকভাবে নানা প্রত্যাশা ও সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এই বৈঠকেও এ ধরনের বিষয় সামনে আসতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩ অক্টোবর পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। সংস্কার কমিশনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পুলিশের জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠনের পক্ষে মত দেন।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে, নাকি সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে– সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া পুলিশ কমিশনের গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি বিষয় আরও বিচার-বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। বাছাই কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশা থেকে চারজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি পুলিশ কমিশনের সদস্য হবেন। এর মধ্যে একজন আইনজ্ঞ, একজন অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, সমাজবিজ্ঞান বা পুলিশিং বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষাবিদ ও একজন মানবাধিকারকর্মী থাকবেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিবেদনের এই অংশ নিয়ে জোর আপত্তি রয়েছে পুলিশ সদস্যদের। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে সাধারণ মানুষের চাওয়াকে অগ্রাহ্য করেছে বলেও মনে করেন পুলিশ সদস্যরা। তারা বলছেন, কমিশন গঠনই করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের মাধ্যমে। সেখানে যখন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘বিশেষজ্ঞ মতামত’ গ্রহণের কথা বলা হয়, তখন তাদের ভূমিকা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ছাড়া ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণের’ কথাটিকে সংস্কার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বলেও মনে করছেন কর্মকর্তাদের অনেকে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ল শ সদস কর মকর ত গঠন র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে