হাজিরা দিতে এসে মারধরের শিকার কুমিল্লা বারের সাবেক সম্পাদক
Published: 17th, March 2025 GMT
কুমিল্লার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহাবুবুর রহমানের আদালতে অর্থ আত্মসাতের মামলায় হাজিরা দিতে এসে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের মারধরের শিকার হয়েছেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় তাকে মারধর করা হয়।
আবু তাহেরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন ওই আদালতের বিচারক।
প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মো.
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ কার্যকালে উভয়ে মিলে ৪ কোটি ২৪ লাখ ৭২০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আবু তাহের হাইকোর্ট থেকে অর্থ আত্মসাতের মামলার আগাম জামিন নেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন। দুপুরে সরাসরি তিনি এজলাসে যাচ্ছিলেন। মাস্ক পরে এজলাসে যাওয়ার পথে আইনজীবীরা তাকে দেখে ধাওয়া দেন। এ সময় তিনি দৌড়ে এজলাসে ঢুকতে যাওয়ার আগে আইনজীবীরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে তিনি এজলাসে ঢুকে পড়েন। এ সময় আইনজীবীরা তার ওপর হামলার চেষ্টা করলে বিচারক চলে আসেন। পরে আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে অবস্থান করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠান।
আবু তাহেরের জেলহাজতে পাঠানোর সময় আইনজীবীরা জড়ো হতে থাকেন। বিকেল ৩টার কিছু সময় আগে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে তাকে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়।
আইনজীবী রফিকুল ইসলাম হোসাইনী অভিযোগ করেন, আবু তাহের বারের তথা সাধারণ আইনজীবীদের টাকা মেরে খেয়েছেন। আইনজীবীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আদালতে। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
কুমিল্লা আদালতের পিপি কাইমুল হক রিংকু বলেন, বারের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আইনজীবীরা তাকে পাকড়াও করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/রুবেল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইনজ ব র এজল স
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই
ইতিহাসবিদরা ২০২৫ সালের ১৩ জুন দিনটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে রাখতে পারেন। এদিন বিশ্ব এমন এক সীমা অতিক্রম করেছে, যা থেকে তারা সহজে পিছিয়ে আসতে পারবে না। ইসরায়েল ১৩ জুন ভোরে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্তব্ধ করে দিয়েছে এবং বিশ্ববাজারকে অস্থির করে তুলেছে। এতে রাজধানী তেহরান ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কেন্দ্র তাবরিজসহ কমপক্ষে ১২টি প্রদেশে হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানের নাম ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ দিয়ে হামলার দায় স্বীকার করে। ইরানি কর্মকর্তারা এটিকে দেশটির দশকব্যাপী ছায়া সংঘাতের মধ্যে সবচেয়ে সরাসরি যুদ্ধের ঘটনা বলে বিবৃতি দিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুটি উদ্দেশ্য তুলে ধরতে চেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন– ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও তাদের প্রতিরোধ করা হবে বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল আশা করছে– নাটকীয় উত্তেজনা তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি স্বার্থের জন্য আরও সুবিধাজনক একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি গ্রহণে চাপ তৈরি করবে। যার মধ্যে রয়েছে দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত অপসারণ। ঠিক যেমন নেতানিয়াহু সামরিক শক্তির মাধ্যমে হামাসকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উভয় লক্ষ্যই শেষ পর্যন্ত কেবল একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ স্থায়ী করতে পারে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষীণ ছিল। শুক্রবারের ঘটনাগুলো বিপজ্জনকভাবে ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। আক্রমণের মাত্রা, সাহস ও প্রভাব এবং প্রায় নিশ্চিতভাবেই ইরানের প্রতিক্রিয়া একটি আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করে, যা তার যুগ যুগ ধরে নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ছে।
২০১১ সালের আরব বসন্তের পর থেকে সৌদি-ইরানের মধ্যে একটি শীতল যুদ্ধ শুরু হয়। কারণ প্রতিটি দেশ তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে চীনা মধ্যস্থতায় সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেমে যায়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্মুখ ও গোপন উভয় উপায়েই যুদ্ধের সূচনা ঘটে। এটি এমন একটি সংঘাত, যা এখন আগামী বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের গতিপথ নির্ধারণের হুমকি তৈরি করেছে। এই সংঘাত এখন আরও তীব্র হবে কিনা– তা মূলত একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তিনি হলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্বকে মৌলিকভাবে হুমকির মুখে দেখেন, তাহলে তেহরানের প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলি ভূখণ্ডের বাইরেও বিস্তৃত হতে পারে।
তেল আবিবের গোয়েন্দা বাহিনীর মূল্যায়নে দাবি করা হয়েছে, ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো উৎপাদনের পথে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে এ দাবির বিরোধিতা করেছিলেন, তবুও এটি ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। একই সময়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করা এবং একটি সংশোধিত পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সমর্থন করেছিলেন, তিনি এগুলো আশঙ্কাজনক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চেয়ে ভালো বলে তুলে ধরেছিলেন। ইরান তার নিজস্ব মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালে আলোচনা ভেস্তে যায়।
মার্কিন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর বিরোধিতা করলেও সীমিত আকারে ইসরায়েলি হামলার পক্ষে নীরব অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, এ ধরনের হামলা আলোচনার ভারসাম্য বদলে দিতে পারে এবং একটি বার্তা পাঠাতে পারে যে, ইরান শক্তিশালী অবস্থান থেকে আলোচনা করছে না, ঠিক যেমন ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের অবস্থান তৈরি করেছেন।
ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিলম্বিত করতে সফল হয়েছিল কিনা, নাকি তেহরানকে তা ত্বরান্বিত করতে প্ররোচিত করেছিল– তা এখনও অনিশ্চিত। যা স্পষ্ট তা হলো, সংঘর্ষ একটি নতুন পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে। ইরান যদি এনপিটি থেকে বেরিয়ে যায় এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তার পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া শুরু করে, তাহলে কারও কারও মতে ইসরায়েলের অভিযান বরং এর নির্মাণকে ত্বরান্বিত করার সমতুল্য হতে পারে। অথচ এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল বোমা তৈরি বন্ধ করা।
ইব্রাহিম আল-মারাশি
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মার্কোসের মধ্যপ্রাচ্য-ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক।
মোহাম্মদ ইসলামি
পর্তুগালের মিনহো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক