বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, হুতিদের ওপর মার্কিন হামলার জের
Published: 18th, March 2025 GMT
ইরান–সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জেরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। গতকাল সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। আজ মঙ্গলবার সকালেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০–এর বেশি হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলি হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে। হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও পাঠানো ড্রোন জব্দ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যয়বহুল সামরিক অভিযান চালাতে হচ্ছে। কিন্তু এত দিন মার্কিন প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা বিশেষ কাজে আসেনি। সে কারণেই ইরান–সমর্থিত এই গোষ্ঠীর ওপর নতুন করে হামলা শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। খবর ইউরো নিউজ।
এই হামলার জেরে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় গতকাল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৩ ডলার। আমেরিকায় ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম হয়েছে ৬৭ দশমিক ৯০ ডলার। আজও দাম বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উভয়ই বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম হয়েছে ৭১ দশমিক ৩২ ডলার ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম হয়েছে ৬৭ দশমিক ৮৩ ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম তেমন একটা বাড়েনি। গত জানুয়ারিতে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা আবার ৭০ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। মূলত বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি, বিশেষ করে চীনের অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘদিন দাম কম থাকার পর ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩৯ মার্কিন ডলারে ওঠে। সে বছর গড়ে তেলের দাম ১০০ ডলারের ওপর ছিল।
এর পর থেকে দাম অবশ্য কমতে শুরু করে। ২০২৩ সালে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ ৯৮ মার্কিন ডলারে উঠেছিল। গড় দাম ছিল ৮৩ ডলার। তেলের দাম বাড়ানোর জন্য জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর প্রভাবশালী সংগঠন ওপেকের পক্ষ নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও দাম তেমন একটা বাড়েনি।
২০২৪ সালেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের ঘরে ছিল।
চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্যানুসারে, চলতি ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি থাকবে। দৈনিক চাহিদার চেয়ে ছয় লাখ ব্যারেল তেল বেশি সরবরাহ থাকবে বলে তাদের পূর্বাভাস। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোও অবশ্য আগে সেরকম আভাস দিয়েছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে চীনের চাহিদা কম থাকা—এ দুই কারণে সরবরাহ বেড়ে যাবে। ফলে চলতি বছরে তেলের দাম তেমন একটা বাড়বে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর শ ধ ত ১ দশম ক সরবর হ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।