মহাসড়কে প্রবাসীদের গাড়ি নিশানা করে ডাকাতি
Published: 19th, March 2025 GMT
মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে প্রবাসীদের নিশানা করে। আর সবচেয়ে বেশি ঘটছে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে। এ ছাড়া যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, সম্প্রতি একাধিক ডাকাতির ঘটনার পর মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ১ হাজার ৪৪৩ ডাকাতের একটি তালিকা করেছে পুলিশ। সেই তালিকা ধরে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে।
মহাসড়কে ডাকাতি রোধে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত টহলের বাইরে ৭০০ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রবাসীদের গাড়ি ‘টার্গেট’ করে মহাসড়কগুলোতে যে ডাকাতির ঘটনাগুলো ঘটছে, তা বন্ধ করতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি প্রবাসী ‘হেল্প ডেস্ক’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তারা বলছে, বিমানবন্দর থেকে প্রবাসীরা যেসব গাড়ি ভাড়া করে বাড়িতে যাবেন, সেসব গাড়ির ভিডিও করে রাখা, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চালকের লাইসেন্সের কপি ও মুঠোফোন নম্বর রাখা হবে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত ওই গাড়ি নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।
বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন মহাসড়কে প্রবাসী যাত্রী বহনকারী একটি কারের চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর আবদুল্লাহপুর, হাউস বিল্ডিং, স্টেশন রোডে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তবে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটে কুমিল্লা এলাকায়।
ওই চালক বলেন, সম্প্রতি প্রবাসী যাত্রীসহ তাঁর গাড়ি ভোর চারটার দিকে সিলেটের শেরপুরে ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাত দলের সদস্যরা লাঠি হাতে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করে। পরে তিনি দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে রক্ষা পান। ডাকাতের লাঠির আঘাতে গাড়ির একটি কাচ ভেঙে যায়। এসব ডাকাত চক্রের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের যোগসাজশ রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য থেকে দেশে সব ধরনের ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৪টি। আগের মাস জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৭১। আর গত বছরের প্রথম দুই মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনা ছিল ৬২টি।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের একই এলাকায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ একজন মালয়েশিয়াপ্রবাসী ও কুয়েতপ্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতি হয়। এ দুটি ডাকাতির ঘটনায় গত শনিবার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু এলাকা যাত্রীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রবাসীরা বাড়ি ফেরার পথে বেশি ডাকাতির কবলে পড়ছেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে এসব প্রবাসীর গাড়ি ‘টার্গেট’ করে মহাসড়কে ডাকাতি করা হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার ২০-২৫ জনের ডাকাত দল তিনটি গ্রুপে মহাসড়কে ডাকাতি করছে। তারা বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে প্রবাসীদের গাড়ি সম্পর্কে তথ্য পায়। পরে মেঘনা টোল প্লাজা থেকে ডাকাতেরা প্রবাসীর গাড়ির পিছু নেয়। মহাসড়কের নির্জন স্থানে পিকআপ দিয়ে গাড়িটিকে আটকে ফেলে। আবার রাস্তায় রড ও টায়ার ফেলে এসব গাড়িতে ডাকাতি করা হয়। ছয় থেকে সাতজনের একটি ডাকাত দল ধারালো অস্ত্রের মুখে প্রবাসীদের জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়।
প্রবাসীদের গাড়ি ‘টার্গেট’ করে শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নয়, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-মাদারীপুর মহাসড়কেও এমন ঘটনা ঘটছে। প্রবাসীদের গাড়িতে ডাকাতির পাশাপাশি এসব মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানেও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে।
বাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা কামরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস যানজটে আটকে পড়লেই এখন ডাকাতির আতঙ্কে থাকি। ঈদে ডাকাতির ঘটনা বেশি হয়।’ ডাকাতির ভয়ে সঙ্গে টাকা ও ব্যাংকের কার্ড রাখেন না তিনি। তাঁর অভিযোগ, মহাসড়কগুলোতে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের টহল ও তল্লাশি তেমন দেখা যায় না।
ডাকাতিতে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের ভাগ–বাঁটোয়ারার সম্পর্ক রয়েছে। যত দিন এই ভাগ–বাঁটোয়ারার সম্পর্ক থাকবে, তত দিন মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধ হবে না।তৌহিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মহাসড়কগুলোতে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। সম্প্রতি মহাসড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১ হাজার ৪৪৩ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সারা দেশে ২০০৫ সাল থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত যতগুলো ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে, সেসব মামলায় যত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, তার ভিত্তিতে এই তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছে।
হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি অপারেশন্স) মো.
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশ থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে যখন প্রবাসীরা গাড়ি ভাড়া করেন, সেখান থেকে গাড়ির তথ্য চলে যায় ডাকাত চক্রের কাছে। আবার মহাসড়কের পাশের খাবার দোকানেও ডাকাত চক্রের সদস্যরা থাকে। এই দুই জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে প্রবাসীদের গাড়ি ডাকাতি করা হয়। কিছু কিছু চালকের সঙ্গেও ডাকাত চক্রের যোগাযোগ রয়েছে।
পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতিমহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাসে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ভুয়া র্যাব ও ডিবি পরিচয়ে তৈরি পোশাক, সয়াবিন তেল, রডসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আর যাত্রী সেজে বাসে উঠে বিভিন্ন মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসেও ডাকাতি করা হয়।
৮ মার্চ নবীনগর–চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার কবিরপুর এলাকায় একদল ডাকাত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি রডভর্তি ট্রাক ছিনতাই করে। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর গত শনিবার সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনোয়ার হোসেন ও নুরে আলম নামের দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে রডভর্তি ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়।
পাবনার সাঁথিয়ায় রাস্তায় ১ মার্চ কাঠের গুঁড়ি ফেলে ট্রাক ও মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা একটি রডবোঝাই ট্রাক ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় ডাকাতির কবলে পড়ে। পরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নেত্রকোনায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত আন্তজেলা ডাকাত দলের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলসের’ একটি বাসে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডাকাতি হয়। ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি করে ডাকাত দল। এ ঘটনা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। পরে ডাকাত দলের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, মহাসড়কে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাকে ডাকাতিতে এলাকাভিত্তিক অনেকগুলো চক্র জড়িত। কিছু চক্র শুধু রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ডাকাতি করে। এসব চক্র গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয়। তারা ট্রাক আটকে পোশাক কারখানার মালিকদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা হয় না, টাকার বিনিময়ে মীমাংসা হয়।
অস্ট্রেলিয়া, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি করেন চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী। তাঁর কারখানা গাজীপুরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পোশাকভর্তি কাভার্ড ভ্যানে একবার ডাকাতি হয়েছিল। ট্রাক মালিক সমিতির এক নেতার মাধ্যমে টাকা দিয়ে পোশাক ফেরত পান।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, মামলা করেও অনেক সময় পোশাক উদ্ধার হয় না। তাই টাকা দিয়ে মীমাংসা করেন ব্যবসায়ীরা। পোশাক উদ্ধার করা না গেলে ‘শিপমেন্ট’ বাতিল হয়ে যায়। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্কও নষ্ট হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে ডাকাতিতে জড়িতদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের ভাগবাটোয়ারার সম্পর্ক রয়েছে। যতদিন এই ভাগবাটোয়ারার সম্পর্ক থাকবে, ততদিন মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধ হবে না। যেসব স্থানে ডাকাতি ও ‘টাগেট’ করে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটে, সেগুলো চিহ্নিত করে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনাসহ প্রযুক্তিগত নতুন নতুন কৌশল নিতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব স দ র গ ড় গ র প ত র কর ড ক ত র ঘটন প রথম আল ক প রব স র ড ক ত দল ব যবস য় এল ক য় র একট হ ইওয় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।