ফতুল্লায় পিতা হাশিম মিয়ার ওপর প্রতিশোধ নিতে তার ৭ বছরের শিশু পুত্র মুস্তাকিনকে অপহরন করে হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  

গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- ফতুল্লা থানার লামাপাড়া দরগাহ বাড়ী মসজিদ সংলগ্ন সালাম মিয়ার ভাড়াটিয়া ওবায়েদউল্লাহ বাবুর পুত্র তানজীল (২৪) ও একই বাড়ীর ভাড়াটিয়া  মৃত ফরজুল ইসলামের পুত্র নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলম (২০)।

বুধবার (১৯ মার্চ) জেলা ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জানাগেছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ও নিহত শিশুর পরিবার পাশাপাশি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। একটি মোবাইল নিয়ে তানজিলের সাথে নিহত শিশু মুস্তাকিনের বাবা হাশিম মিয়ার সাথে ঝগড়া হয়। এতে করে তানজিল তার একই বাসার ভাড়াটিয়া সহযোগী নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলমকে নিয়ে শিশুটিকে অপহরন সহ হত্যা করার পরিকল্পনা করে।

প্রথমে তারা ফতুল্লা ডিআইটি মাঠ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার কিনে। তারপর পরিকল্পনানুযায়ী ৫ জানুয়ারী সন্ধ্যার দিকে প্রথমে শিশুটির হাতে ২০ টাকা দেয় তানজিল। পরে পায়ে হাঁটিয়ে রাস্তায় এনে দুটি চিপস কিনে হাতে দিয়ে অটোরিক্সায় করে ফতুল্লা গুদারাঘাট দিয়ে কেরানীগঞ্জের কাওটাইল এলাকায় যায়।

সেখানে  নিয়ে যাওয়ার পর বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের পেছনে ঝোপের ভিতরে নিয়ে গিয়ে শিশুটির মুখে কস্টটেপ পেচিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেয় নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহালম। এ সময় তানজীল তার সাথে থাকা সুইচ গিয়ার দিয়ে শিশুটিকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে লামাপাড়াস্থ বাসায় চলে আসে।

এদিকে, শিশুটিকে না পেয়ে তার পরিবার যখন সন্ধান চেয়ে মাইকিং করেছিলো ঘাতকরাও সে সময় মাইকিং করে। দুতিন দিন পর তারা তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিং চলে যায়। ঘটনার ১৩ দিন পর ১৮ জানুয়ারী দুপুরে লোক মারফত জানতে পেরে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। কোন পরিচয় না পাওয়ায় লাশটি অজ্ঞাত নামা হিসেবে দাফন করা হয়।

পরবর্তীতে ২০ জানুয়ারী কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। অপরদিকে শিশুটির বাবা ৬ জানুয়ারী ফতুল্লা মডেল থানায় একটি নিখোঁজ সাধারন ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে নিখোঁজ শিশুটির সন্ধান না পেয়ে শিশুটির বাবা ১৪ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডের ৭২ দিন পর ১৮ মার্চ সকাল নয়টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার নান্দাইল উপজেলার সামনে থেকে প্রথমে নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলমকে পরে দুপুর বারোটার দিকে একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার কাচিজোড়া থেকে তানজিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের দেখানো মতে পুলিশ রাত ৮ টার দিকে ফতুল্লা থানার লামাপাড়াস্থ তানজিদের বাসা থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ারটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) "ক" সার্কেল হাসিনুজ্জামান জানান, শিশুটির বাবার উপর প্রতিশোধ নিতেই ফতুল্লা থেকে শিশুটিকে অপহরন করে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ থানার কাওটাইল এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানকার পুলিশ নিহত শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পরিচয় না পেয়ে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করে এবং পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা হয়।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যমতে কেরানীগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করা হলে শিশুটির পরিবার থানায় গিয়ে পুলিশের নিকট রক্ষিত নিহত শিশুর জামা কাপড় থেকে পরিচয় সনাক্ত করা হয়।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

রাতে বাড়িতে পুলিশের অভিযান, ভোরে ধানখেতে পাওয়া গেল রক্তাক্ত মরদেহ

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে জমিজমার বিরোধে থানায় করা এক মামলার আসামিকে ধরতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে আজ শুক্রবার ভোরে বাড়ির পাশে একটি ধানখেত থেকে তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

মরদেহ উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবু সাদাদ সায়েম (৫০)। তিনি উপজেলার কৈচাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। এলাকায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাতেন তিনি।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত সাদাদের বাবা মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে দুই পরিবারের মধ্যে গত শুক্রবার মারামারির ঘটনা ঘটলে প্রতিপক্ষের লোকজন হালুয়াঘাট থানায় আটজনের নামে একটি মামলা করেন। মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন সাদাদ। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হালুয়াঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সাদাদ পালিয়ে যান। তাঁকে না পেয়ে ফিরে আসে পুলিশ।

এদিকে পুলিশ চলে যাওয়ার পর সাদাদ বাড়িতে ফিরে না আসায় স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে আজ ভোরে বাড়ির পাশের একটি ধানখেতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

সাদাদের বাবা মোসলেম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে তাঁর জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তাঁরা থানায় মামলা করেন। আগামী রোববার দুই ছেলের জামিন নেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই তারা (প্রতিপক্ষ) তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সাদাদের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতায় বাদীপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করে ধানখেতে ফেলে রেখে যায়। অথচ কোনো আসামি ধরবে না বলে পুলিশ আমাদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিল। আমরা আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’

এ ঘটনার পর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হালুয়াঘাট থানার এসআই মানিক মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘গতকাল রাতে মামলার আসামিকে ধরতে গেলে আমরা পাইনি। ওই সময় হয়তো আমাদের উপস্থিতি দেখে পালিয়েছিল। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই সত্য নয়।’

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত সাদাদের শরীরে জখম, ছিলে যাওয়া ও কামড়ের মতো আঘাত আছে। তবে গুরুতর কোনো আঘাত তাঁরা দেখতে পাননি। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তিনি বলেন, পুলিশ তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আসামি ধরতে যায়। ঘরে না পাওয়ায় পুলিশ চলে আসে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তাঁরা প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ রেহানার বিরুদ্ধে করা প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় রাজউকের সদস্য খুরশীদ গ্রেপ্তার
  • মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
  • ছয় বছর ধরে নিখোঁজের পর ফেনীতে মৃত অবস্থায় উদ্ধার, সেই আহাদ আসলে কে
  • রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার
  • দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
  • জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে: মামুনুল হক
  • এনসিএল: তিন সেঞ্চুরি ও মিরপুরে উইকেটের মিছিল
  • রংপুরকে পেয়েই আবার নাঈমের সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি মাহফিজুল ও সাদিকুরেরও
  • রাতে বাড়িতে পুলিশের অভিযান, ভোরে ধানখেতে পাওয়া গেল রক্তাক্ত মরদেহ
  • সাতক্ষীরায় ৮ দিনেও খোঁজ মেলেনি অপহৃত কিশোরীর