৪৫ হাজার রোজাদারকে ইফতার করিয়েছে চবি শিবির
Published: 22nd, March 2025 GMT
পবিত্র রমজানের প্রথম ২০ দিনে প্রায় ৪৫ হাজার রোজাদারকে ইফতার করিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবির। এতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) শাখা শিবিরের দাওয়াতি সংগঠন ‘মিনার’ এর ব্যানারে ২০ দিনব্যাপী ‘গণ-ইফতার ও দারসুল কোরআন’ আয়োজনটি শেষ হয়।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ছাত্রীদের জন্য ছাত্রী হলগুলোতে প্রতিদিন এ আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এ গণ-ইফতারে অংশ নেন। ইফতার ব্যবস্থাপনায় অন্তত ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিত কাজ করেছেন। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
আরো পড়ুন:
গাজায় ভয়াবহ হামলার প্রতিবাদে চবিতে বিক্ষোভ
চবি সমাবর্তনে থাকতে পারবে মূল সনদ গ্রহণকারীরাও
গণ-ইফতারের বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ড.
চবি শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাবেক নেতাদের সহযোগিতায় আমরা প্রাথমিকভাবে আয়োজন শুরু করি। পরে আমাদের আয়োজন দেখে অনেকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।”
তিনি বলেন, “গণইফতার কর্মসূচিতে কয়েকটি উপ-কমিটি কাজ করেছে। কেউ দারসুল কুরআনের দাওয়াত দিয়েছেন, কেউ খাবার প্রস্তুত করেছেন, আবার কেউ সেগুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন। ছোট ছোট ছেলেরাও আমাদের সহযোগিতা করেছে।”
শাখা শিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, “মাহে রমজান উপলক্ষে আমাদের ২০ দিনব্যাপী দারসুল কুরআন ও গণ-ইফতার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, আমাদের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক।”
তিনি বলেন, “প্রতিদিন দারসুল কুরআনের মাধ্যমে আমরা কুরআনের গভীর শিক্ষা ও তাৎপর্য শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি। যাতে তারা নিজেদের জীবনকে কুরআনের আলোকে পরিচালিত করতে পারে। পাশাপাশি গণইফতার আয়োজনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে চেয়েছি।”
গণইফতার কর্মসূচি শেষ হলেও আর্থিক সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করলে তাদের ইফতারের ব্যবস্থা করা হলে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রআন র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’