Samakal:
2025-08-01@05:02:10 GMT

কিষানির ‘সূর্যমুখী স্বপ্ন’

Published: 22nd, March 2025 GMT

কিষানির ‘সূর্যমুখী স্বপ্ন’

রাউজান উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। কৃষকের আগ্রহ আর কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বছর বছর বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ। এবার বাম্পার ফলন পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। উপজেলার অনেক মাঠ যেন হলুদগালিচা, সেখানে মৌমাছির গুঞ্জরণে মোহিত মানুষ। সূর্যমুখী ক্ষেত দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন, তারা ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। 
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাউজানে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় ৩০ টন তেল উৎপাদন হবে এবার। বাজারে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হয় ৪৫০ টাকায়। সে হিসাবে এবার উপজেলায় এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার তেল উৎপাদিত হবে। এতে কয়েক হাজার পরিবারে সচ্ছলতার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে।
‘সূর্যমুখী গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত পৌরসভার কাঁশখালী কূলে কথা হয় কৃষক মো.

হোসেনের সঙ্গে। তিনি সমকালকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিকভাবে সার, ওষুধ ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছি। বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা থাকায় লাভ নিয়ে আমি চিন্তিত নই।’
চিকদাইর ইউনিয়নের দুই কিষানি ‘পার্টনার প্রকল্পের’ আওতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কিষানি মরিয়ম বেগম ও রশেদা বেগম বলেন, ‘৫০০ কেজি তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যৌথভাবে সূর্যমুখী চাষ করেছি। সূর্যমুখী ক্ষেতের অপরূপ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থী। তারা ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন। দর্শনার্থীদের ফসল নষ্ট না করার অনুরোধ জানাতে মাঠে থাকতে হয় আমাদের।’ হলদিয়া ইউনিয়নের কৃষক আলী মজুমদার বলেন, ‘দিনদিন বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়ছে। এই চাষাবাদে খরচ কম, লাভ বেশি।  কৃষি অফিস সহযোগিতা ও প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করছে।’
উপজেলার চিকদাইর, ডাবুয়া, সদর, বাগোয়ান ইউনিয়নের সূর্যমুখী ক্ষেতে কৃষকরা এখন পরিচর্যায় ব্যস্ত। ভালো ফলন ঘরে তোলার আশায় ক্ষেতের সর্বোচ্চ পরিচর্যা করছেন তারা।  হলুদ রঙের ফুলের ঘ্রাণে ম-ম করছে সূর্যমুখী ক্ষেত। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, ‘উপজেলায় এবার প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। প্রায় ৩০ টন তেল পাওয়া আশা করছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৬৪০ জন কৃষকের মধ্যে সরকারি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কমবেশি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। বাজারে সূর্যমুখী তেলের দামও ভালো। প্রতি লিটার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়।  তেল উৎপাদনের পাশাপাশি খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়, যা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় কৃষকের।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ল উৎপ দ করছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ