হাইওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ডিবির ৫ সদস্য
Published: 24th, March 2025 GMT
বগুড়ায় দুই তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে রাজশাহী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে হাইওয়ে পুলিশ। গত রোববার রাত ৩টার দিকে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার পুলিশ বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের বীরগ্রাম এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। সেই সঙ্গে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালককেও গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মুক্তিপণের নগদ দুই লাখ টাকা, ডিবির পোশাক, পরিচয়পত্র ও একটি ওয়াকিটকি জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার এসআই শাহিন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল মাহবুব আলম, কনস্টেবল বাশির আলী এবং তাদের মাইক্রোবাসের চালক মেহেদী হাসান।
পুলিশ সূত্র জানায়, আরএমপির গোয়েন্দা শাখার পাঁচ সদস্য রোববার রাতে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আসেন। তারা জুয়া খেলার অভিযোগে চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দীঘরকান্দি গ্রামের সেলিম হোসেনের ছেলে রাব্বী হাসান ও একই এলাকার শেরবান খানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। শেরপুর উপজেলার মির্জাপুরে গাড়ি থামিয়ে তাদের কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দরকষাকষি করে দুই তরুণের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন।
বগুড়া জেলা পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে শেরপুর ও শাজাহানপুর থানা এলাকায় ডিবির মাইক্রোবাসটি থামানোর চেষ্টা করে। না পেরে তারা কুন্দারহাট হাইওয়ে থানাকে বিষয়টি জানায়। পরে হাইওয়ে পুলিশের এসআই মাসুদ রানার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে শাজাহানপুর থানার বীরগ্রাম এলাকায় গাড়িটি আটক করা হয়। এ সময় ডিবির পাঁচ সদস্য তাদের পরিচয় দিয়ে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেন। হাইওয়ে পুলিশ আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, ওই পাঁচজন কাউকে না জানিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে বগুড়ায় গিয়েছিলেন। এর পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ডিবির পাঁচ সদস্যকে ওই রাতেই কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা হয়ে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সোমবার তাদের নেওয়া হয় ধুনট থানায়। সেখানে অপহরণের শিকার রাব্বি হাসানের বাবা সেলিম হোসেন তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা করেন। ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম জানান, আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
আটক পাঁচ ডিবি সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করে আরএমপি মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন জানান, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ গ র প ত র কর চ সদস য হ ইওয়
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’
পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।
এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’