বেড়েছে দারিদ্র্যের হার কমেছে খাদ্য নিরাপত্তা
Published: 25th, March 2025 GMT
দেশে দারিদ্র্যের হার এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত এক ধারণা জরিপ বা পারসেপশন সার্ভেতে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার বিআইডিএসের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিআইডিএসের ধারণা জরিপে এ হার হয়েছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। যদিও বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ দেশব্যাপী অনেক বড় নমুনার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। আর বিআইডিএস পাঁচটি জেলার ওপর ধারণা জরিপ করেছে। বিআইডিএস বলেছে, তাদের জরিপটি খানা আয় ও ব্যয় জরিপের সঙ্গে তুলনা করার জন্য নয়। তবে ধারণা জরিপে এটি ফুটে উঠেছে যে, দুই বছর আগের চেয়ে দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় জরিপটি পরিচালিত হয়। ঢাকা, বান্দরবান, খুলনা, রংপুর ও সিলেট জেলা জরিপের জন্য নির্ধারণ করা হয়। মোট ৩ হাজার ১৫০টি খানা বা পরিবারের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে শহরের খানা ১ হাজার ৯৯০টি এবং গ্রামীণ খানা ১ হাজার ১১৬টি। সবচেয়ে বেশি ৭৫০টি খানা ঢাকার।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড.
বিবিএসের জরিপে ২০২২ সালে গ্রামে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিবিএসের জরিপে শহরে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে এসেছে ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
বিবিএসের জরিপে ঢাকা জেলায় ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে ২০২৪ সালে যা বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। খুলনা জেলায় দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে বিবিএসের জরিপে ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৪ সালে বিআইডিএসের জরিপে যা দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০২২ সালে বিবিএসের জরিপে সিলেট শহরে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬ শতাংশ। বিআইডিএসের ধারণা জরিপে যা ২০২৪ সালে হয়েছে ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। রংপুর জেলায় বিবিএসের ২০২২ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ শতাংশ। ২০২৪ সালে বিআইডিএসের জরিপে যা হয়েছে ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বান্দরবান জেলায় ২০২২ সালে বিবিএসের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে যা হয়েছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ২০২২ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগত ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ড. এ কে এনামুল হক বলেন, বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে বিআইডিএসের জরিপটি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের নীতিনির্ধারণে এসব তথ্য ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন– রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, দেশে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক কারণ ইত্যাদি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিসেমানি পারসেসমেন্ট বলেন, এটি বিবিএসের সঙ্গে তুলনা না করলেও বর্তমান পরিস্থিতি বোঝাতে বেশ কাজে দেবে। এর ফলে সরকারের যে কোনো নীতিনির্ধারণ অনেক বেশি সঠিক হবে।
জানতে চাইলে এ ধারণা প্রতিবেদনের লেখক এবং বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনূস সমকালকে বলেন, তাদের জরিপটা খানা আয় ও ব্যয়ের মতো নয়। তারা পাঁচটি জেলায় একটি ধারণা জরিপ করেছেন। তাতে দেখা গেছে, সার্বিকভাবে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মূলত ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য কতটা বাড়ল কিংবা কমলো, তা পর্যালোচনা করেছেন তারা। এতে দেখা গেছে, আগের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যের হার বেশি। বিশেষ করে রাজধানীতে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর চাপের অভিঘাতকে দায়ী করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২০২২ স ল ২০২৪ স ল পর চ ল দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি তেলের দাম কমল লিটারে ১ টাকা
দেশের বাজারে এবার কমল জ্বালানি তেলের দাম। মে মাসে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলে দাম কমেছে ১ টাকা। আজ বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেট্রলের দাম প্রতি লিটার ১২২ টাকা থেকে কমিয়ে ১২১ টাকা ও অকটেনের দাম ১২৬ টাকা থেকে কমিয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। নতুন দাম ১ মে থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে মার্চ ও এপ্রিল মাসে জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়। আর ফেব্রুয়ারিতে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে বেড়েছিল ১ টাকা।
২০২৪ সালের মার্চ থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু করে সরকার। সে হিসেবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়।
জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়।
জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের দাম বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারণ করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।