সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির (পূর্ব নাম আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড) ছয় বছরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বেশ কয়েকটি শর্ত নির্ধারণ করে এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ফারইস্ট নিটিংয়ের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়

সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো.

শহীদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আজিম এবং মো. আরিফুল ইসলাম।

বিএসইসির জারি করা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির গত ছয় বছরে এর বাস্তব চিত্র পরীক্ষা করা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন কোম্পানির ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আজিম এবং মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কমিটিতে রাখ হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে কমিশনে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা
২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষকদের দেওয়া আপত্তি বা বিরূপ মতামত বিশ্লেষণ করে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানির চলমান উদ্বেগ সম্পর্কিত বাস্তব অনিশ্চয়তাগুলো নির্ধারণ করবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একত্রীকরণ বা উল্লেখযোগ্য অন্যান্য লেনদেন থেকে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা কোনো অযৌক্তিক সুবিধা নিয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করা। সেই সাথে ছয় বছরে কোম্পানির বাস্তব চিত্র বিষয়গুলো পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্ত করে দেখবে গঠিত কমিটি।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.১৯) টাকা। আগের হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৪৫) টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১০.০৭ টাকা।

সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর,২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৩০ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০১ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.২৯ টাকা বা ২৯০০ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে, অর্ধবার্ষিক বা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৪৪ টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০৩ টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ০.৪১ টাকা বা ১৩৬৬.৬৭ শতাংশ বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১০.৪১ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি ঋণে জর্জরিত একটি প্রতিষ্ঠান। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির মোট ২৭৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে, যা কোম্পানির পরিশোধিত মুলধনের ৯০ শতাংশের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি ১১ লাখ টাকা ও স্বল্প মেয়াদি ঋণ ২২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ টাকা। দীর্ঘ পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির লেনদেন হচ্ছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি নতুন নামে লেনদেন শুরু করে। এর আগে কোম্পানির নাম ছিল আরএন স্পিনিং মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৩০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৯টি। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩০.৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩.৯৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র ৩০ জ ন বছর র একই সময় তদন ত কর তদন ত ক ল ইসল ম ব এসইস ল নদ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা