গুজব সংক্রমণ ব্যাধির মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর সেই গুজবের ভিত্তি যদি রাজনীতি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। মুহূর্তে জন থেকে জনে, এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি মহল গুজব ছড়িয়ে আসছে। যাদের উদ্দেশ্য যেকোনো মূল্যে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা।
সাম্প্রতিক কালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন নেতার বার্তাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। পক্ষে–বিপক্ষে নানা রকম প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমনকি এই প্রচারণা থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীও রেহাই পায়নি। রাজনৈতিক দলের নেতা বা সরকারের কোনো পদাধিকারীর আগের কোনো বক্তব্যকে এখনকার বক্তব্য বলে চালানো হচ্ছে। কেউ কেউ গুজবের আগুনে বেগুনপোড়া দিয়ে আত্মসুখও অনুভব করছেন।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবে সবাই আশা করেছিলেন, দেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা চলছিল তার অবসান হবে, অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা সেটা বলছে না।
আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, যতই দিন যাচ্ছে, আন্দোলনকারী দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে অনৈক্য–বিভেদ বাড়ছে। এই সুযোগে দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি চক্র অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছ। আরেকটি চক্র বিদেশে বসে যাকেই অপছন্দ হচ্ছে, তাকে হুমকি দিচ্ছে, বাড়িঘর ও অফিস হামলা চালানোর জন্য উসকানি দিচ্ছে। অতীতে তাদের উসকানির কারণে কিছু স্থানে অঘটন ঘটলেও এখন আর জনগণ তাদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না।
৫ আগস্টের আগের অরাজক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে যখন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে, তখন কোনো ঘটনা, বিবৃতি কিংবা গুজবকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা কারোরই কাম্য নয়। অর্থনৈতিক উন্নতি ও সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির জন্য দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বিশেষ করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী কোনো পক্ষের এমন কিছু করা বা বলা উচিত হবে না, যাতে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সে রকম কিছু হলে সুযোগসন্ধানীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পাবে, যা কখনোই করতে দেওয়া সমীচীন হবে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, গণ–অভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণের জন্য জাতীয় ঐক্য আরও মজবুত করতে হবে।
ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কারও এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন যেকোনো দল করতে পারে। অতীত অপরাধের বিচারও দাবি করতে পারে। কিন্তু ‘আমরা দমন করব’, ‘প্রতিহত করব’—এ ধরনের স্লোগান স্বৈরাচারী আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
গুজব তারাই সৃষ্টি করে, যাদের ভালো কিছু করার সামর্থ্য নেই। সমাজের প্রতিটি দায়িত্বশীল নাগরিককে চলমান সংকট সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আন্দোলনকারী সব পক্ষের প্রতি আহ্বান থাকবে, এসব উসকানি ও গুজবে কান দেবেন না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ: এবার কাদের বিপক্ষে, কবে খেলবে বাংলাদেশ?
আইসিসির বৈশ্বিক টেস্ট লিগ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। তিনটি সফল চক্র শেষে চতুর্থ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র, ২০২৫-২৭ মাঠে গড়ানোর অপেক্ষা। মঙ্গলবার (১৭ জুন) গলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্ট দিয়ে শুরু হবে চতুর্থ চক্রের খেলা।
প্রতিটি দল দুই বছরের মধ্যে ছয়টি সিরিজ খেলবে। যার তিনটি দেশের মাটিতে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। প্রতিটি সিরিজ হবে কমপক্ষে দুই টেস্টের। সর্বোচ্চ পাঁচটি টেস্ট থাকতে পারবে এক সিরিজে। এই সময়ে সিরিজ হবে মোট ২৭টি, যেখানে টেস্টের সংখ্যা ৭১টি। ২০২৭ সালের জুনে লিগ টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে হবে ফাইনাল। শেষ তিন আসরের মতো ইংল্যান্ডেই বসবে সাতাশের ফাইনাল। সম্ভাব্য ভেন্যু লর্ডস।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে বাংলাদেশ সাতটি ম্যাচ খেলেছিল। জিততে পারেনি কোনো ম্যাচ। ড্র করেছিল একটি। হেরেছিল ছয়টি। পরের চক্রে ১২ ম্যাচে মাত্র ১ জয়, ১০টাতেই হার।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ্যান
বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দল ঘোষণা
সর্বশেষ টেস্ট চক্রে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ দেশের বাইরে, একটি দেশের মাটিতে জিতেছে। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচে চারটিতে জিতেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল। এছাড়া নিউ জিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিদেশে হারিয়েছিল।
এবারের চক্রে বাংলাদেশ ১২টি ম্যাচ খেলবে। মোট ছয়টি সিরিজ। তিনটি দেশের বাইরে, তিনটি দেশের মাটিতে। দেশের বাইরে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার পর কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কেননা দুটি সফরই শেষবারের দুই ফাইনালিস্টদের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে দেশের মাটিতে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই টেস্টের পর বাংলাদেশকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরের ম্যাচের জন্য ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পাকিস্তান ২০২৬ সালের মার্চে বাংলাদেশ সফর করবে। ২টি টেস্ট বাদেও ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে। ওই বছরের অক্টোবরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আতিথেয়তা দেবে। নভেম্বর বাংলাদেশ যাবে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
এরপর ২০২৭ সালে ইংল্যান্ড দুই টেস্টের জন্য আসবে ফেব্রুয়ারিতে। মার্চে বাংলাদেশ যাবে অস্ট্রেলিয়া সফরে। ২০০৩ সালের পর ২০২৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। আর এই সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্র শেষ হবে।
নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা গত বছর (চক্রে) ৭ নম্বরে শেষ করেছি। এই বছর তো অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে যেন ৪-৫-৬ নম্বরের মধ্যে আসতে পারি। তাহলে খুব ভালো হয়।”
“গত বছর (চক্রে) জয়ের হার সম্ভবত ৪৫ শতাংশ (আসলে ৪৫ পয়েন্ট ও ৩১.২৫ শতাংশ) ছিল। এখান থেকে যদি বাড়াতে পারি—৫০-৫৫ বা ৬০ শতাংশ হলে, একজন অধিনায়ক হিসেবে আমার মনে হয়, ভালো একটা ফল হবে আমাদের।”– যোগ করেন শান্ত।
ঢাকা/ইয়াসিন