‘বাসায় ডেকে নগ্ন ছবি তুলে ব্লাকমেইল করতেন সাথি’
Published: 26th, March 2025 GMT
“মাহমুদা ইসলাম সাথি (১৯) সোশ্যাল মিডিয়ায় মিষ্টি কণ্ঠে কথা বলে ছেলেদের সাথে সখ্যতা গড়তেন। এরপর বাসায় ডেকে নিয়ে ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করতেন। তার এই চক্রের সবাই শহরে একটি ভাড়া বাসাকে নিরাপদ ভেবে চালাতেন এই অপকর্ম।”
বুধবার (২৬ মার্চ) চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানান চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ মজিবুর রহমান। যে ঘটনা উন্মোচন হয়েছে একটি মামলার সূত্র ধরে।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী মহসীন মাতব্বর বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়াতেই গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সাথি নামের মেয়েটির সাথে আমার পরিচয়। এরপর সে আমাকে ১৪ ডিসেম্বর তার ভাড়া বাসায় একটি প্রলোভন দিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। পরে আমি তার সাথে গেলে সেখানে তার সহযোগী কয়েকজন যুবককে দিয়ে আমাকে রুমের মধ্যে জোরপূর্বক আটকে রেখে উলঙ্গ করে ছবি ও ভিডিও করে। পরে তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমি আমার স্ত্রীর সহায়তায় তিন লাখ টাকা সেসময় তাদেরকে দিয়ে ছাড়া পাই।”
ভুক্তভোগী মহসীন আরও বলেন, “এরপর রাসেল নামে সাথির আরেক সহযোগী আমাকে ফোন করে আরো টাকা দাবি করে। অন্যথায় সে ওই ভিডিও এবং ছবি আমার আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠাবে বলে হুমকি দেয়। এর কয়েকদিন পর কোড়ালিয়ার আমার পাশের বাড়ির হাবিব গাজী আমার বাড়িতে আসে এবং আমাকে সেই ধারণকৃত নগ্ন ভিডিও দেখিয়ে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় ভিডিও এলাকার সবার কাছে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। আমি তাকে আমার অপরাগতা জানিয়ে পূর্বে এই সংক্রান্তে তিন লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানাই। তখন সে আমাকে ১৫ দিন সময় দিয়ে বলে, টাকা না দিলে সে এলাকায় এটা ছড়িয়ে দেবে এবং ক্ষতি করবে। পরে আমি বাধ্য হয়েই চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করি। যার মামলা নং ৮৩/২৫০ তারিখ, ২৫/০৩/২০২৫।”
এদিকে সাথির বিষয়ে খোঁজ খবর নিলে জানা যায়, তিনি অনলাইনে ধনাঢ্য ছেলেদের টার্গেট করতেন। নানা সময়ে ছেলেদের কাছ থেকে নানা প্রলোভনে টাকা ধার নিতেন। এরপর সেসব ছেলেদের তার বিষ্ণুদীর মাদ্রাসা রোডের আক্তার হোসেন খানের মালিকানাধীন ‘তাজমহল মনোয়ারা ম্যানশন’ নামক বাসার নিচতলায় নিয়ে ফুর্তি করতেন। সহজ সরল ছেলে পেলে তার সহযোগীদের দিয়ে ভিডিও ধারণ করে মোবাইলসহ টাকা পয়সা আত্মসাৎসহ ব্লাকমেইল করতেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ মজিবুর রহমান বলেন, “সাথি নামের মেয়েটির মূল বাড়ি হলো মতলব দক্ষিণের নারায়ণপুরে। সে ওখানকার আয়াত আলীর মেয়ে। এখানে সে অনলাইনে কাপড় বিক্রির ব্যবসায় জড়িত পরিচয়ের আড়ালে নিজের সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে এসব অপকর্ম করে আসছিল।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা সাথিসহ তার দুই ছেলে সহযোগী মামুন ও শাহাদাতকে সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে শহরের আদর্শ মুসলিম পাড়া ও পুরান বাজার পালপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদেরও দ্রুতই গ্রেপ্তারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তাদের এই অপরাধী চক্র অনেক বড় এবং এদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। আসামিদের মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।”
ঢাকা/অমরেশ/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করত ন সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
ঈদে ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে এসে ফুফাত ভাইয়ের ধর্ষণের পর প্রাণ হারাতে হয়েছে ১০ বছরের শিশুকে। তার মরদেহ পুকুরে ফেলে দিয়ে নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রচার করে ওই ফুফাত ভাই। কিন্তু পুলিশের নিবিড় তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।
ফুফাত ভাই নাজমুস সাকিব ওরফে নয়নকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত নয়ন পাশের উপজেলা মনিরামপুরে কাওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের ইলিয়াস রহমানের ছেলে।
আর নিহত শিশুর নাম সোহানা আক্তার (১০)। সে ঝিকরগাছা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে এবং বায়সা-চাঁদপুর মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। রবিবার (৮ জুন) পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন:
কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভাতিজার বিরুদ্ধে চাচিকে হত্যার অভিযোগ
মাঠে পড়ে ছিল স্ত্রীর মরদেহ, গাছে ঝুলছিল স্বামীর লাশ
ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী জানান, ৭ জুন ঈদের দিন সোহানা হাড়িয়া গ্ৰামে ছোট ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। এর কিছুক্ষণ পর তার সাত বছরের ভাই বোনের পিছু পিছু ফুফু বাড়িতে যায়। এদিন দুপুরে নয়ন মামাত ভাইকে মামা বাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। এসে দেখে নয়নের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া বোন তন্বী ঘুমিয়ে আছে। আর সোহানা উঠানে দোলনায় খেলছে।
জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন পুলিশকে জানায়, এ সময় পরিবারের আর কোনো সদস্য বাড়িতে ছিল না। এ সুযোগে তিনি সোহানাকে জাপটে ধরে তার রুমে নিয়ে যায়। সেখানে সোহানার গলা ও মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সোহানা শ্বাসরোধে মারা যায়। এরপর নয়ন মৃতদেহটি বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দিয়ে আসে।
পুলিশ আরো জানায়, নিজের অপরাধ ঢাকতে নয়ন এরপর তার বোন তন্বীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে মিথ্যা গল্প সাজাতে থাকে। সোহানাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায়। পরে তারা দুজন মিলে সোহানার বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার খবর জানায়।
বিকেলে খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের পুকুরে তার মরদেহ ভাসতে দেখা যায়।
সোহানার বাবা আব্দুল জলিল ঝিকরগাছা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়ের ঠোঁটে জখমের চিহ্ন এবং মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখেছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নামে। মঙ্গলবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় পুলিশ নয়নকে তাদের বাড়ি থেকে আটক এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে। নয়নকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার রওনক জাহান জানান, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
ঢাকা/রিটন/বকুল