বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী
Published: 1st, November 2025 GMT
বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্মে জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্মে করে তাদের কোন ছাড় নয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। একটি অসত্য সংবাদ রাষ্ট্র ও সমাজের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।”
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রিজভী।
কোনো কিছু ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপানো যেন কারো কারো অভ্যাসে পরিনণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “সমাজবিরোধী কাজে যেই জড়িত হবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং সরকারের মাঝে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “রাউজানে কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। অথচ, কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হলো এই অস্ত্রধারীরা বিএনপির লোক! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো লেখা দুঃখজনক। এই রাউজানে নানান অভিযোগে অনেক সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
বিএনপি ১৫ বছরের অত্যাচার-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। জুলাই-আগস্টে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। মানুষ হয়ত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু এখনও আত আতঙ্কমুক্ত নয় বলেও জানান রিজভী।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে যখন গমের দাম কমেছে তখন বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র এতে ব্যর্থ হলে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবারদের অপকর্মের দায় এখন সাংবাদিকদের নিতে হচ্ছে: বিজেসি সভাপতি রেজওয়ানুল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসারের এই সময়ে সাংবাদিক ও ইউটিউবারদের মধ্যে ভেদ টানা সবার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) সভাপতি ও মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজা।
রেজওয়ানুল হক বলেছেন, এখন ইউটিউবার এবং সাংবাদিক দুটি একাকার হয়ে গেছে। যে কারণে ইউটিউবারদের দায়দায়িত্ব ও তাঁদের অপকর্মের দায় সাংবাদিকদের নিতে হচ্ছে।
আজ বুধবার ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংস্কার: সুপারিশ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন রেজওয়ানুল হক। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপসাংবাদিকতা ঠেকাতে সাংবাদিকদের নিবন্ধন এবং ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক করে দেওয়ার পক্ষে মত জানান রেজওয়ানুল হক, যে সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে রয়েছে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে উদাসীনতার দিকটি দেখিয়ে রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘আপনারা যদি গণমাধ্যমকে “ফোর্থ স্টেট” মনে করেন, তাহলে ফোর্থ স্টেটের ব্যাপারে যে কমিশনের রিপোর্ট, সেটা কেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিবেচনা করল না?’
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশে একমত নন জানিয়ে রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘কমিশনের পুরো রিপোর্টকে আমি ভালো বলব না। কিন্তু এর ভালোগুলো তো বাস্তবায়ন করা যেত। গত সরকারেরকে ফ্যাসিস্টে রূপান্তরিত করার জন্য সাংবাদিকদের যে দায় ছিল, সেই দায়ের শাস্তি হিসেবে ২৫০–এর বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে অনেকে বিনা বিচারে জেলে আছেন। ১৬০ বা ১৬৫ জনের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হলো। সাংবাদিকদের একটি দলের যে অপরাধ ছিল, তা এই শাস্তি দিয়ে দূর হবে না; বরং সিস্টেমটায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন ছিল।’
সাংবাদিকদের রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘বিএনপির আমলের আগপর্যন্ত ইউনিয়ন ছিল অভিন্ন। তারপর আমরা সাংবাদিকেরা বিভক্ত হয়ে গেলাম। শুরু হলো একটি বিএনপি-জামায়াতপন্থী ধারা, একটি আওয়ামীপন্থী ধারা, আরেকটি বামপন্থী ধারা। সেই যে বিভক্তির শুরু হলো, সেই বিভক্তি বাড়তে বাড়তে এখনকার অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও কিছুদিন আগপর্যন্ত প্রেসক্লাবে ইউনিয়নের দুটি অফিসই ছিল। ৫ আগস্টের পর একদল বিতাড়িত হয়েছে। সেই ইউনিয়ন অফিসে তালা দেওয়া। আরেক দল ভালোভাবে রয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমাদের পরিবর্তনটা তাহলে কী হলো?’
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য গীতি আরা নাসরীন, নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সদস্য এ কে আজাদ, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান মতিউর রহমান আকন্দ, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম রেজওয়ান উল আলম, এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সদস্য কামরুন্নেসা হাসান।