চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদ জাবেদ (৩৪) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত জাবেদ চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ থানা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর বাজারের শান্তিরহাট রাস্তার মাথায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মিরসরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, নিহত জাবেদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মার্চ মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই তিন কমিটি ঘোষণার পর থেকে উপজেলাজুড়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এ নিয়ে ২৫ মার্চ দুপুরে নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের সমর্থকেরা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পরদিন উপজেলাজুড়ে নতুন তিন কমিটির নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ কারণে সংঘর্ষ এড়াতে আজ ভোর সাড়ে ছয়টায় মিরসরাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। পরে বেলা ১১টায় নতুন কমিটির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটনের বাড়িতে যান। সেখানে নতুন তিন কমিটির সমর্থকদের সঙ্গে নুরুল আমিনের অনুসারীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে মোহাম্মদ জাবেদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও ১৩ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে মিরসরাই উপজেলা সদর হাসপাতালে পাঠান।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার দক্ষিণ মেহেদীনগর এলাকার ফজলুল করিম (৪৩), করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া এলাকার জাহিদুল ইসলাম (৪২), বারইয়ারহাট বাজার এলাকার শহিদুল ইসলাম (৫১), বারইয়ারহাটের ওমর ফারুক (৩৫), বারইয়ারহাট বাজার এলাকার দিদারুল আলম (৩৭), অলিনগর এলাকার আবু সুফিয়ান (৪০), আজমপুর এলাকার মোহাম্মদ ফাহিম (২২), ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুঞ্জ এলাকার মো.

এরশাদ (৪০), মঘাদিয়া ইউনিয়নের হাসিমনগর এলাকার গোলাম মোর্শেদ (৪০), দক্ষিণ নাহেরপুর এলাকার মো. ইলিয়াস (৫৫), দক্ষিণ নাহেরপুর এলাকার দিদারুল আলম (৪০), ধুম ইউনিয়নের মো. রাসেল (৫০) ও ধুম ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন রাসেল ফরায়েজী (৫২)।

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজিয়া আফরিন বলেন, বারইয়ারহাট পৌরসভা এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আজ দুপুর ১২টা থেকে ১৪ জনকে হাসপাতালে এনেছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে আনার আগেই এক যুবকের মৃত্যু হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের সবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।

সংঘর্ষে নিহত মো. জাবেদের খালাতো ভাই জাফর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাবেদ টুকটাক সবজির ব্যবসা করতেন। কয়েক দিন আগে বাড়িতে মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি মিরসরাইয়ে তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। আজ তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পেলাম। সেখানে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, বিষয়টি এখনো আমরা জানি না। জাবেদের বাবাকে নিয়ে তাঁর লাশ আনতে মিরসরাই যাচ্ছি আমরা। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও একটি ছেলেসন্তান রয়েছে।’

হামলায় নিহত যুবক মোহাম্মদ জাবেদ মিরসরাইয়ের যুবদল কর্মী মাসুদের বন্ধু বলে জানান বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটন। তিনি বলেন, ‘নুরুল আমিনের লোকজনের হামলায় জাবেদের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বেড়াতে এসেছিলেন। অতর্কিত এ হামলায় আমাদের আরও ১৩-১৪ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এই হামলার ঘটনায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটনের বাড়িতে লোকজন জড়ো হচ্ছিল। সে সময় আমাদের কয়েকজন কর্মীকে তাঁরা মারধর করেন। এই খবর পেয়ে বারইয়ারহাটে অবস্থান করা আমাদের কিছু কর্মী সেখানে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পক্ষের কিছু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। সেখানে যিনি মারা গেছেন তাঁর ওপর কারা হামলা করেছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে সেখানে উত্তেজনা চলছিল। আজ সকালে পৌরসভা এলাকার জামালপুরে বিএনপি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে এক যুবক নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রসর ই উপজ ল স ঘর ষ র ঘটন ন র ল আম ন ইউন য ন র ত ন কম ট ম হ ম মদ র এল ক র র স ঘর ষ ব এনপ র ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

শেষ পর্যন্ত খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন

কয়েক মাস আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে একরকম অপমান করেই হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বৈঠকে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে সেটি হয়নি। বুধবার শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন।

চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার সাথে শান্তি চুক্তি করার পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা এবং পুনর্গঠনে মার্কিন বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার জন্য এটি একটি অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদান করবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই চুক্তি রাশিয়ার কাছে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে একটি মুক্ত, সার্বভৌম এবং সমৃদ্ধ ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতি উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের জন্য আমেরিকান জনগণ এবং ইউক্রেনীয় জনগণের মধ্যে এই অংশীদারিত্বের কল্পনা করেছিলেন। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থায়ন বা সরবরাহকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না।”

ইউক্রেনের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী, ইউলিয়া সভিরিডেনকো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি বুধবার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। 

তিনি বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একসাথে, আমরা এমন একটি তহবিল তৈরি করছি যা আমাদের দেশে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।”

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা চুক্তির বিশদ বিবরণ প্রকাশ করেছেন। তারা চুক্তিটিকে ন্যায়সঙ্গত এবং ইউক্রেনকে তার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার অনুমতি প্রদানকারী হিসাবে চিত্রিত করেছেন।

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল জানিয়েছেন, তহবিলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে ৫০-৫০ ভাগে ভাগ করা হবে এবং প্রতিটি পক্ষকে সমান ভোটাধিকার দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ইউক্রেন “তার খনিজ সম্পদ, অবকাঠামো এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে” এবং শুধুমাত্র নতুন বিনিয়োগের সাথে সম্পর্কিত হবে, যার অর্থ এই চুক্তিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কোনো ঋণের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

বুধবার শ্যামিহাল এই চুক্তিকে “ইউক্রেনের উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ে সত্যিই একটি ভালো, সমান এবং উপকারী আন্তর্জাতিক চুক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

চুক্তির সমালোচকরা বলেছিলেন যে হোয়াইট হাউস যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ভবিষ্যৎকে তার সম্পদ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের সাথে যুক্ত করে ইউক্রেনের সুবিধা নিতে চাইছে। ফেব্রুয়ারিতে বেসেন্টের প্রস্তাবিত শর্তাবলীর তুলনায় চূড়ান্ত শর্তাবলী ইউক্রেনের জন্য অনেক কম কঠিন ছিল। সেখানে একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল যে তহবিল থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের ১০০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করবে।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ