‘সারা মাস শিশুদের পাঠদান করে অপেক্ষায় থাকি বেতনের। ঈদে বোনাসের টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করব, আনন্দে ঈদ করব।’ একদমে কথাগুলো বলে গেলেন মো. আবুল হাসান বক্তিয়ার। এদিকে তিনি যে ঈদ বোনাস পাবেন না, তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছেন। আগের তিন মাসের বেতনই তো আটকে আছে।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী ফকিরবাড়ি জামে মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক বক্তিয়ার। সহজে কোরআন শিক্ষা দেওয়া তাঁর মতো উপজেলার ৮৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী তিন মাস ধরে বেতন পান না। ফুল্লশ্রী ফকিরবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম বক্তিয়ারের সংসারে সাতজন সদস্য। পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে চারজনই পড়ছে মাদ্রাসায়। আসন্ন ঈদুল ফিতর বক্তিয়ারের পরিবারে আসছে যন্ত্রণা হয়ে। সন্তানদের নতুন কাপড় দেবেন কি, বাজার খরচ নিয়ে তাঁর দুর্ভাবনা।
মসজিদের ইমামতি করে বক্তিয়ার মাসে ৭ হাজার টাকা পান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক হিসেবে পান পাঁচ হাজার টাকা। ১২ হাজার টাকায় সংসার চালাতে নাভিশ্বাস ওঠে তাঁর। এর ওপর গত জানুয়ারি থেকে ইফা বেতন দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বেতন-বোনাস না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে এবার কোনো রকমে ঈদ করব।’
বক্তিয়ারের মতোই চিত্র মোসা.
মসজিদভিত্তিক সহজ কোরআন শিক্ষার (মক্তব) ৪৬টি কেন্দ্র রয়েছে উপজেলায়। অপরদিকে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিকের ৩৮টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন একজন করে শিক্ষক। সে হিসেবে শিক্ষক আছেন ৮৪ জন। এ ছাড়া ইফা আগৈলঝাড়া কার্যালয়ে একজন সুপারভাইজার, একজন মডেল কেয়ারটেকার ও তিনজন সাধারণ কেয়ারটেকার কর্মরত।
সূত্র জানায়, ৩২ বছরে এই প্রকল্প ৭ বার অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের সপ্তম পর্যায় শেষ হয়। চলতি বছর অষ্টম দফায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়– এই তিন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে প্রকল্পটিতে। এবার অর্থ মন্ত্রণালয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এ প্রকল্পকে আউটসোর্সিং প্রকল্প হিসেবে চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কারণে ২০২৫ সালের তিন মাসের বেতন পাননি এই প্রকল্পের আওতায় আগৈলঝাড়ায় কর্মরত শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা। তাদের হাতে পৌঁছেনি ঈদুল ফিতরের বোনাসও। তাদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়া হতো। তৃতীয় থেকে সপ্তম পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়নি। যে কারণে পর্যায়ক্রমে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
এসব বৈষম্যের অবসান চেয়ে প্রকল্পে কর্মরত ব্যক্তিরা ২০ মার্চ সারাদেশে মানববন্ধন করেন। পরে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পাঠিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের আশ্বাসে স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে ২৪ মার্চ কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। আন্দোলনকারীরা আউটসোর্সিং বাদ দিয়ে তাদের রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবি তোলেন।
২৩ বছর ধরে এ প্রকল্পে কর্মরত মো. ফকরুল আলম। তিনি আগৈলঝাড়া উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল কেয়ারটেকার। ফকরুল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতনে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করে আসছি। সারা মাস রোজা রেখে ঈদের সময় স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের কাউকে টাকার অভাবে নতুন জামা কাপড় দিতে পারি না। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছুই নেই।’
ছেলেমেয়ে, মা-স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার ফকরুল আলমের। জমিজিরাতও নেই তাঁর। আয়ের বিকল্প কোনো পথও নেই। ইফা থেকে পাওয়া সাড়ে ৭ হাজার টাকায় টেনেটুনে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তিন মাস ধরে সেই টাকা বন্ধ হওয়ায় ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। ফকরুল বলেন, ‘এখন যদি আউটসোর্সিং চালু হয়, তাহলে এই বয়সে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।’
ইফার উপজেলা সুপারভাইজার মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, ‘এই প্রকল্পের সপ্তম পর্যায় শেষ হয়েছে। এর পরে অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের বহুবার কথা দিয়েও কথা রাখেননি। এখন শুনছি, আউটসোর্সিংয়ের নামে দাসপ্রথা চালু করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ, যেদিন কাজ, সেদিন বেতন। একই প্রকল্পে ২ নিয়ম বৈষম্যমূলক।’
এ বিষয়ে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার দায়িত্বে থাকা ফিল্ড অফিসার মোহাম্মদ ফোরকান হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের কারও ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্ততপক্ষে আরও দুই মাস পর পেতে পারেন। আগেও এমন হয়েছে, কর্মীরা একসঙ্গে সব পেয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মসজ দ এই প রকল প র আউটস র স বক ত য় র উপজ ল র পর ব র পর য য় মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
গুম করা হতো তিনটি ধাপে
শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিদের কীভাবে গুম করা হতো, সেটি গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কমিশন বলেছে, ‘তিন স্তরের পিরামিড’–এর মাধ্যমে গুমের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হতো।
এই পিরামিডের সর্বোচ্চ স্তরে ছিল ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ছিলেন।
পিরামিডের দ্বিতীয় স্তরে ছিলেন বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আর পিরামিডের তৃতীয় স্তরে থাকা বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৪ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে গুমের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।
আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থায় গত সাড়ে ১৫ বছরে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যেখানে গুমের ঘটনায় নীরব সম্মতি থাকার বিষয়টি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল বিষয়টি (গুমের মতো গুরুতর অপরাধেও নীরব থাকা)। গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি তখন অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না।
■ গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে ১,৮৫০ অভিযোগ এসেছে। ■ যাচাই-বাছাই হয়েছে ১,৩৫০টি। ■ এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।গুমের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার মধ্যে নীরবতা কেন ছিল, তা খুঁজেছে কমিশন। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে তখন বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভেতরে বিষয়টি (গুম) অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না। বরং সেগুলোকে হয়তো একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখা হয়েছে, যা বাহিনীর অভ্যন্তরে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ এবং ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষার’ প্রয়োজনে স্বাভাবিক ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এসব কাজকে বিচ্যুতি নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত দায়িত্ব হিসেবেই পালন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত একজন কর্মকর্তার নথিতে তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের (পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে অবসরে যান, এখন পলাতক) মূল্যায়ন ছিল, ওই কর্মকর্তা কর্মদক্ষতার দিক থেকে ‘খুবই সন্তোষজনক’ এবং তাঁর নেতৃত্বগুণ ‘উচ্চমানের’।
ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে বেনজীর আরও লিখেছিলেন, তিনি ‘ভদ্র’, ‘সৎ স্বভাবের’ এবং ‘অত্যন্ত দক্ষ’। ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে নথিতে কোনো নেতিবাচক তথ্য লেখা হয়নি। যদিও তিনি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
অবশ্য অন্য একজন কর্মকর্তার বিষয়ে নথিতে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অনেক অভিযোগ লেখা আছে। এমনকি সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা আছে, ওই কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিচালক জিয়াউল আহসানের (পরে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসির মহাপরিচালক হন, এখন কারাগারে) কাছে ‘ফিশ থেরাপি’ (মাছ উপহার) পাঠাতেন। তবে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য নথিতে উল্লেখ নেই।
গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ (সত্য উন্মোচন) শীর্ষক প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদনে একটি বন্দিশালায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করা একজনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। বন্দিশালায় প্রথম গিয়ে ওই প্রহরী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘বন্দীদের সাথে কখনো স্বাভাবিক আচরণ করা যাবে না, যেটা স্বাভাবিক মানুষের সাথে করা হয়। তাদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত রাখতে হবে, সব অধিকার থেকে। যাতে সে কষ্ট অনুভব করতে পারে।’
ওই প্রহরী কমিশনকে বলেছেন, বন্দিশালার দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতি চেয়েছিলেন। তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, দায়িত্ব পালন না করলে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি আছে।
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে গুমগত ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ডিজিএফআইয়ের (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর) সাবেক মহাপরিচালক এবং একজন সাবেক পরিচালক। তাঁরা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদ-উল-ইসলাম।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ছয় কর্মকর্তা যখন ডিজিএফআইয়ের উচ্চ পদে ছিলেন, তখন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও হাসিনুর রহমান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান গোপন বন্দিশালায় আটক ছিলেন।
মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তা গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি যখন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (সিটিআইবি) পরিচালক ছিলেন, তখন আমান আযমীর গুমের বিষয়ে তিনি সাইফুল আলম ও আহমেদ তাবরেজ শামসকে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা কমিশনকে বলেছেন, আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা ডিজিএফআইয়ের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা গত নভেম্বর পর্যন্ত পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি) ছিলেন। তাঁরা তখনো সেনা আইনের অধীন ছিলেন। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাঁদের সেনাবাহিনীর অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ত। এখন তাঁদের হদিস নেই।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে অন্যায় নির্দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। কারণ, কর্মকর্তারা অন্যায় আদেশ মানতে বাধ্য নন। এই নীতির কথা সবাই জানতেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কর্তব্যে চরম অবহেলা ছিল। তাঁরা অধস্তনদের দিকনির্দেশনা বা মানসিক সহায়তার কোনো উদ্যোগ নেননি।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের ন্যায়সংগত আদেশ পালন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কোনো অন্যায় আদেশ পালনে কেউ বাধ্য নন। গুম–খুনের আদেশ যাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন, তাঁদের বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে। এসব অন্যায় আদেশ বাস্তবায়ন করা তাঁদের দায়িত্ব নয়, সেটি তাঁরা অনুধাবন করতে পারেননি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল।