Samakal:
2025-08-01@21:10:08 GMT

বেতনেরই খবর নেই বোনাস বহুদূর

Published: 28th, March 2025 GMT

বেতনেরই খবর নেই বোনাস বহুদূর

‘সারা মাস শিশুদের পাঠদান করে অপেক্ষায় থাকি বেতনের। ঈদে বোনাসের টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করব, আনন্দে ঈদ করব।’ একদমে কথাগুলো বলে গেলেন মো. আবুল হাসান বক্তিয়ার। এদিকে তিনি যে ঈদ বোনাস পাবেন না, তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছেন। আগের তিন মাসের বেতনই তো আটকে আছে। 
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী ফকিরবাড়ি জামে মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক বক্তিয়ার। সহজে কোরআন শিক্ষা দেওয়া তাঁর মতো উপজেলার ৮৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী তিন মাস ধরে বেতন পান না। ফুল্লশ্রী ফকিরবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম বক্তিয়ারের সংসারে সাতজন সদস্য। পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে চারজনই পড়ছে মাদ্রাসায়। আসন্ন ঈদুল ফিতর বক্তিয়ারের পরিবারে আসছে যন্ত্রণা হয়ে। সন্তানদের নতুন কাপড় দেবেন কি, বাজার খরচ নিয়ে তাঁর দুর্ভাবনা। 
মসজিদের ইমামতি করে বক্তিয়ার মাসে ৭ হাজার টাকা পান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক হিসেবে পান পাঁচ হাজার টাকা। ১২ হাজার টাকায় সংসার চালাতে নাভিশ্বাস ওঠে তাঁর। এর ওপর গত জানুয়ারি থেকে ইফা বেতন দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বেতন-বোনাস না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে এবার কোনো রকমে ঈদ করব।’ 
বক্তিয়ারের মতোই চিত্র মোসা.

বদরুন্নেছা পরির সংসারে। স্বামী মশিউর রহমান কীটনাশকের ব্যবসা করেন। ছেলে পড়ছে অনার্সে, মেয়ে এইচএসসিতে। বদরুন্নেছা উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের উত্তর চাদত্রিশিরা তালুকদারবাড়ি বাংলোঘর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘মাসজুড়ে শিশুদের লেখাপড়া শিখিয়ে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে পরিবারে সবাইকে নিয়ে আনন্দে ঈদ করব বলে আশা ছিল। অথচ এবার বেতন-বোনাস কিছুই পাইনি।’
মসজিদভিত্তিক সহজ কোরআন শিক্ষার (মক্তব) ৪৬টি কেন্দ্র রয়েছে উপজেলায়। অপরদিকে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিকের ৩৮টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন একজন করে শিক্ষক। সে হিসেবে শিক্ষক আছেন ৮৪ জন। এ ছাড়া ইফা আগৈলঝাড়া কার্যালয়ে একজন সুপারভাইজার, একজন মডেল কেয়ারটেকার ও তিনজন সাধারণ কেয়ারটেকার কর্মরত।
সূত্র জানায়, ৩২ বছরে এই প্রকল্প ৭ বার অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের সপ্তম পর্যায় শেষ হয়। চলতি বছর অষ্টম দফায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়– এই তিন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে প্রকল্পটিতে। এবার অর্থ মন্ত্রণালয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এ প্রকল্পকে আউটসোর্সিং প্রকল্প হিসেবে চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কারণে ২০২৫ সালের তিন মাসের বেতন পাননি এই প্রকল্পের আওতায় আগৈলঝাড়ায় কর্মরত শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা। তাদের হাতে পৌঁছেনি ঈদুল ফিতরের বোনাসও। তাদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়া হতো। তৃতীয় থেকে সপ্তম পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়নি। যে কারণে পর্যায়ক্রমে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
এসব বৈষম্যের অবসান চেয়ে প্রকল্পে কর্মরত ব্যক্তিরা ২০ মার্চ সারাদেশে মানববন্ধন করেন। পরে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পাঠিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের আশ্বাসে স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে ২৪ মার্চ কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। আন্দোলনকারীরা আউটসোর্সিং বাদ দিয়ে তাদের রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবি তোলেন। 
২৩ বছর ধরে এ প্রকল্পে কর্মরত মো. ফকরুল আলম। তিনি আগৈলঝাড়া উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল কেয়ারটেকার। ফকরুল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতনে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করে আসছি। সারা মাস রোজা রেখে ঈদের সময় স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের কাউকে টাকার অভাবে নতুন জামা কাপড় দিতে পারি না। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছুই নেই।’
ছেলেমেয়ে, মা-স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার ফকরুল আলমের। জমিজিরাতও নেই তাঁর। আয়ের বিকল্প কোনো পথও নেই। ইফা থেকে পাওয়া সাড়ে ৭ হাজার টাকায় টেনেটুনে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তিন মাস ধরে সেই টাকা বন্ধ হওয়ায় ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। ফকরুল বলেন, ‘এখন যদি আউটসোর্সিং চালু হয়, তাহলে এই বয়সে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।’
ইফার উপজেলা সুপারভাইজার মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, ‘এই প্রকল্পের সপ্তম পর্যায় শেষ হয়েছে। এর পরে অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের বহুবার কথা দিয়েও কথা রাখেননি। এখন শুনছি, আউটসোর্সিংয়ের নামে দাসপ্রথা চালু করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ, যেদিন কাজ, সেদিন বেতন। একই প্রকল্পে ২ নিয়ম বৈষম্যমূলক।’ 
এ বিষয়ে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার দায়িত্বে থাকা ফিল্ড অফিসার মোহাম্মদ ফোরকান হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের কারও ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্ততপক্ষে আরও দুই মাস পর পেতে পারেন। আগেও এমন হয়েছে, কর্মীরা একসঙ্গে সব পেয়েছেন।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মসজ দ এই প রকল প র আউটস র স বক ত য় র উপজ ল র পর ব র পর য য় মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন