ফুলটি দেখতে গোলাপের মতো, তবে কাঁটা নেই। গোলাপ শীতকালে ভালো ফোটে; আর জাপানি এই ফুল ফোটে শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম—সব ঋতুতেই। খরা ও বর্ষাসহিষ্ণু এই ফুলের সংরক্ষণকালও গোলাপের চেয়ে বেশি। অন্তত আট রঙে এই ফুল ফোটে।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে চাষ করা হচ্ছে নন্দিনী নামের এই ফুল। আমদানিনির্ভর এই ফুলের ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন ফুলবিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্রবার পানিসারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুই শতক জমিতে নন্দিনী ফুলের চাষ করা হয়েছে। মিন্টু সরদার নামের এক ব্যক্তি ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত। সাদা ও বেগুনি রঙের নন্দিনী ফুল ফুটে আছে। একটি গাছে একটি করে ডাঁটা (স্টিক), প্রতিটি ডাঁটায় ৮ থেকে ১০টি করে কুঁড়ি। কয়েক দিনের মধ্যে এই ফুল কাটা হবে জানালেন মিন্টু সরদার। তিনি জানালেন, দুই শতক জমিতে সাড়ে তিন হাজারের মতো চারা রোপণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু চারা মারা যায়। আড়াই থেকে তিন হাজার গাছে ফুল পাওয়া যাবে। প্রতিটি স্টিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে বিক্রি হবে।

নন্দিনী চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালেন, চারাসহ দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম বছরেই ছয় লাখ টাকার ফুল বিক্রি করা যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। একবার চারা রোপণ করে দুবার ফুল কাটা যায়।

ঢাকার জারা ফ্লোরি কালচার লিমিটেডের মালিক জহির উদ্দিন মো.

বাবর চারা সংগ্রহ থেকে শুরু করে চাষের টাকা বিনিয়োগ ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহ করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নন্দিনী ফুল চড়া দামে আমদানি করা হয়। এই ফুল গোলাপের মতো দেখতে হলেও এর রং ও ফুলদানিতে সংরক্ষণকাল দীর্ঘ হওয়ায় বেশি জনপ্রিয়। এ জন্য বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষের উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ বছর প্রদর্শনী প্লটে চাষ শুরু করেছি। এ ফুলের বীজ থেকে চারা উৎপাদন কঠিন। চারার দামও বেশি। যে কারণে কৃষক পর্যায়ে চাষে আগ্রহ কম।’

জানা গেছে, এ আর মালিক সিড নামের একটি চারা উৎপাদন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নন্দিনীর চারা উৎপাদন করেছে। তাদের মাধ্যমে ওই চারা সংগ্রহ করে ফুল উৎপাদন করা হয়।

এ আর মালিক সিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোপান মালিক বলেন, এ বছর প্রথমবার জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নন্দিনী ফুলের বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করা হয়। এ ফুলের চারা উৎপাদন অত্যন্ত সংবেদনশীল কাজ। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে চারা উৎপাদন করতে হয়। এই ফুলের অনেক সম্ভাবনা। বিদেশে চাহিদা বেশি, রপ্তানির সুযোগ আছে।

নন্দিনীর চারা থেকে ফুল উৎপাদন সহজ, কিন্তু বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা কঠিন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ফ ল নন দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।

ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ