ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নয় দিনের লম্বা ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ছুটি উপভোগ করতে এ সময় অনেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন। পর্যটকদের সেই পরিকল্পনা সার্থক এবং আনন্দময় করতে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। 

ছুটিতে পাহাড় ও লেক ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি বরাবরই পছন্দের তালিকায় থাকে পর্যটকদের। ভ্রমণপিপাসুরা যান্ত্রিক শহরের ক্লান্তি দূর করতে এখানে আসেন। এমনিতেই ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের টানা ছুটিতে সেই ভিড় আরো বাড়বে। জেলার সাজেক ভ্যালি, ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই লেক, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক ও সুবলং ঝরনাসহ আরো মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পটগুলো মুখরিত হয়ে উঠবে হাজার হাজার পর্যটকে।

এ কারণে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্কসহ শহরের হোটেল মোটেলগুলো। সাজেকে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে বেশ কিছু রিসোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকি রিসোর্টগুলো পর্যটক বরণে প্রস্তুতি শেষ করেছে বলে জানিয়েছে সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতি। 

সমিতির সভাপতি সুপর্ন দেব বর্মন জনান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাজেকে ১২৬টি রিসোর্টের মধ্যে ৩৫টি রিসোর্ট পুড়ে যায়। বাকি ৯১টি রিসোর্ট অক্ষত আছে। আশা করছি ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকরা সাজেক বেড়াতে আসবেন। তাদের বরণ করতে আমরা সব প্রস্তুতি সেরে নিয়েছি। 

রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ঝুলন্ত সেতু। ইতোমধ্যে ঝুলন্ত সেতু এবং এর আশপাশ রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। এছাড়া ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কাপ্তাই লেকের নীল জলে নৌবিহার করতে চান পর্যটকরা। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট বোট ব্যবসায়ীরা।

বোট চালক মো.

সাইফুল উদ্দীন বলেন, ‘‘পুরো রমজান মাসে রাঙামাটিতে তেমন পর্যটক সমাগম হয়নি। আমরা আশা করছি  ঈদের ছুটিতে বেশ ভালো পর্যটক সমাগম হবে এবং আমরাও ভালো ব্যবসা করতে পারব। পর্যটকদের বরণ করে নিতে আমরা আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ করেছি।’’

রাঙামাটি পর্যটন নৌ-যান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পর্যটকদের বরণ করে নিতে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। বোটগুলো সংস্কার করা, রঙ করাসহ সব কাজ শেষ। আমরা এখন পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছি।’’

জেলার আরেক অন্যতম বিনোদন স্পট পলওয়েল পার্কও প্রস্তুত পর্যটক বরণে। পুরো পার্ক নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে পার্কের একমাত্র ঝুলন্ত সেতুটিও।

এ দিকে ইতোমধ্যে শহরের বেশিরভাগ হোটেল-মোটেলগুলোতে অধিকাংশ রুম বুকড। রিজার্ভ বাজার গ্রীন ক্যাসেল হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘‘রোজার মাসে আমাদের তেমন একটা ব্যবসা হয়নি। কিন্তু আমরা আশা করছি ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণে আসবেন। আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে আমাদের হোটেলের প্রায় ৮০ শতাংশ বুকড হয়ে গেছে।’’

হোটেল মতি মহলের ব্যবস্থাপক চন্দন মজুমদার বলেন, আমাদের হোটেলের প্রায় ৯০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং রয়েছে। আশা করছি এবার ভালো ব্যবসা হবে।

একই কথা বলেছেন পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা। অন্যদিকে রাঙামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক একেএম মাহবুবুল আলম বলেন, ‘‘ঈদের ছুটি রাঙামাটির প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকরা যাতে নিরাপদে ঘুরতে পারেন তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপশি জেলা পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়ন থাকবে।’’ 

শংকর//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ র ছ ট আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার

বান্দরবানের আলীকদমে পর্যটক ভ্রমণ পরিচালনাকারী পর্যটন সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ওরফে বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পর্যটকদের নিয়ে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড় ভ্রমণ শেষে আলীকদমে ফিরে আসার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলীকদম থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর পাহাড়ি ঢলে নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমানের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আজ শনিবার সকালে হাবিবুর রহমান স্মৃতি আক্তারের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনকে আসামি করে আলীকদম থানায় মামলা করেন। মামলায় নিয়মকানুন অনুসরণ না করে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছে বর্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে।

গত বুধবার আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড় এলাকায় ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে একটি পাহাড়ি ঝরনায় তিনজন পর্যটক ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জুবাইরুল ইসলাম ও শুক্রবার স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান চৌধুরী নামে একজন পর্যটক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগে গত ৮ জুন ট্যুর এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনায় দুই দলে ভাগ হয়ে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পর্যটকদের প্রথম দলটি ফিরে আসার পথে স্মৃতিসহ তিনজন শামুক তৈরির ঝরনায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমান মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, বর্ষা ইসলামের পরিচালিত ট্যুর এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে ভ্রমণের ওপর আকর্ষণীয় পোস্ট করেন। ওই পোস্ট দেখে তাঁর মেয়ে স্মৃতি আক্তার আলীকদম যান। বৈরী আবহাওয়ায় ঝুঁকির বিষয়টি না জানিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় পর্যটকদের নিয়ে গিয়ে বর্ষা ইসলাম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তা ছাড়া স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড পর্যাপ্ত সংখ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাননি তাঁরা। স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ছাড়া পাহাড়ি পরিবেশে তাঁর অনভিজ্ঞ মেয়ে স্মৃতি আক্তারসহ পর্যটকেরা আলীকদমের দিকে ফিরছিলেন। শামুকঝিরি ঝরনা এলাকায় এসে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে স্মৃতি আক্তার ও সঙ্গে থাকা হাসান চৌধুরী এবং জুবাইরুল ইসলাম ভেসে যান। ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের অবহেলা, দায়িত্বহীন ও অদক্ষতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানিয়েছেন, কোনো পর্যটক উপজেলা সদরের বাইরে ভ্রমণে গেলে উপজেলা পর্যটন সেবাকেন্দ্রে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। প্রতি ১০ জনের জন্য একজন করে নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ট্যুর এক্সপার্টের বর্ষা ইসলাম ১২ জন পর্যটকের নাম ও ঠিকানা দিয়ে ৩৩ পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড নিয়েছিলেন সঙ্গে। ১২ জন ট্যুরিস্ট একজন গাইড নিয়ে আরও দূরে ভ্রমণে গেছেন। ২২ জন পর্যটককে কোনো গাইড ছাড়া ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ জন্য দুর্ঘটনায় পড়ে তিন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনো একজনের কোনো হদিস মিলছে না।

আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের অন্য ব্যক্তিদেরও অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার বর্ষা ইসলামকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, বিপাকে ৪০ হাজার পর্যটক
  • হাওরের স্বচ্ছ জলে মুগ্ধ পর্যটক, বাড়ছে ভিড়
  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার