ক্রেতা ৭০ টাকায় লেবু খাবেন না, এর কমে বেচলে বিক্রেতার লাভ হবে না
Published: 1st, April 2025 GMT
ঈদের পরদিন আজ মঙ্গলবার স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ক্রেতা এসেছেন হাতেগোনা। তার মানে, চাহিদা তেমন নেই। তা সত্ত্বেও লেবু ও শসা আগের মতোই বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে প্রতি হালি লেবু আজও ৭০ থেকে ১২০ টাকায় এবং প্রতি কেজি শসা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আজকের চেয়ে অবশ্য ঈদের আগের রাত তথা চাঁদরাতে লেবুর দাম হালিতে ১০ টাকা ও শসার দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি ছিল। আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলা, কারওয়ানবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং টাউন হল বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদের বন্ধের কারণে বাজারে অধিকাংশ সবজির সরবরাহ কম। বিশেষ করে লেবু ও শসার সরবরাহ আরও কম। এ কারণে তাঁরা দাম বেশি রাখছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের পরদিন সব কটি বাজারেই অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। অল্প কিছু দোকান খুললেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ক্রেতাদের বেশির ভাগই জানান, তাঁরা খুব জরুরি প্রয়োজনেই বাজারে এসেছেন। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকেদের মধ্য যাঁরা ঈদের আগে বাজার করার সুযোগ পাননি, তাঁদের অনেকেই আজ এসেছেন।
আজ বেলা আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গিয়ে সেখানে ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও মাছের তিনটি এবং চারটি মুদিদোকান খোলা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে সবজির পাঁচ-ছয়টি দোকান খোলা হয়েছে। তবে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল একেবারেই হাতে গোনা।
মোহাম্মদপুরের শ্যামলী হাউজিংয়ের বাসিন্দা মাসুদা বেগম নামের একজন ক্রেতা জানান, তিনি তাজমহল রোডের একটি শিশুশিক্ষা বিদ্যালয়ে কাজ করেন। ঈদের আগে তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল না। এ জন্য মুরগির মাংস ও অন্যান্য বড় (বেশি টাকার) বাজার করার সুযোগ পাননি। আজ বাজার থেকে মুরগি, শসা, পুদিনা পাতা, টক দই এসব কিনেছেন। কিন্তু কৃষি মার্কেটে দোকান খোলা না থাকায় পেঁয়াজ, আলু, বেগুনসহ কয়েকটি পণ্য কিনতে পারেননি। এগুলোর জন্য আশপাশের ছোট বাজারে গিয়ে দেখবেন বলে জানান মাসুদা।
লেবুর হালি ৭০-১২০ টাকাসরেজমিনে তিনটি বাজারে দেখা যায়, এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০ টাকায়। এগুলো ছোট আকারের। আর বড় আকারের লেবুর সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে সব সবজির দোকানে লেবু পাওয়াও যাচ্ছে না। কারণ, সরবরাহ কম।
কৃষি মার্কেটে আজ দুপুরে লেবু কিনতে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নুরে আলম। দোকানদার এক হালি লেবুর দাম চান ৭০ টাকা; কিন্তু ওই ক্রেতা ৫০ টাকা পর্যন্ত বলেন। এতে বিক্রেতা রাজি না হওয়ায় লেবু না কিনেই ফিরে যান নুরে আলম। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট সাইজের (আকারের) এই লেবুর দাম ৩০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়; কিন্তু দাম চাইছে ৭০ টাকা। লেবুই খামু না।’ অন্যদিকে বিক্রেতা শাহাদাত হোসেনের দাবি, ৭০ টাকার নিচে লেবু বিক্রি করলে তাঁর মোটেও লাভ থাকবে না।
বাজারে শসার দামও চড়া। প্রতি কেজি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে এ দাম ৬০-৮০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০-১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা ও পেঁপে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে পেঁপের দাম কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়েছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা সাগর হাওলাদার বলেন, ঈদের বন্ধের মধ্যে ক্রেতা কম, আবার সবজির সরবরাহ কম। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়তি। দু-তিন দিনের মধ্যে বাজার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
গরুর মাংস ও মুরগির দাম কমেনিআজ বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর সোনালি মুরগির কেজি রাখা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকার মতো কমলেও ব্রয়লার মুরগির দাম ঈদের আগের দিনের মতোই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে গরুর মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঈদের আগের দিনও এ দামেই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল। তবে বাজারে গরুর মাংসের ক্রেতা ছিল খুবই কম।
টাউন হল বাজারের মাংস বিক্রেতা মঈনুদ্দিন আজ বেলা সাড়ে তিনটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মাত্র একটি গরুর মাংসই বিক্রি করছি।’
কৃষি মার্কেটের মুরগি বিক্রেতা আরশাদ নিয়াজি বলেন, সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৩০টি মুরগি বিক্রি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এতক্ষণে অন্তত দেড় শ মুরগি বিক্রি হয়ে যেত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র ১২০ ট ক সরবর হ ৭০ ট ক ম রগ র র ম রগ সবজ র
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’