আরও একবার বিশ্বকাপে চুমু মেসির, কী বললেন লাজুক কণ্ঠে
Published: 2nd, April 2025 GMT
মঞ্চে অ্যাডিডাসের নীল রঙের ট্র্যাকস্যুট সেট পরে দাঁড়িয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। মুখে লাজুক মিটিমিটি হাসি। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো তাঁর হাতে বিশ্বকাপ ট্রফিটি তুলে দিতেই মেসি যেন গলে গেলেন! এত বড় ফুটবল তারকা, দুনিয়াজোড়া যাঁর এত খ্যাতি, যাঁর সামনে পৃথিবীর বেশির ভাগ ফুটবলভক্তই হয়ে পড়েন শিশুর মতো—সেই মেসিই কি না মাত্র ১৪.
ট্রফিটি এতটাই আরাধ্য যে পৃথিবীর যেকোনো ফুটবলারই এই ট্রফির সামনে শিশুর মতো হয়ে যান।মেসি তাই বাদ যাবেন কেন, মঞ্চে ট্রফিটি বাঁ হাত দিয়ে এমনভাবে আগলে রাখলেন যেন কোনো বাচ্চা কোলে নিয়েছেন। ইনফান্তিনো তাঁকে চুমু খেতে বলেছেন ট্রফিতে। বাচ্চাদের মাথা সাপটে দেওয়ার মতো ডান হাত দিয়ে ট্রফিটির মাথায় একবার হাত বুলিয়ে চুমু খান মেসি। করতালির রোল পড়ে চারপাশে। ইনফান্তিনোর মুখেও হাসি। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাতারে লুসাইলের মঞ্চে মেসির এই ছবিটাই দেখা গিয়েছিল, যেটা এত দিন পর ফিরে এল লস অ্যাঞ্জেলসের বিএমও স্টেডিয়ামে।
প্রশ্ন হলো, বিশ্বকাপ ট্রফি হঠাৎই পরশু রাতে কেন লস অ্যাঞ্জেলসে? উত্তর হলো, ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রচারণার শুরু হিসেবে অ্যাডিডাসের স্পনসরে ও ফিফার আয়োজনে মেসি ও বিশ্বকাপ ট্রফিকে আবার মিলিয়ে দেওয়া হলো। যেখানে উপস্থিত ছিলেন মেসির ভক্ত ও এনএফএলের দল কানসাস সিটি চিফের কোয়ার্টারব্যাক প্যাট্রিক মাহোমেসও। বিশ্বকাপ ট্রফিসহ মেসির সঙ্গে মঞ্চে দাঁড়ানোর একটি ছবি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে পোস্ট করে ক্যাপশনে মাহোমেস লিখেছেন, ‘অ্যাডিডাসের সঙ্গে বিশ্বকাপের কিক-অফ।’
আরও পড়ুনবিলেফেল্ড দেখাল ফুটবলে এমন দিনও আসে৩ ঘণ্টা আগে২০২৬ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাস্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায়। মেসি এখন ইন্টার মায়ামিতে খেলায় লস অ্যাঞ্জেলসে তাঁকে পাওয়াটাও সহজ হয়ে যায় আয়োজকদের জন্য। বাঁ হাতে ট্রফিটি আগলে রেখে মেসি বলেছেন, ‘এটা খুবই স্পেশাল ট্রফি, খুবই সুন্দর।’ অনুষ্ঠানে মেসির পাশাপাশি ইতালির হয়ে বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো ও জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক স্ট্রাইকার ও কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানও ছিলেন। মেসি ও মাহোমেসকে সামনে রেখে সঞ্চালক ফুটবলের চেয়ে আমেরিকান ফুটবল কঠিন কি না? এর উত্তরে মাহোমেস ‘আমাকে অতটা দৌড়াতে হয় না, এটা ভালো দিক’ বলার সঙ্গে সঙ্গে হাসি ছড়িয়ে পড়ে মেসির মুখে।
৩৭ বছর বয়সী মেসি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে বহুদিন। সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত মেসিই নেবেন। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলায় ভক্তরাও তাঁকে আগামী বছরের বিশ্বকাপে দেখার আশায় আছেন। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবে এরই মধ্যে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পেয়েছে আর্জেন্টিনা। ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩ গোলে ড্র করার পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের জয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।
মায়ামির হয়ে মেসিদের সামনে এখন কনকাক্যাফ চ্যাম্পিয়নস কাপে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ। লস অ্যাঞ্জেলসের এই বিএমও স্টেডিয়ামেই আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকালে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে লস অ্যাঞ্জেলস এফসির মুখোমুখি হবে ইন্টার মায়ামি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ লস র স মন ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ