আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ব্যাপক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হওয়া কয়েকটি ব্যাংকে এখনও তারল্য সংকট চলছে। এই সংকটের তীব্রতা কমাতে নিয়মিত বিরতিতে নতুন টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এভাবে টাকা ছাপানোর সমালোচনা করছেন। আগের সরকারের সময়েও তারা টাকা ছাপানোর বিরোধিতা করেছেন। হিসাব ছাড়া টাকা ছাপানো হলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় একদিকে মূল্যস্ফীতি ঘটে, অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যায়।
পরিহাসজনক হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.
তবে প্রশ্ন হলো, শুধু টাকার জোগান দিয়ে কি ব্যাংকগুলোকে বাঁচানো যাবে?
গত সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাতিয়ে নেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ফলে ২০২২ সালের পর তীব্র তারল্য সংকট তথা নগদ টাকার অভাব শুরু হয় এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে উদার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়মিত টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করা হতে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লুটেরা চক্র ঋণের নামে আরও টাকা বের করে নেওয়ার মচ্ছবে মেতে ওঠে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগের সরকার (আওয়ামী লীগ সরকার) ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছিল, যা মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘি ঢেলেছে। এই টাকার একটি অংশ সরকার ঋণ হিসেবে নিয়েছে, বাকিটা বিভিন্ন ব্যাংককে তারল্য সহায়তা হিসেবে ধার দেওয়া হয়।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আলোচিত ব্যাংকগুলোকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের উদার সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়। ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক অস্থিরতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকা ছাপিয়ে গোপনে সমস্যাগ্রস্ত কয়েকটি ব্যাংককে সরবরাহ করা হয়। গত বছরের ২৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর নিজেই জানান, সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে ২২ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত সপ্তাহে জানা যায়, টাকা ছাপিয়ে নতুন করে আরও দুই ব্যাংককে আড়াই হাজার কোটি দেওয়া হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া তারল্য সহায়তার পরিমাণ ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চারটি ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি জোগান দেওয়া হয়েছে।
সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে টাকা দিচ্ছে, তা মুফতে নয়; ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এর সুদের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। শর্ত অনুসারে, এ টাকা কেবল ছোট গ্রাহকদের আমানত ফেরতের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে। তাতে সাময়িকভাবে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পারার মতো ব্যর্থতা থেকে যাচ্ছে। কারণ আমানতকারীকে প্রদত্ত সুদ ও ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে প্রাপ্ত সুদহারের ব্যবধানই মূলত ব্যাংকের আয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত টাকা যেহেতু ঋণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, তাই তা থেকে সুদজনিত কোনো আয়ও হবে না।
যে ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তাকে এক বছরে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হবে। আলোচিত বছরে যদি ব্যাংকটি ৫০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা না করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্য সুদই শোধ করতে পারবে না। তাতে ব্যাংকটির দায় আরও বাড়বে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আলোচিত ব্যাংকগুলোর প্রতিটিরই খেলাপি ঋণের হার ভয়ানক রকম বেশি। এই হার ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। ধরে নিই, একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা, আর ব্যাংকটি বছরে ২৫০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে। তাহলে খেলাপি ঋণের জন্য পর্যাপ্ত সঞ্চিতি রাখতেই ব্যাংকটির ২০ বছর সময় লাগবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের জন্য যদি বছর শেষে ৫০০ কোটি টাকা সুদ গুনতে হয়, তাহলে ব্যাংকটির আয় দিয়ে ঋণের সুদ পরিশোধ করা যাবে না, খেলাপি ঋণের জন্য সঞ্চিতি রাখা তো দূরের কথা, এ ক্ষেত্রে বছর শেষে ব্যাংকটির দায় কমপক্ষে আরও ২৫০ কোটি টাকা বাড়বে।
তাহলে এই গ্যাঁড়াকল থেকে ব্যাংকগুলোকে উদ্ধারের উপায় কী? উপায় হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো এবং খেলাপি ঋণের বিশাল বোঝা কমিয়ে আনা। এটি সবার জানা, আলোচিত ব্যাংকগুলোর ঋণের বড় অংশ বেনামি। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে আছে নামমাত্র জামানত। যে সম্পদের মূল্য ১০০ কোটি টাকা দেখিয়ে ৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার প্রকৃত মূল্য হয়তো ৩০ কোটি টাকা। এই সম্পদের মূল্য অদূরভবিষ্যতে ১০০ কোটি টাকা তো দূরের কথা, ৫০ কোটি টাকায়ও ওঠে কিনা তা অনিশ্চিত। অন্যদিকে ঋণগ্রহীতার বড় অংশই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাই গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করবে বা সম্পদের মূল্য বাড়লে তা বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করা হবে– এমন আশায় না থেকে জামানত রাখা সম্পদ দ্রুত বিক্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কিছুটা রসদ ব্যাংকগুলোর হাতে আসবে। এর পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে তা দিয়ে ঋণ সমন্বয় করতে হবে। এর জন্য দরকার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। অর্থঋণ আদালতে মামলা করার মতো প্রচলিত পথে এগোলে ৩০ বছরেও এসব খেলাপি ঋণ আদায় হবে না।
ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে টাকা সরবরাহের পাশাপাশি প্রয়োজন কার্যকর অ্যাকশন প্ল্যান ও তার বাস্তবায়ন। সবচেয়ে ভালো হতো, ব্যাংকগুলোর অবসায়ন করা গেলে। সে ক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয় হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জিয়াউর রহমান: সাংবাদিক ও বিশ্লেষক;
সম্পাদক, অর্থসূচক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল চ ত ব সরক র র শ ধ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।