বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দ নিয়ে আপত্তি
Published: 6th, April 2025 GMT
বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। এ ব্যাপারে তাঁরা বিএনপির নেতাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন।
গতকাল শনিবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের নেতারা এ অনুরোধ জানান বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
রাত আটটার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা তাঁরা বৈঠক করেন। হেফাজতে ইসলামের আগ্রহে এ বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বাকিরা হলেন নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী ও মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ ও অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুনির হুসাইন কাসেমী।
বিএনপির পক্ষে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
বৈঠক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের নেতারা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অতীতের মামলা-মোকদ্দমা, সংবিধানের সংস্কারসহ সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ওই সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ‘মৌলবাদের উত্থান’–সম্পর্কিত বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানান হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তাঁরা বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করেননি বলেও উল্লেখ করেন। তাঁদের ভাষ্য, বিএনপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বলতে পারে, এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
এ পর্যায়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা মৌলবাদী বলতে জামায়াতে ইসলামীকে বুঝিয়েছেন। এ সময় হেফাজতের নেতারা বলেন, এতে শুধু জামায়াত নয়, সব ইসলামপন্থীদের আঘাত করা হচ্ছে।
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমাদ আবদুল কাদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য “মৌলবাদ” শব্দের ব্যবহার নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। ওনারা ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’
জানা গেছে, মতবিনিময়ে বিএনপির নেতারা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের সমর্থন চান। হেফাজতের নেতারা এর সঙ্গে একমত পোষণ করে। তবে তাঁরা নির্বাচনে আগে সংস্কার সম্পন্ন করা, সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দেওয়া এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাটি বিএনপির প্রস্তাবে যুক্ত করতে অনুরোধ জানান। এ ছাড়া গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এ দাবির সঙ্গে বিএনপি একমত পোষণ করেছে। তবে কৌশলগত কারণে তারা প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলবেন না।
বৈঠক শেষে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত মতবিনিময় হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা নিয়ে। বিগত সময়ে আমাদের লোকজনকে হত্যা করা হলো, অথচ উল্টো মামলা দিয়ে আমাদেরই জেলে নেওয়া হয়েছে। সে মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। আবার আমরা যে মামলা করেছি, সেগুলোরও কোনো দৃশ্যমান কার্যকারিতা নেই। এ ব্যাপারে বিএনপির সহযোগিতা চেয়েছি আমরা।’
হেফাজতের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপির জোরালো দাবি, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবেন, যাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যায়। সেই দাবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একমত হয়েছে।
আরও পড়ুনডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত হেফাজত৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত দ র স ইসল ম র ন ত র অন র ধ আপত ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাখাইনে করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হেফাজতের
জাতিসংঘের অনুরোধে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে রাখাইনে করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক এ কথা বলেন। আগামী ৩ মে চার দাবিতে হেফাজতে ইসলাম মহাসমাবেশ করবে। এর সার্বিক প্রস্তুতি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সকাল ৯টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।’
সংবাদ সম্মেলনে মামুনুল হক আরও বলেন, হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সবাই উদ্বিগ্ন।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের চার দফা দাবি তুলে ধরেন মামুনুল হক। এগুলো হলো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল, সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্বরসহ সব গণহত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন এবং ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যে কমিশন কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে সুপারিশ করতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ সেই কমিশন মানে না। সংবিধানে বহুত্ববাদ নয়, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হেফাজত নেতা ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনরাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের২৭ এপ্রিল ২০২৫