রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ নেই
Published: 6th, April 2025 GMT
কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করা তালিকাভুক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নিতে দেশটির জান্তা সরকারের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। গতকাল শনিবার আশ্রয়শিবিরের অন্তত ১০ জন রোহিঙ্গা নেতা ও ধর্মীয় শিক্ষক, উখিয়া ও টেকনাফের তিনজন জনপ্রতিনিধি এবং দুজন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা বলেছেন, আরাকান আর্মি যারা রাখাইনের ৮০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরোধ আছে। তাদের সম্মতি ছাড়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরতে পারবে না।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। আরাকান আর্মির হামলার মুখে গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার বৈঠক করেন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। বৈঠকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া তালিকাভুক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। এর বাইরে আরও সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ জরুরি ভিত্তিতে করবে জান্তা সরকার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সরকার প্রস্তুত আছে জানিয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ২০২৩ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে তিনটি ও টেকনাফের কেরনতলীতে একটিসহ মোট চারটি ট্রানজিট কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা মিয়ানমারকে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম। সম্ভবত ওই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে জান্তা সরকার ১ লাখ ৮০ হাজারের একটা সংখ্যা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে। সরকারের সঙ্গে যেহেতু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটা বোঝাপড়া হচ্ছে, আমরাও প্রস্তুত আছি প্রত্যাবাসনের বিষয়ে।’
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উখিয়ার আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় আমরা জানিয়েছি, রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে সেফ জোন গঠন ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদপ্রত্যাবাসনের পরিবেশ নেই
গত বছরের মাঝামাঝি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ধরনের সাফল্য পায় আরাকান আর্মি। এরপর বুথিডং, মংডুসহ কয়েকটি এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার খবর আসে। এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মোটেও সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি বলেন, আশ্রয়শিবিরে থাকা সব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি; কিন্তু সেটা হতে হবে টেকসই ও নিরাপত্তার সঙ্গে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য আগে নিরাপদ অঞ্চল (সেফ জোন) গড়ে তুলতে হবে। আরাকান আর্মি সে সুযোগ দেবে মনে হয় না।
উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, ‘গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উখিয়ার আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় আমরা জানিয়েছি, রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে সেফ জোন গঠন ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।’
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। আরাকান আর্মির হামলার মুখে গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।রোহিঙ্গা নেতারা জানান, গত ১৪ মার্চ বিকেলে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে প্রধান উপদেষ্টার আগামী বছর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঈদ করার ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন রোহিঙ্গারা। কিন্তু রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ এখন নেই।
একই কথা জানান টেকনাফের লেদা আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলম। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আশ্রয়শিবির থেকে ১ হাজার ১০০ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানোর সব কার্যক্রম দুদেশের পক্ষ থেকে সম্পন্ন করা হলেও সেটা সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গাদের বসতি এলাকাগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক—এই স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করেনি এত দিন। এখন জান্তা সরকার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত চাইছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রত্যাবাসনকৃত রোহিঙ্গাদের তারা কোথায় রাখবে? আবার আরাকান আর্মি প্রত্যাবাসনে রাজি হলেও তারা তো রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে পারবে না। তারা নিজেরাও অবৈধ সশস্ত্র বিদ্রোহী। আরাকান আর্মির উঠানে গিয়ে কোনো রোহিঙ্গা শান্তিতে থাকতে পারবে না।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়ার বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী জানান, ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকারের ফেরত নেওয়ার কথা তিনি গণমাধ্যমে দেখেছেন। প্রধান উপদেষ্টা যদি মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিতে পারেন, সেটা হবে কক্সবাজারবাসীর জন্য সবচেয়ে খুশির খবর।
একই মত প্রকাশ করেন জেলা জামায়াতে ইসালামীর আমির ও টেকনাফের বাসিন্দা অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১ ল খ ৮০ হ জ র র হ ঙ গ আর ক ন আর ম র র খ ইন র জ য সরক র র র জন য পর ব শ বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা
জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম।
শুক্রবার সকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি গ্যাসকূপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিলেটের যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হয় সেসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি? -এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিল্প কারখানা যেখানে গ্যাস পাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস দেওয়া অপচয়। নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুযোগ বন্ধ রাখা উচিত। তবে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করবে সরকার।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ গ্যাস কূপ থেকে থেকে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে গোলাপগঞ্জে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ এলাকা, বাপেক্সের রিগ বিজয়-১২ ও কৈলাশটিলা ১ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত রিগপ্যাড পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি একই উপজেলাধীন কৈলাশটিলা এমএসটি প্লান্ট পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (অপারেশন বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. খালিদ আহমেদ, বাপেক্স/এসজিএফএলের প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেব আহমদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেহসানুল ইসলাম, সেক্রেটারি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনির হোসেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম ফারুক আহমদ, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এমএসটি প্লান্টের ডিজিএম জাফর রায়হানসহ সংশ্লিষ্ট কূপের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।