প্রথমবার হকির জাতীয় দলে আবেদ-ওবায়দুল
Published: 6th, April 2025 GMT
১৪ এপ্রিল রাতে এশিয়ান হকি ফেডারেশন (এএইচএফ) কাপ খেলতে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ দল। তার আগে ১৮ জনকে মূল দলে আর ৬ জনকে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রেখে চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। যেখানে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন দুই খেলোয়াড়-ওবায়দুল হোসেন ও আবেদ উদ্দিন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি কুপার টেস্টে অংশ নেন ৫৭ জন খেলোয়াড়। সেখান থেকে বাছাইকৃত ৪৫ খেলোয়াড় নিয়ে এএইচএফ কাপ হকি টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে শুরু হয় জাতীয় হকি দল গঠন প্রক্রিয়া। কয়েক দিন ক্যাম্প করার পর ৫ মার্চ ৩৩ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। সেটা কমিয়ে ২৪ জন করার পর আজ চূড়ান্ত স্কোয়াড দিয়েছেন কোচ আ ন ম মামুন উর রশিদ।
যত দূর জানা গেছে, স্ট্যাডবাই হিসেবে থাকা ৬ জন ছাড়াই ইন্দোনেশিয়া মিশনে যাবে বাংলাদেশ। ইনজুরি বা অসুস্থতাজনিত কারণে মূল স্কোয়াডের কেউ খেলতে না পারলে তখন স্ট্যান্ডবাই থাকা খেলোয়াড়দের কাজে লাগানো হবে।
১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত হবে এএইচএফ কাপ, যা একই সঙ্গে এশিয়া কাপের বাছাইপর্বও। এই প্রতিযোগিতার শেষ চার আসরের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ। তাই এবারও তাদের লক্ষ্য শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা।
এ মিশনে থাকছেন না দেশের হকির তারকা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ। হকি ফেডারেশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৩২ বছরের কেউ জাতীয় দলে খেলতে পারবেন না। বয়সের এই নিয়মের মধ্যে পড়ায় বাদ পড়ে যান তিনি। আর ৩৩ জন থেকে স্কোয়াড ২৪ জনে নামিয়ে আনার পথে বাদ পড়েন সাবেক অধিনায়ক সারওয়ার হোসেন ও মিলন হোসেন।
আরও পড়ুনমিরাজের কাছে জিম্বাবুয়ে সিরিজও ‘কঠিন’ যে কারণে৪২ মিনিট আগেএএইচএফ কাপের সপ্তম আসরে পুল ‘বি’ তে থাকা বাংলাদেশের চার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও কাজাখস্তান। ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ১৮ এপ্রিল কাজাখস্তানের বিপক্ষে। প্রিলিমিনারি রাউন্ড এবং স্থান নির্ধারণী ম্যাচ শেষে ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের ফাইনাল।
১৮ জনের দলে যাঁরা আছেন
হুজাইফা হোসেন, রেজাউল করিম, সোহানুর রহমান, ফরহাদ আহমেদ, আশরাফুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, আবেদ উদ্দিন, নাইম উদ্দিন, আল নাহিয়ান, রোমান সরকার, ফজলে হোসেন, পুস্কর ক্ষিসা (অধিনায়ক), আরশাদ হোসেন, ওবায়দুল হোসেন, রাকিবুল হাসান, মাহবুব হোসেন, বিপ্লব কুজুর ও আবু সাঈদ।
স্ট্যান্ডবাই ৬ জন
মেহরাব হোসেন, প্রিতম রায়, মেহেদী হাসান, নুরুজ্জামান নয়ন, তৈয়ব আলী ও মাইনুল ইসলাম।
আরও পড়ুন১৫ বলে ফিফটি করে যত রেকর্ড পারভেজ হোসেনের১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।