ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ১০-১৫ তলারও বেশি উচ্চতায় উঠে নিচে পড়ে যাচ্ছে মানুষ। মনে হচ্ছে, তারা আকাশে উড়ছে! নিচে বিশাল ইট-সুরকি-ধুলার কুণ্ডলী। মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপ পুরো ভবন। সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি ভিডিওতে এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা গেছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, আজান শুরু হতেই বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একটি মসজিদ। থেমে যায় মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর। এভাবে একের পর এক ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন। রাতে ঘুমিয়ে থাকা নারী-শিশুর শরীর ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্সের। 

গতকাল রোববার ভোরে গাজার খান ইউনিসের একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বোমা হামলায় সেখানে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে নারী-শিশুর মরদেহ। ওই হামলা থেকে বেঁচে ফেরা খান ইউনিসের বাসিন্দা জামাল আল-মধুন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘরগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেল। আমরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আটজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। তাদের সবাই নারী ও শিশু। একজন পুরুষও নেই। এই নিরীহ নারী-শিশু সবার মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। 

গত ২৩ মার্চ গাজায় ১৫ জন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) তাদের ভুল স্বীকার করেছে। তারা শুরুতে দাবি করেছিল, অন্ধকারে হেডলাইট বা ফ্ল্যাশলাইট ছাড়া গাড়িবহরের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তারা গুলি চালিয়েছিল। তবে নিহত প্যারামেডিকদের একজনের তোলা মোবাইল ফোনের ফুটেজে দেখা গেছে, আহতদের সাহায্য করার জন্য ডাকাডাকির সময় যানবাহনগুলোয় আলো জ্বালানো ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বর্বর হামলায় অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবরুদ্ধ ও বোমাবর্ষণ করা অঞ্চলে ইসরায়েলের পোলিও টিকা দিতে বাধা দেওয়াকে টাইম বোমার সঙ্গে তুলনা করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় টিকা দিতে বাধা দেওয়ায় গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ী পক্ষাঘাত ও দীর্ঘস্থায়ী অক্ষমতার ঝুঁকিতে রয়েছে। 
এদিকে, যুক্তরাজ্যের আইনসভার দুই সদস্যকে আটক করেছে ইসরায়েল। একটি প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে তারা ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন। পরে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সংসদ সদস্যরা রোববার ভোরে দেশ ছেড়েছেন। 

গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন’। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’ নামে আজ সোমবার বিশ্বজুড়ে এ অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ইসর য় ল য় ইসর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি

প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।

ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।

ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।

তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।

মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।

আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।

আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদ

আনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।

সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি