চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেন করার দাবিতে একজনের অবস্থান কর্মসূচি
Published: 6th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণের দাবিতে একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল। আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন। একই দাবিতে আগামীকাল সোমবার চট্টগ্রামের প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কক্সবাজার অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছেন সৌরভ।
অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে সৌরভের হাতে ধরা পোস্টারে লেখা ছিল, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আর কত লাশ চাই?’ পাশে প্রেসক্লাবের গ্রিলে সাঁটানো আরেকটি পোস্টারে লেখা ছিল ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ অথবা ৪ লাইন করার দাবিতে একক অবস্থান কর্মসূচি’।
বিকেল ৪টা থেকে একা দাঁড়িয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সৌরভ। এই সময় তিনি সড়কটিতে সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন।
সৌরভ বলেন, ‘আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের মহাপরিকল্পনা নেওয়া হোক। এখনই চার লাইনের কাজ শুরু করা হোক। এখন কালুরঘাট সেতু হচ্ছে। এটা হলে এই সড়কের ওপর আরও বেশি চাপ বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ১১টি লাশ দেখেছি। লাশগুলো নিজ হাতে হস্তান্তর করেছি তাঁদের স্বজনদের কাছে। আর কোনো লাশ দেখতে চাই না।’
আরও পড়ুনঈদের ছুটির আট দিনে সড়কে নিহত ১৩২: বিআরটিএ১২ ঘণ্টা আগেএকই দাবিতে আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কক্সবাজার অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছেন সৌরভ। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিনি এই লংমার্চ করবেন।
সৌরভ প্রথম আলোকে জানান, ১১টি প্রতীকী লাশ নিয়ে তাঁরা লংমার্চ করবেন। এতে কোনো ব্যানার থাকবে না। পটিয়া, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলায় পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। পরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত বেড়ে ১০০২ এপ্রিল ২০২৫উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন। হতাহতদের শুশ্রূষা ও দাফন কাফনে সৌরভ পালসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন।
আরও পড়ুনলোহাগাড়ায় যাত্রীবাহী দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৫৩১ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে