হাসপাতালে অসুস্থ স্বজনকে দেখতে যাচ্ছিলেন, বাস পুকুরে পড়ে বাবা–ছেলে নিহত
Published: 8th, April 2025 GMT
ভাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁকে দেখতে যাচ্ছিলেন জোয়ার সরদার (৬৫)। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী পারুলী বেগম (৫৫) ও ছেলে ইমান সরদার (৩৫)। কিন্তু ভাইকে আর দেখতে পারলেন না তিনি। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় জোয়ার সরকার ও ইমান নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন পারুলী বেগম।
ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের জোবায়দা-করিম জুট মিলের কাছে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে ৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে জোয়ার সরদার (৬৫) ও তাঁর ছেলে ইমান সরদার রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি নগরকান্দা উপজেলার শেয়ার কান্তিগ্রামে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও আছেন নগরকান্দার কাঠিয়া বড়গ্রামের বাসিন্দা রাজীব খানের স্ত্রী দীপা খান (৩৪), ফরিদপুর সদরেরচরের চাঁদপুর গ্রামের বলরাম সরকারের স্ত্রী ভারতী সরকার (৪০), চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীটেক গ্রামের বাসিন্দা খালেক চৌধুরীর ছেলে আলম চৌধুরী (৪০), ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার বাসিন্দা লতিফ ব্যাপারীর স্ত্রী ফজিরননেসা এবং লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব ফকিরপাড়া গ্রামের জহিরউদ্দিনের ছেলে আজিবরউদ্দিন (৪৩)।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনের আহাজারি দেখা যায়। বাবা জোয়ার সরদার ও ভাই ইমান সরদারের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন শাহেদ সরদার। তিনি জানান, দুদিন আগে তাঁর চাচা চান মিয়া সরদার অসুস্থ হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে দেখতে বাবা, মা ও ভাই হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও ভাই এখন লাশ হয়ে সেই হাসপাতালে। মায়ের অবস্থাও গুরুতর।
নিহত ভারতী সরকারের সঙ্গে বাসে ছিলেন তাঁর ভাতিজা বাঁধন সরকার (২৫)। দুর্ঘটনায় আহত বাঁধনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর বাবা অসুস্থ। ফরিদপুর শহরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁকে দেখতে যাচ্ছিলেন। তালমার মহিলা রোড থেকে বাসটি ছাড়ার পর বেপরোয়া গতিতে চলতে শুরু করে। যাত্রীরা বারবার বলার পরও চালক কারও কথা শোনেননি। চালকের জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে ফারাবী পরিবহনের একটি বাস ফরিদপুরে যাচ্ছিল। ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের জোবায়দা-করিম জুট মিলের কাছে বাসটি আরেকটি বাসকে অতিক্রম (ওভারটেক) করতে যায়। তখন বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিলারে ধাক্কা লেগে সড়কের পাশের পুকুরে পড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। হতাহত ব্যক্তিদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ওই দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বাসের গতি ৮০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ছিল। চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বাবা ও ভাইয়ের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন শাহেদ সরদার। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন য় উপজ ল র সরদ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভুয়া র্যাবকে ধাওয়া দিল আসল র্যাব, পথে দুই পক্ষকেই পেটাল জনতা
জোরে হর্ন দিতে দিতে দ্রুতগতিতে ছুটছিল একটি মাইক্রোবাস। সেটির কিছুটা পেছনে ছুটছিল আরেকটি মাইক্রোবাস। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় মহাসড়কে গাছ ফেলে প্রথম মাইক্রোবাসটিকে থামান স্থানীয় লোকজন। গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব বলে পরিচয় দেন। তবে তাঁদের কারও গায়ে র্যাবের পোশাক ছিল না। সন্দেহ হয় স্থানীয় লোকজনের। ওই ব্যক্তিরা পালাতে চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে মারধর শুরু করেন স্থানীয় লোকজন।
এমন সময়ে সেখানে পৌঁছে যায় দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি। এতে ছিলেন র্যাবের প্রকৃত সদস্যরাই। যদিও কয়েকজনের গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় লোকজনের রোষের মুখে পড়ে তাঁরাও পিটুনির শিকার হন। একপর্যায়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করে এই দুই পক্ষকেই উদ্ধার করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে; গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জনতার হাত থেকে র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নিয়ে আসা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের নিয়ে ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার উদ্দেশে যান।
মারধরের শিকার ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশপাড়া গ্রামের স্বপন খান (৪৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের মিন্টু গাজী (৪৫), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কুনসিবাড়ি গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর এলাকার মো. জামিল (৩২) এবং ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের দিদার (২৯)। তাঁদের থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে র্যাব-১০–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা দুজন সোনা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতি করেছিলেন।
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম বলেন, র্যাব-১০–এর হেডকোয়ার্টার থেকে একটি টিম ডাকাত দলকে ধাওয়া করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে উভয় পক্ষের ওপর চড়াও হন। কিছু র্যাবের সদস্যরা সাদাপোশাকে থাকায় উত্তেজিত লোকজন তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত র্যাব বলে চিনতে ভুল করেন।
র্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভুয়া র্যাবের দলকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।’ নিজেরাও মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন ভুয়া র্যাব পরিচয়কারীদের মারপিট করছিলেন, তখন তাঁদের যাতে মেরে না ফেলেন, এই আশঙ্কায় আমরা জনগণের পিটুনি থেকে তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম পর্যায়ে জনগণ আমাদেরও ভুয়া র্যাব মনে করেছিলেন। এ কারণে আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেছিল, তবে তা আমলযোগ্য নয়।’