নানা উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শিহরণ জাগায় মারমা শিল্পীদের পাখানৃত্য। বিশেষ করে মারমাদের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ‘ত্নহ তাখা হ্নাসই পোয়ে, অপ্য পিরে সাংগ্রাইংলে, ঙেনি রাকমা জা ফ্রইতে, ম্রারে ফুরে তোয়ি নিংরে (বছর ঘুরে সাংগ্রাইং এসেছে/ আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে/ উষ্ণ-শীতল আবেশ নিয়ে/ আমার প্রিয়তমের শীতল অনুভূতি জাগাব পাখা দিয়ে) গানের সঙ্গে পাখানৃত্য প্রতিবছরই দর্শকদের মাতিয়ে আসছে। হৃদয়কাড়া এই নৃত্য-গান দুটিরই স্রষ্টা হিসেবে রয়েছে ‘মারমা শিল্পীগোষ্ঠী। কেবল পাখানৃত্য নয়, মারমাদের ময়ূরনৃত্য, থালানৃত্য, মাছ ধরা নৃত্য, ছাতানৃত্য—সবকিছুরই রূপকার এই সংগঠন। নিজেদের সৃষ্টি করা অসংখ্য পাহাড়ি গানেও শ্রোতাদের আবেগে-উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে সংগঠনটি। বলা যায়, পাহাড়িদের সাংস্কৃতিক চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সংগঠনটি।

বান্দরবানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মারমা শিল্পীগোষ্ঠী’। যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে। এই সংগঠনের শিল্পীরা নিজেদের সৃষ্টিশীলতায় ঝিমিয়ে পড়া মারমা সংস্কৃতির যেমন প্রাণ সঞ্চার করেছেন, তেমনি ত্রিপুরা, ম্রো, খুমি, খেয়াংসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকেও জাগিয়ে তুলেছেন। বর্তমান সময়ে মারমাদের জনপ্রিয় অসংখ্য নৃত্য-গান মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর সৃষ্টি। পুরোনোকে ধারণ করে এসব গান-নৃত্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সমাদৃত হয়ে আসছে।

সাত-আটজন তরুণ-তরুণী পাহাড়ি সংস্কৃতিচর্চা ও বিকাশের জন্য সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। গতানুগতিকতার বাইরে পাহাড়ের শিল্প-সংস্কৃতির নতুন পথরেখা সন্ধান ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। প্রাচীন সংস্কৃতির সঙ্গে সমকালকে মিলিয়ে নৃত্য-গানের রূপান্তর করেছেন। এ পর্যন্ত শিল্পীদের একক ও দলীয় গানের বহু অ্যালবাম বেরিয়েছে। নাটক ও নৃত্যও হয়েছে বহু।

মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর গানের অ্যালবামের মধ্যে সবচেয়ে সাড়া জাগিয়েছে ‘টং অঙোয়ে’ (পাহাড়ের বাষ্প); নাটকের মধ্যে ওয়াকুসে বা তুলা ব্যবসায়ী। গান, নৃত্য ও নাটক ছাড়াও ২০০১ সালে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক–পরিচ্ছদ, গয়না ও ভাষা তুলে ধরার জন্য মিস্টার ও মিস মারমা প্রতিযোগিতা আয়োজন শুরু করা হয় সংগঠনের উদ্যোগে। সাংগ্রাইং উৎসবে এই আয়োজন তরুণ-তরুণীদের নিজেদের সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে সচেতন করে। তবে কয়েক বছর করার পর এর আর ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি। মারমা ছাড়াও ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমিসহ অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতিচর্চা এবং বিকাশেও মারমা শিল্পীগোষ্ঠী কাজ করছে। ম্রো আধুনিক গানের প্রথম অ্যালবাম মারমা শিল্পীগোষ্ঠী থেকে বের করা হয়েছে।

ময়ূর নৃত্য পরিবেশন করছেন মারমা শিল্পীরা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট

তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে সারা দেশে তিনটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হবে আন্তজেলা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট, ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট এবং মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল।

তিনটি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে বাফুফের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে দেবে ১০ কোটি টাকা, যা বাফুফে আগামী সপ্তাহ থেকে পেতে পারে। বাকি অর্থ স্পনসরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে বাফুফে। মাঠ সংস্কার, দলগুলোর অংশগ্রহণ ফি, পুরস্কারসহ নানা খাতে এ অর্থ ব্যয় হবে। প্রকল্পটি এরই মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেছে বাফুফে।

সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট, যেখানে দেশের ৬৪টি জেলা অংশ নেবে। বাফুফে সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি জেলা খেলবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। প্রথম রাউন্ডে দলগুলোকে আটটি ‘পটে’ ভাগ করা হবে। প্রতি ‘পটে’ থাকবে আটটি করে দল। প্রথম রাউন্ডের জয়ী দলগুলো যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও থাকবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতি। এভাবে ধাপে ধাপে এগোতে থাকবে টুর্নামেন্ট।

চতুর্থ রাউন্ডের খেলা হবে নকআউট ভিত্তিতে। আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ২৫ থেকে ২৯ আগস্টের মধ্যে এই টুর্নামেন্ট শুরুর পরিকল্পনা বাফুফের। প্রায় চার মাসের এই মেগা টুর্নামেন্টে ফাইনাল হবে ঢাকায়।

বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে।

১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া শেরেবাংলা কাপ আন্তজেলা ফুটবল একটানা হয়েছিল ১৯৮৬ পর্যন্ত। এরপর দীর্ঘ সময় নানা বিরতির মধ্য দিয়ে চলেছে এর যাত্রা। ১৯৮৭-৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০০১–০৩, ২০০৫ সালে টুর্নামেন্ট হয়নি। ২০০৬ সালের পর দীর্ঘ ১৩ বছর বিরতি পড়ে শেরেবাংলা কাপে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে টুর্নামেন্টটি আবার মাঠ ফেরে। তবে সেটি শেরেবাংলা কাপ নামে নয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম রাউন্ডেও জেলাগুলোকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। শুরুর দিকে খেলা হয়েছে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। আটটি অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন দল উঠেছিল মূল পর্বে।

আরও পড়ুনটিকিট বিক্রির ‘ডিজিটাল স্বাদ’ নিতে গিয়ে লেজেগোবরে বাফুফে২৭ মে ২০২৫

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে শেরেবাংলা কাপ স্মরণীয় হয়েই আছে। সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলও। এই দুই আয়োজন ছিল তৃণমূলে প্রতিভা খুঁজে বের করার অন্যতম প্রধান মঞ্চ। এই দুই টুর্নামেন্ট থেকে উঠে এসে অনেক ফুটবলারই গায়ে তুলেছেন জাতীয় দলের জার্সি।  

সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ যুব ফুটবল আজ শুধুই স্মৃতি। তবে বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। এরপর মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট, যা হবে নকআউট–ভিত্তিক।  

আরও পড়ুনবাংলাদেশের ফুটবলারদের বাজারদর কার কত২০ জানুয়ারি ২০২৫

বাফুফের সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এগুলো তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে করা হবে। এই প্যাকেজের জন্য আমাদের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা দেবে মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পেরেছি। বাকি টাকা স্পনসরের মাধ্যমে সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে টুর্নামেন্টগুলো শুরুর সময় ঠিক করা হবে।’

বড় পরিসরে আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের সম্ভাবনার কথা প্রথম শোনা যায় গত ১১ এপ্রিল ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছিলেন, ‘জেলা থেকে খেলাধুলা শুরু হওয়া উচিত। আশা করছি, ২-৩ মাসের মধ্যেই জেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারব।’

গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া তারুণ্যের উৎসব এখনো চলমান। এই উৎসবের অংশ হিসেবেই বাফুফে সারা দেশে অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে, যার চূড়ান্ত পর্ব এখনো বাকি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ের ১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় উৎসব
  • দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে: মজিবুর রহমান
  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’
  • ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত