ফিলিস্তিনের গাজায় ‘ত্রাণ ফুরিয়ে গেছে ও ভয়াবহতার দুয়ার আবার খুলেছে’ বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। উপত্যকাটিতে ত্রাণ ও সব ধরনের পণ্য সরবরাহের প্রবেশ আটকে দিয়েছে ও সম্প্রতি সেখানে নতুন করে বেপরোয়া হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘গাজা মানুষ হত্যার একটা ক্ষেত্র (হয়ে উঠেছে) ও সেখানকার বেসামরিক লোকজন এক অন্তহীন মৃত্যুফাঁদে আটকে পড়েছেন।’

গুতেরেসের এ মন্তব্যের আগে জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থার প্রধান ফিলিস্তিনিদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে খাবার ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত১৩ ঘণ্টা আগে

তবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় যথেষ্ট খাবার রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুতেরেস কুৎসা রটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রথম দফার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ গত ২ মার্চ শেষ হয়। এর পর থেকে দেশটি আবারও গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং সেখানে নতুন করে নির্বিচার হামলা ও বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরায়েল তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রথম দফার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ গত ২ মার্চ শেষ হয়। এর পর থেকে দেশটি আবারও গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং সেখানে নতুন করে নির্বিচার হামলা ও বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরায়েল তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।

১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলের নতুন করে শুরু করা বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, তারা কোনো বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করে না।

আরও পড়ুনগাজার রাফা শহর খালি করার নির্দেশ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর০১ এপ্রিল ২০২৫

আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীন গাজার জনগণের কাছে খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছানো নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা দখলদার শক্তির (ইসরায়েল) রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সে পথ বন্ধ। আন্তর্জাতিক আইন ও ইতিহাসের চোখে এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এসব মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় কোনো খাবারের সংকট নেই। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরিন মারমোরস্টেইন বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই। ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ত্রাণবাহী ২৫ হাজারের বেশি ট্রাক ঢুকেছে।’

আন্তর্জাতিক আইনের অধীন গাজার জনগণের কাছে খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছানো নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা দখলদার শক্তির (ইসরায়েল) রয়েছে। বর্তমানে সে পথ বন্ধ। আন্তর্জাতিক আইন ও ইতিহাসের চোখে এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মহাসচিব

গুতেরেসের মন্তব্যের আগে গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতি দেয় জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থা। বিবৃতিতে তারা ফিলিস্তিনিদের কাছে খাবার ও ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজার বাসিন্দারা আবার ফাঁদে আটকে পড়েছেন এবং বোমা হামলা ও ক্ষুধার শিকার হচ্ছেন। গাজার সব বাসিন্দাকে খাওয়ানোর মতো এখন যথেষ্ট খাদ্য নেই এবং অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ফুরিয়ে আসছে।’

আরও পড়ুনগাজায় দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে পৌনে ৬ লাখ মানুষ: জাতিসংঘ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বিবৃতিতে যেসব সংস্থার প্রধানেরা সই করেছেন, সেসব হলো ওসিএইচএ, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, ডব্লিউএইচও, ইউএনআরডব্লিউএ, ইউএনওপিএস।

জাতিসংঘের ৬ সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার বাসিন্দারা আবার ফাঁদে আটকা পড়েছেন এবং বোমা হামলা ও ক্ষুধার শিকার হচ্ছেন। গাজার সব বাসিন্দাকে খাওয়ানোর মতো এখন যথেষ্ট খাদ্য নেই এবং অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ফুরিয়ে আসছে।

ইতিমধ্যে গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় এ উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৫০ হাজার ৮১০–এর বেশি।

আরও পড়ুনরোজার মধ্যেই গাজায় সব ধরনের ত্রাণ ও পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে দিচ্ছে ইসরায়েল০২ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল

সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।

আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫

গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।

এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।

আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।

এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক

তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে