৬ কোটির মার্কেটে টেকা যায় না মলমূত্রের গন্ধে
Published: 10th, April 2025 GMT
উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় (সিটিইআইপি) নির্মিত হয়েছিল পিরোজপুর মাল্টিপারপাস সুপারমার্কেট। ২০২১ সালে কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২৪ সালের শেষের দিকে বরাদ্দ হয় ১৪টি দোকান। চার বছরে এসেও এ মার্কেটটি কোনো কাজে আসছে না। দু-একটি দোকান নামমাত্র চালু দেখা যায়। বাকি কক্ষগুলো অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়। দোকান মালিকদের ভাষ্য, নকশাগত ত্রুটির কারণে মার্কেটটির সুফল পাচ্ছেন না পৌরবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের পুরাতন পৌরসভা সড়কে ২০২১ সালে মাল্টিপারপাস সুপারমার্কেটের কাজ শেষ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। এতে খরচ হয় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সিটিইআইপি প্রকল্পের আওতায় এতে অর্থসহায়তা দেয় দাতা সংস্থা এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ মার্কেটের জমিতে আগে ছিল পুরাতন পৌর ভবন। সেটি ভেঙে মাল্টিপারপাস সুপারমার্কেট নির্মিত হয়।
সরেজমিনে মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রস্রাব-পায়খানা ও ময়লার কারণে ভেতরের বেশির ভাগ কক্ষে টেকাই দায়। সাবেক এক যুবলীগ নেতার নামে বরাদ্দ দুটি কক্ষ দখল করে নিজ কার্যালয়ে রূপান্তরিত করেছেন এক বিএনপি কর্মী।
হোমিও চিকিৎসক মো.
মার্কেটের সামনের সড়কে স্থাপন করা হয়েছে ইজিবাইক স্ট্যান্ড। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এখানকার অধিকাংশ কক্ষ গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে মার্কেটের মূল চরিত্র ও অবয়ব দৃশ্যমান নয়। তাই এলাকাবাসীরও এ মার্কেট নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. আব্দুল হাই হাওলাদারের দাবি, একরকম বাধ্য হয়ে তারা এ মার্কেটটি নির্মাণে সম্মতি দিয়েছিলেন। যদিও পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুস ছালাম বাতেনের ভাষ্য, বিশেষ মহলের স্বার্থরক্ষায় মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বিদেশি সংস্থার টাকার অপচয় হয়েছে। এটি এখন গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মার্কেটের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। মার্কেট নির্মাণের পরে দোকান বরাদ্দ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পিরোজপুরের একটি প্রভাবশালী মহল নিজস্ব লোকজনকে দোকান বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডি যখন উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বহুমুখী মার্কেটটি নির্মাণ শুরু করে, তখনই নকশাগত ত্রুটির বিষয়টি সামনে এসেছিল। তবে বিদেশি সহায়তায় নির্মাণের কারণে পৌরসভার তৎকালীন মেয়র, প্রকৌশল বিভাগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলের কোনো আপত্তি গ্রাহ্য করা হয়নি।
পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকোশলী ধ্রুব লাল দত্ত বণিক বলেন, সুপারমার্কেটটি ছয়তলা ভিত্তির ওপর নির্মিত। একতলার ১৪টি দোকান নির্মাণের পর আগ্রহী ব্যক্তিরা দরপত্রের মাধ্যমে বন্দোবস্ত পান। এ জন্য তাদের জামানত দিতে হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। মাসিক ভাড়া ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। ৬ মাস আগে দোকানগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস