Samakal:
2025-11-03@07:37:48 GMT

রংপুরে বাঁধ নিয়ে শঙ্কিত মানুষ

Published: 10th, April 2025 GMT

রংপুরে বাঁধ নিয়ে শঙ্কিত মানুষ

‘সামনোত তো বষ্যা আসি গেইল। সবায় খালি কতায় কয়, এলাও বান্দের কোনো কাম (বাঁধের কাজ) হইল না। কায় জানে বাহে, এইবার বান্দ ভাঙলে হামারও বুজি এটেকোনা থাকা হবার নয়।’ 
আসন্ন বর্ষায় পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় এমন অভিব্যক্তি রংপুরের গঙ্গাচড়ার ধামুর এলাকায় তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধের বাসিন্দা শহর বানুর। কয়েক বছর ধরে তিস্তার পানি কখনও কমে, আবার কখনও বেড়ে যায়। পানিপ্রবাহের এ অস্বাভাবিকতায় প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ওপর রয়েছে দখল-দূষণ। এসব কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আগামী বর্ষা ঘিরে নাজুক এ বাঁধ নিয়ে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তিস্তাপারের মানুষ। তারা দ্রুত বাঁধটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে নীলফামারীর জলঢাকা থেকে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেল সেতু পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তিস্তা রেল সেতু থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত আরও ২১ কিলোমিটার রয়েছে এই বাঁধের অংশ। ২০১৯ সালে সর্বশেষ ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। বামতীর বাঁধ রয়েছে তিস্তা ব্যারাজ থেকে লালমনিরহাট হয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর পর্যন্ত মোট ১২০ কিলোমিটার। ডানতীর বাঁধের নীলফামারীর জলঢাকার শৌলমারী এলাকায় দুই কিলোমিটার, আলসিয়াপাড়ায় এক কিলোমিটার ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
সরেজমিন দেখা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া থেকে নোহালী পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধের ওপর বসতি গেড়েছে নদীভাঙনের শিকার ১০ হাজার পরিবার। বসতির ভারে তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। বাঁধের বেশির ভাগ স্থান কেটে সমতল করে স্থানীয় দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় জলঢাকার শৌলমারী ও গঙ্গাচড়ার নোহালী সীমান্ত থেকে রংপুরের কাউনিয়ার নিচপাড়া পর্যন্ত দখলদারদের কবলে চলে যায়। হুমকির মুখে পড়ে ডানতীরের বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বহুবার উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েও দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারেনি। বাঁধটি অবৈধ দখলদারদের পাশাপাশি ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধের প্রস্থ ১৪ ফুট থাকার কথা থাকলেও এখন অনেক স্থানেই তা নেই। 
কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার নওশের আলী বলেন, গত দুই বছরের বন্যায় বিভিন্ন উপবাঁধসহ বিনবিনা এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধের বিশাল এলাকা বিলীন হয়ে গেলেও তা সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো পদক্ষেপ নেই। এসব কারণে তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
গঙ্গাচড়া সদরের গান্নারপার এলাকার গোলাম মওলা বলেন, পানি বাড়া-কমার কারণে বাঁধে পানির ধাক্কা লেগে বিভিন্ন স্থানে মাটি সরে গেছে। বর্ষা শুরুর আগে বাঁধ মেরামত করা না গেলে বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 
একই এলাকার মনছুর আলী বলেন, প্রতিবছরই এখানকার ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায় তিস্তা। গোটা মৌসুমজুড়ে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। ঠিকানাহীন পরিবারগুলো প্রতিবছর বাঁধ কেটে বস্তি গড়ে তুলছে। এতে বাঁধ নাজুক হয়ে পড়েছে। 
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘খুব দ্রুত তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন। না হলে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করলে গোটা রংপুর শহর তলিয়ে যাবে।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের পর বাঁধের সংস্কার কাজ করা হয়নি। ওই সময় বাঁধে বসবাসকারীদের উচ্ছেদও করা হয়েছিল। মাঝখানে আবারও বাঁধে বসতি গড়ে উঠেছে। এতে বাঁধের বেশকিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড নত র ব

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান