বয়স তাঁর কাছে সংখ্যামাত্র! ৬৭ বছরের বলিউড অভিনেতা সানি দেওলের ‘ঢায় কিলো কা হাতে’ পড়ুন [আড়াই কেজি ওজনের হাতের] ম্যাজিক যে এখনও অক্ষত, তা কখনও পর্দায় টিউবঅয়েল, কখনও ল্যাম্পপোস্ট তুলে হুঙ্কার দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এবার নতুন ছবিতে বিশাল আকারের সিলিং ফ্যান হাতে ধরা দেবেন সানি দেওল। ২০২৩ সালে বক্স অফিসে ‘গাদ্দার ২’ সিনেমার মাধ্যমে সানি তাঁর চলচ্চিত্র জীবনকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করা ছবি উপহার দিয়ে রাজনীতির ময়দান থেকে বর্তমানে অভিনয়েই মনোনিবেশ করেছেন তিনি। এবার ‘জাত’ সিনেমায় রবিনহুড রূপে ধরা দিলেন সানি দেওল।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে সিনেমার ট্রেলার। এতে দেখা গেল সানির সঙ্গে সম্মুখ সমরে রণদীপ হুদা। ‘জাট’ সিনেমায় খলনায়ক রণতুঙ্গার চরিত্রে দেখা যাবে রণদীপকে; যার অত্যাচারে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। বলা ভালো, গ্রামকে শ্মশানে পরিণত করেছে সে। ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে রবিনহুডের মতো সেই গ্রামে হাজির হন সানি। যেমন অ্যাকশন, তেমনই সংলাপ। ‘জাত’ ট্রেলারে স্পষ্ট, বলিউডের ‘গাদ্দার ২’-এর থেকেও দক্ষিণী পরিচালকের হাত ধরে দুরন্ত অ্যাকশন ছবি উপহার দিতে চলেছেন সানি। এখন পর্যন্ত একাধিক বলিউড তারকা দক্ষিণমুখো হয়েছেন কিংবা দক্ষিণী পরিচালকের হাত ধরে ব্লকবাস্টার প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। এবার দেখার পালা, সানি কী করেন। এর আগে একাধিক গণমাধ্যমে সানির বাবা বরেণ্য অভিনেতা ধর্মেন্দ্র আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘বলিউড দেওলদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়নি।’ ফলে ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে সানি দেওল বললেন, ‘বলিউডকে মনে করিয়ে দিলেন, শেষমেশ সিনেমায় আমাদের কাজের কদর করছে। এটিই সময়। অনেক বছর অপেক্ষা করেছি। আমাদের পরিবারের আসলে স্বীকৃতি পেতে বরাবরই দেরি হয়। ওই কথায় বলে না, কর্ম করে যাও, ফলের আশা না করে। লড়ে যাও, থেমো না।’
এবার আর টিউবঅয়েল কিংবা হাতুড়ি নয়, সানি দেওলের ‘ঢায় কিলো কা হাতে’ এবার দেখা গেল রাক্ষুসে এক লোহার পাখা। অবশ্য যেটি তাঁর শত্রুদমনের অস্ত্র হিসেবে দেখা যাবে পর্দায়। ৬৭ বছরের সানি দেওলের এই ছবিও যে ভরপুর অ্যাকশন-প্যাকড সিনেমা হতে চলেছে, তা প্রথম দেখায় বেশ আন্দাজ করা গেল। ‘জাত’ পরিচালনা করেছেন তেলেগু পরিচালক গোপীচাঁদ মালিনেনি এবং প্রযোজনায় মাইথেরি মুভি মেকারস। সানি দেওল, রণদীপ হুডা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিনীত কুমার সিং, সায়ামি খের, রেজিনা কাসান্দ্রার মতো অভিনেতারা।
ছবির ট্রেলার দেখে দর্শক যতই খুশি হোক না কেন, ছবির নাম নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সেই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া ছবির ‘ও রাম শ্রীরাম’ গানটি। এবার সব বিতর্কের অবসান ঘটাতে সিনেমাটি নিয়ে বলেছেন দুই অভিনেতা সানি দেওল ও রণদীপ হুডা। ছবির প্রচারে গিয়ে সানি বলেছেন, ‘জাত কোনো ধর্মীয় উস্কানিমূলক ছবি নয়, দয়া করে এর গায়ে ধর্মীয় তকমা সেঁটে দেবেন না। ছবিটি সম্পূর্ণ বিনোদনমূলক। আমরা চাই দর্শকরা ছবিটা উপভোগ করুক, এর বেশি কিছু নয়। আমরা সব ধর্মকেই ভালোবাসি। একজন অভিনেতা হিসেবে ছবির মাধ্যমে গোটা বিশ্বের সামনে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করি আমরা। তাই দেশের সম্মান খর্ব হবে এমন কোনো বিষয় আমাদের ছবিতে দেখাতে চাই না। ছবির মাধ্যমে আমরা কোনো ধর্মীয় বার্তা দিতে চাই না।’ তাঁর কথার সূত্র ধরে ছবির আরেক অভিনেতা রণদীপ হুডা বলেন, ‘‘আপনারা সবাই ছবির ‘জাত’ নাম নিয়ে কৌতূহলী। ছবিতে জাত আসলে কী, একটা সম্প্রদায় নাকি এজেন্ট নাকি কোনো ব্যক্তি, সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ছবিতে এবং সেই কারণে আপনাদের ছবিটা দেখার অনুরোধ করব।’’ আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে।
১৯৮৩ সালে ‘বেতাব’ ছবি দিয়ে বলিউডে পা রেখেছিলেন সানি দেওল। এরপর ২০০০ সালে তাঁর ‘গাদ্দার,’ বক্স অফিসে ঝড় তুলে দিয়েছিল। তবে ৪০ বছরের সিনেমাযাত্রায় এর আগে ‘গাদ্দার ২’ সিনেমার মতো বড় হিট দিতে পারেননি সানি দেওল। তারপর থেকে নিজের ‘দাম বাড়িয়েছেন’ এই অভিনেতা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ‘গাদ্দার ২’ সানি দেওলের ক্যারিয়ারে মাইলস্টোন হওয়ার পর ‘জাত’ কেমন ব্যবসা করে, নজর থাকবে সেদিকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল