রাস্তার পাশে ইট-সুরকির স্তূপ থেকে একটি কাটা হাত বের হয়ে ছিল। সেখানে ছড়াচ্ছিল দুর্গন্ধ। হাতটি দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেন এক পথচারী। এর পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ইট-সুরকি সরিয়ে বস্তা ও কাপড় দিয়ে মোড়ানো তিনটি অর্ধগলিত খণ্ডবিখণ্ড লাশ দেখতে পায় পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকা থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত তিনজন একই পরিবারের। তারা হলেন– পোশাককর্মী লামিয়া আক্তার (২২), তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ লাবিব (৪) ও বড় বোন মানসিক ভারসাম্যহীন স্বপ্না আক্তার (৩৫)। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে লামিয়ার স্বামী মো.
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মিজমিজির পশ্চিমপাড়া পুকুরপাড় এলাকার আখতার হোসেনের বাড়ির পেছনে সড়কের পাশের ইট-সুরকির ভেতরে লাশ তিনটি চাপা দেওয়া ছিল। লামিয়ার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। স্বপ্নার দুই পা হাঁটু থেকে এবং দুই হাত ও মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দুই বোনের লাশ ছিল একসঙ্গে পেঁচানো, আরেকটি বস্তায় ছিল আব্দুল্লাহর লাশ। শিশুটির শরীর অক্ষত। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
পুলিশের ধারণা, কয়েক দিন আগে তাদের হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে সিমেন্টের বস্তা ও কাপড় পেঁচিয়ে ইট-সুরকির নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের স্বজন জানান, যেখানে লাশ পাওয়া গেছে, সেখান থেকে আনুমানিক ২৫ গজ দূরে একটি ঘর ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকতেন ইয়াসিন। তাঁর স্ত্রী লামিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মী। ইয়াসিন এলাকার বাসাবাড়িতে চুরি এবং মাদক সেবন করেন। লামিয়ার কাছে মাঝেমধ্যেই টাকা দাবি করতেন তিনি। কিন্তু লামিয়া যা আয় করতেন, তা সংসার চালাতেই শেষ হয়ে যেত। বেকার ইয়াসিন টাকা চেয়ে না পেয়ে স্ত্রীকে মারধর করতেন। লামিয়ার প্রতিবন্ধী বোন স্বপ্না তাঁর কাছে থাকতেন। স্বজনের অভিযোগ, ইয়াসিন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকাল থেকে ইয়াসিনকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘুরতে দেখেন এলাকাবাসী। লাশ উদ্ধারের সময়ও তিনি ছিলেন। লামিয়ার বোন মুনমুন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিচয় শনাক্ত করেন। তখন এলাকাবাসী ইয়াসিনকে ধরে পুলিশে দেন। তার বাবার নাম মো. দুলাল। তাদের পৈতৃক বাড়ি ছিল মিজমিজি পশ্চিমপাড়ায়। তবে বাড়িটি তাঁর বাবা বিক্রি করে দিয়েছেন। এ কারণে ১ এপ্রিল একই এলাকার আখতার হোসেনের বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নেন ইয়াসিন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) তারেক আল মেহেদী জানান, হত্যায় জড়িত সন্দেহে ইয়াসিনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
নিহত স্বপ্না ও লামিয়ার খালা শিরিন বেগম বলেন, ‘আমার বোনের মেয়েরা বাবা-মাহারা। লামিয়া প্রেম করে বিয়ে করেছিল। স্বপ্না মানসিক ভারসাম্যহীন। চার দিন তাদের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। বাসায় তালা দেওয়া ছিল। আজ (শুক্রবার) এসে দেখি তিনজনের লাশ। লামিয়ার স্বামী বখাটে ও মাদকাসক্ত। তাদের প্রায় সময়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো।’
মুনমুন জানান, ইয়াসিন ঈদের তিন দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পান। তিনি মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসায় জড়িত। হত্যাকাণ্ডের জন্য ইয়াসিনকে দায়ী করছেন মুনমুন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, ইয়াসিন ছিঁচকে চোর ও মাদকাসক্ত হিসেবে চিহ্নিত। লামিয়ার কাছে তিনি প্রায়ই টাকাপয়সা চাইতেন। টাকা না দেওয়ায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। এর জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
নিখোঁজ মাঝির লাশ উদ্ধার
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কর্ণফুলী নদীতে নিখোঁজের পরদিন জাবেদ আহমেদ নামে এক মাঝির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার নদীর বোয়ালখালী হামির চর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। জাবেদ কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শরীফ আলীর ছেলে। বুধবার সন্ধ্যায় জাহাজের সঙ্গে নোঙর করা ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা ছুটে গেলে সেটি আটকাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে যান জাবেদ।
ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী নিহত
বরিশাল ব্যুরো জানায়, নগরে ছুরিকাঘাতে মাসুদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, গত বুধবার রাতে প্রেমিকা কৌশলে তাঁকে বাসায় ডেকে নিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তির পর শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মাসুদুর নগরের নতুন বাজার টেম্পো স্ট্যান্ড এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে। কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, বুধবার রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মাসুদুরের প্রেমিকা ও দুই ভাইকে আটক করে। কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় পরদিন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযাগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল শ উদ ধ র শ ক রব র এল ক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।