নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ইয়াসিন মিয়া জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিহত স্ত্রী-সন্তানের ছবি দেখেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। নেশাগ্রস্ত থাকায় অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। একটি প্রশ্ন ১০ বার জিজ্ঞাসা করলে একবার সাড়া দিচ্ছেন। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে গত রোববার রাতে বা সোমবার প্রথম প্রহরে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়েছে।

তিন খুনের ঘটনায় করা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো.

হাসিনুজ্জামান আজ শনিবার এ তথ্যগুলো জানান। তিনি বলেন, ‘নেশায় বুঁদ হয়ে থাকায় ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদে সময় লাগছে। আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কী কারণে কেন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তা উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে।’

গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া পুকুরপাড় এলাকা থেকে মাটিচাপা দেওয়া বস্তাবন্দী অবস্থায় একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তিনজনের মধ্যে গৃহবধূ লামিয়া আক্তারকে গলা কেটে, তাঁর চার বছর বয়সী ছেলে আবদুল্লাহ রাফসানকে শ্বাসরোধে এবং বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে গলা, হাত-পা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় লামিয়ার স্বামী ইয়াছিনকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে ইয়াছিনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন লামিয়ার মেজো বোন মুন মুন আক্তার।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. হাসিনুজ্জামান জানান, যেখানে তিনজনের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ইয়াছিনকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন এলাকাবাসী। নেশাগ্রস্ত হওয়ায় ইয়াছিন কর্মক্ষম ছিলেন না। স্ত্রী লামিয়ার কাছে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা চাইতেন। এটা নিয়ে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। এর জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, সোমবার থেকে ভুক্তভোগী লামিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর স্বজনেরা যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। বুধবার ইয়াছিন ৫০০ টাকায় লামিয়ার ফোনটি একজনের কাছে বিক্রি করেন। এ জন্য ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা আছে বলে তাঁদের মনে হচ্ছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে ‘নিখুঁত ক্রাইম’ মন্তব্য করে পুলিশ কর্মকর্তা মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, ‘একটি ঘরে তিনজন মানুষ থাকত। তাদের হয়তো ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। জায়গাটি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ। তাঁদের তিনজনকে বাইরে নিয়ে হত্যা করলে সে ক্ষেত্রে অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি হবে। এভাবে ক্রাইম করা সম্ভব নয়। এখানে কেউ তাঁর সহযোগী ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনদুর্গন্ধের সন্ধান খুঁজতে গিয়ে শিশুসহ তিনজনের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার১১ এপ্রিল ২০২৫

ইয়াছিনের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হাসিনুজ্জামান বলেন, গত দুই থেকে তিন বছর ধরে নেশায় আসক্ত জীবন চলছে তাঁর। ভুক্তভোগী লামিয়া বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি করার চেষ্টা করছিলেন। ইয়াছিন বিষয়টি মেনে নিতে চাচ্ছিলেন না। এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইয়াছিনের আসল মা দুবাইপ্রবাসী। ইয়াছিনের বাবা দুলাল মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী আছে। ইয়াছিনের এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড ও নেশাসক্ত জীবনযাপনের কারণে তাঁরা হয়তো তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত নজন র র ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, ৩ যুবককে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর

সাতক্ষীরার দেবহাটায় সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় তিন যুবককে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও আটক করা হয়। তবে আটক তিনজনের সাথে থাকা অপর দু’জন পৃথক একটি মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার পুষ্পকাটি সরদার বাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

আটককৃতরা হলো- দেবহাটা উপজেলার বহেরা গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে মো. নাহিদ হোসেন (৩০), আশাশুনি উপজেলার গোদাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর গাজীর ছেলে মো. আব্দুর রহমান (৩২) ও শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি গ্রামের আফতাব আলীর ছেলে মো. আব্দুর রহিম (৩৫)। 

পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে পালিয়ে যাওয়া দুই সহযোগীসহ আটককৃতরা পুষ্পকাটি গ্রামের আ’লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানীর বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। বাদানুবাদের সূত্র ধরে তারা ওই বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর শুরু করে। একপর্যায়ে তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা গোলাম রব্বানীকে ছুরিকাঘাত করে।  এ সময় স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে তিনজনকে আটক করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটককৃতদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাতে আটক তিন যুবককে দেবহাটা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

আ’লীগ নেতা গোলাম রব্বানীর ভাই আব্দুর রব জানান, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে পাঁচ যু্বক দু’টি মোটরসাইকেলযোগে তার ভাইয়ের বাড়িতে যায়। এ সময় তারা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে স্থানীয় জনৈক রফিকের কাছে পাওনা ৫০ হাজার টাকার জন্য এসেছেন বলে গোলাম রব্বানীকে জানান। কথোপকথনের একপর্যায়ে তারা গোলাম রব্বানীকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় বাদানুবাদের সময় আটককৃতরা তার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে এবং বাড়িতে ঢুকে ভাংচুরসহ লুটতরাজ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সম্মিলিতভাবে হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে।

পরে ওই গ্রামের নৌবাহিনীতে কর্মরত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগ করে। পরে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর আটককৃতদের সেনাবাহিনীর হাতে ও মোটরসাইকেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

আব্দুর রবের দাবি, তার ভাই আ’লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ায় এবং ইট ভাটার মালিক হওয়ার সুযোগে আটককৃতরা চাঁদা দাবি করেছিল। দুই সহযোগী পালিয়ে গেলেও আটক তিন তরুণকে স্থানীয়রা গণপিটুনি দেয় বলেও তিনি স্বীকার করেন।

গোলাম রব্বানী জানান, তিনি ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। পাঁচ তরুণ দুপুরের দিকে অস্ত্রসহ তার বাড়িতে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে তার দুই বাহুসহ পিঠে ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত করে। এ সময় স্থানীয়দের সহায়তায় তিনজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। তার দাবি পালিয়ে যাওয়া দুই তরুণ তার বাড়ি থেকে ৯ লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। আটককৃতদের মোটরসাইকেল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

সেনাবাহিনীর সাতক্ষীরা সদর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর ইফতেখার আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেবহাটা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মুজাহিদ ফিরোজ জানান, গোলাম রব্বানী আওয়ামী লীগের নেতা। সমন্বয়করা বৃহস্পতিবার তার বাড়িতে গেলে তাদের উপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে তিনজনকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এটা একটি গভীর ষড়যন্ত্র।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আরাফাত হোসেনের ভাষ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিল তারা (আটককৃতরা)। তবে বর্তমানে তাদের কেউ কোনো কমিটিতে নেই। বরং নানা অপরাধমূলক অপতৎপরতায় জড়িত। সমন্বয়ক পরিচয়ে তারা যে কাণ্ড ঘটিয়েছে তা জুলাইয়ের চেতনার পরিপন্থী। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। 

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কিবরিয়া জানান, রাতে সেনাসদস্যরা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত তিনজনকে থানায় হস্তান্তর করেছে। গোলাম রব্বানীর দায়েরকৃত মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে। পালিয়ে যাওয়া দুইজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোবাইল চুরির সন্দেহে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৩
  • পাবনায় মুঠোফোন চুরির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা
  • বগুড়ায় মেয়ে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
  • লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
  • র‌্যাব পরিচয়ে উত্তরায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ছিনতাই
  • ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, ৩ যুবককে গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর