নিহত স্ত্রী-ছেলের ছবি দেখলেই হাউমাউ করে কাঁদছেন মামলার আসামি ইয়াছিন
Published: 12th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ইয়াসিন মিয়া জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিহত স্ত্রী-সন্তানের ছবি দেখেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। নেশাগ্রস্ত থাকায় অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। একটি প্রশ্ন ১০ বার জিজ্ঞাসা করলে একবার সাড়া দিচ্ছেন। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে গত রোববার রাতে বা সোমবার প্রথম প্রহরে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়েছে।
তিন খুনের ঘটনায় করা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো.
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া পুকুরপাড় এলাকা থেকে মাটিচাপা দেওয়া বস্তাবন্দী অবস্থায় একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তিনজনের মধ্যে গৃহবধূ লামিয়া আক্তারকে গলা কেটে, তাঁর চার বছর বয়সী ছেলে আবদুল্লাহ রাফসানকে শ্বাসরোধে এবং বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে গলা, হাত-পা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় লামিয়ার স্বামী ইয়াছিনকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে ইয়াছিনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন লামিয়ার মেজো বোন মুন মুন আক্তার।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. হাসিনুজ্জামান জানান, যেখানে তিনজনের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ইয়াছিনকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন এলাকাবাসী। নেশাগ্রস্ত হওয়ায় ইয়াছিন কর্মক্ষম ছিলেন না। স্ত্রী লামিয়ার কাছে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা চাইতেন। এটা নিয়ে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। এর জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, সোমবার থেকে ভুক্তভোগী লামিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর স্বজনেরা যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। বুধবার ইয়াছিন ৫০০ টাকায় লামিয়ার ফোনটি একজনের কাছে বিক্রি করেন। এ জন্য ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা আছে বলে তাঁদের মনে হচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে ‘নিখুঁত ক্রাইম’ মন্তব্য করে পুলিশ কর্মকর্তা মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, ‘একটি ঘরে তিনজন মানুষ থাকত। তাদের হয়তো ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। জায়গাটি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ। তাঁদের তিনজনকে বাইরে নিয়ে হত্যা করলে সে ক্ষেত্রে অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি হবে। এভাবে ক্রাইম করা সম্ভব নয়। এখানে কেউ তাঁর সহযোগী ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুনদুর্গন্ধের সন্ধান খুঁজতে গিয়ে শিশুসহ তিনজনের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার১১ এপ্রিল ২০২৫ইয়াছিনের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হাসিনুজ্জামান বলেন, গত দুই থেকে তিন বছর ধরে নেশায় আসক্ত জীবন চলছে তাঁর। ভুক্তভোগী লামিয়া বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি করার চেষ্টা করছিলেন। ইয়াছিন বিষয়টি মেনে নিতে চাচ্ছিলেন না। এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইয়াছিনের আসল মা দুবাইপ্রবাসী। ইয়াছিনের বাবা দুলাল মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী আছে। ইয়াছিনের এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড ও নেশাসক্ত জীবনযাপনের কারণে তাঁরা হয়তো তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত নজন র র ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী
রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।
৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগেতবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।