মাদারীপুরে চার খুনের ঘটনায় কৃষক দলের নেতা শাজাহানসহ গ্রেপ্তার ২
Published: 15th, April 2025 GMT
মাদারীপুরে আলোচিত চার খুনের ঘটনায় অন্যতম আসামি জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান খানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাঁর সহযোগী সায়েদ মোল্লাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্প থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
গ্রেপ্তার শাহজাহান খান (৪৫) মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের টেকেরহাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর সহযোগী সায়েদ মোল্লা (৩৫) একই এলাকার বাসিন্দা। সোমবার রাতে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল এলাকা থেকে শাহজাহান ও মঙ্গলবার সকালে ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে সায়েদকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
আরও পড়ুনমাদারীপুরে তিন খুন: ৩ দিন পরে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে দুই মামলা৩০ ডিসেম্বর ২০২৪পূর্ববিরোধ ও বালু ব্যবসার জের ধরে ৮ মার্চ তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন আতাউর রহমান সরদার ওরফে আতাবুর (৩৫), সাইফুল ইসলাম ওরফে হিটার সাইফুল (৩০), তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার (১৭)। আতাউর ও সাইফুল সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়ি এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে। পলাশ একই এলাকার মুজাম সরদারের ছেলে। নিহত সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন অলিল সরদার (৪০) ও তাজেল হাওলাদার (২০)। সর্বশেষ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাজেল হাওলাদার। অলিল সরদার এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
র্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্পের সূত্র জানায়, খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। এ নিয়ে প্রতিবেশী জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান খান ও বালু ব্যবসায়ী হোসেন সরদারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর জের ধরে ৮ মার্চ শাহজাহান খান ও হোসেন সরদারের নেতৃত্বে তাঁর লোকজন সাইফুলসহ তাঁর ভাইদের কুপিয়ে হত্যা করেন। এক দিন পরই সাইফুল ও আতাউর সরদারের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনায় শুরু থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল অভিযুক্ত কৃষক দলের নেতা শাহজাহান খান। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে তিনি রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় অবস্থান করছেন। পরে র্যাব-৮ ও র্যাব-৩ যৌথ অভিযান চালিয়ে আসামি শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে। পরে পৃথক অভিযানে তাঁর সহযোগী সায়েদ মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্পে কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চার খুনের ঘটনায় অন্যতম আসামি শাহজাহান দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। তাঁকে ধরতে র্যাব শুরু থেকেই তৎপর ছিল। সর্বশেষ তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় শাহজাহান ও তাঁর সহযোগী সায়েদ খানকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের হাতিরঝিল থানায় আসামিদের হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাব-৮–এর এ ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুনমাদারীপুরে ৩ খুন: মামলা হয়নি, আটকও নেই; পুরুষশূন্য এলাকায় বাড়ছে আতঙ্ক২৯ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন খ ন গ র প ত র কর সরদ র র র সহয গ এল ক র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।