ডেটলাইনের মধ্যে সংস্কার ও বিচার করে নির্বাচন দেন: জামায়াতের সেক্রেটারি
Published: 18th, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের ডেটলাইনের মধ্যে সব সংস্কার এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিচার দৃশ্যমান করে নির্বাচন হতে হবে। আর সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকতের বাংলাদেশ চাই। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরের একটি ডেটলাইন দিয়েছে। এর মধ্যেই সব সংস্কার করে, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে নির্বাচন দেন। আমরা সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। নির্বাচন নিয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেকে ভুল বোঝার চেষ্টা করে, কিন্তু জামায়াতের আমির গতকালও আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।’
কুমিল্লার লাকসাম সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ শুক্রবার কর্মিসম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াত আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। বক্তব্যের শেষে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। এর মধ্যে কুমিল্লা-৮ আসনে শফিকুল আলম (হেলাল), কুমিল্লা-৯ আসনে এ কে এম সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, কুমিল্লা-১০ আসনে ইয়াছিন আরাফাত এবং কুমিল্লা-১১ আসনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের জুন এবং ২৫-এর ডিসেম্বর দুটি ডেটলাইন দিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, যে ডেটলাইন দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে ১৪, ১৮ ও ২৪-এর মতো নির্বাচন হলে এ দেশের মানুষ আর কখনোই এমন নির্বাচন হতে দেবে না। নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য পুলিশে সংস্কার, সংবিধানের সংস্কার, প্রশাসনের সংস্কারসহ সব সংস্কার ন্যূনতমভাবে শেষ করতে হবে। হাসিনা ও তাঁর সহযোগীরা যাঁরা দেশকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের বিচার হতে হবে। বিচার দৃশ্যমান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এবং আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ হবে পূর্ণ স্বাধীন, জনগণের অধিকার থাকবে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, ইনসাফপূর্ণ অর্থনীতি হবে, এ দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হবে না। গত ১৬ বছর আমাদের ভোটাধিকার ছিল না, গণতন্ত্র ছিল না, আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। ১৭ বছর একটি কালো অধ্যায় পার করেছি আমরা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জণগণকে তাঁদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুর রব, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির মু.
লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর আমির মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু.শহিদ উল্যাহ ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু. জোবায়ের ফয়সাল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয ইসল ম র স ম হ ম মদ আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।