দুঃসংবাদ যেন পিছু ছাড়ছে না কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের। তিনি কুমিল্লা-৬ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসনের চার বারের এমপি। সরকার পতনের পর এরই মধ্যে বাহার ছাড়াও তার স্ত্রী-কন্যাদের নামে থাকা জমি, ফ্ল্যাট, ব্যাংক হিসাব জব্দ হয়েছে। এবার কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুরে থাকা ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের ১৫ শতক জমি ও ১৬ কোটি টাকা মূল্যের কুমিল্লার বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো.

জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে বাহার ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ২৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশও দেওয়া হয়েছে। আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

বাহারের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অবৈধ পথে বাহার সপরিবারে ভারত চলে যান। বাহার ভারতে বসেই ঘনিষ্ঠ দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। তবে তার কন্যা ডা. তাহসীন বাহার সূচনা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিবাদী পোস্ট দিয়ে রীতিমত ঝড় তুলছেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর আদালত বাহাউদ্দিন বাহার, তার স্ত্রী মেহেরুনন্নেছা বাহার, বড় মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা ও ছোট মেয়ে আয়মান বাহারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

পরে ৩ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনার ৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ৩ কোটি ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৩৫ টাকা রয়েছে। একই সঙ্গে ৩২ লাখ টাকা মূল্যের জমিসহ ১ হাজার ৪৭৪ বর্গফুটের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশও দেন আদালত।
এছাড়াও ১১ মার্চ বাহার ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা বাহারের নামে ঢাকার উত্তরায় থাকা দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশও দেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা চারটি হিসাবের ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৭ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
 
সাবেক এমপি বাহার কুমিল্লা ৬ (সদর) আসন থেকে ২০০৮ সাল থেকে নৌকার মনোনয়নে টানা ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। তাঁর বড় মেয়ে ডা. সূচনা গত বছরের ৯ মার্চ সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সরকার পতনের পর ডা. সূচনা মেয়র পদ থেকে অপসারিত হন। 

৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকায় বাহারের বাসভবন ও ব্যক্তিগত অফিসে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। এ সময় বাহারের লাইসেন্স করা একটি অগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। এছাড়াও বাহার নিয়ন্ত্রিত মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। 

দলীয় সূত্র জানায়, বাহার ও তার কন্যা ডা. সূচনার বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ডজনাধিক মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি-হামলার ঘটনায় বাহারসহ ২৬১ জনকে আসামি করে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো. ইনজামুল হক রানা।

এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, বাহার ও তার কন্যার বিরুদ্ধে দায়ের করা এসব মামলার তদন্ত চলমান আছে, এখনও কোনো মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দেওয়া হয়নি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র পতন র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে এবার জামায়াতের বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয়নগর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে ‍উপজেলার চান্দুরা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২টি আসনসহ দেশের মোট ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন সদর ও বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছিল। নতুন গেজেটে বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়ন—হরষপুর, চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়ন তিনটিকে আগের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মধ্যে রাখতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন বিজয়নগর উপজেলার চার বাসিন্দা।

আজকের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সভাপতি লুৎফর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রাষ্ট্রু সরকার, চান্দুরা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সোহাগ খন্দকার, চান্দুরা হেফাজতে ইসলামের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব সিদ্দিকী, চান্দুরা ইউনিয়ন যুব খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমদসহ আরও অনেকে। তারা আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে প্রায় ৯৬ হাজার ভোটার আছেন, যা উপজেলার মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। দুই লক্ষাধিক ভোটারবিশিষ্ট উপজেলা একক সংসদীয় আসনের উপযুক্ত হলেও বছরের পর বছর ধরে এটিকে একবার সদর, একবার সরাইল, আবার কখনো নাসিরনগরের সঙ্গে যুক্ত করে অবহেলার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে।

তিনটি ইউনিয়নকে আগের আসনে রাখার দাবিতে উপজেলার গোলাম মোস্তফা, এ কে এম গোলাম মুফতি ওসমানী, মো. জাহিদুজ্জামান চৌধুরী ও মো. বায়েজিদ মিয়া স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন গতকাল দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ১৭ ঘণ্টা আগে

এর আগে গতকাল বিকেলে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এ সময় তাঁরা আধা ঘণ্টার মতো সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই স্থানে আজ বিকেলে একই দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করার কথা আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ