কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অপবাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া সেই অটোরিকশাচালক ছয় দিন পর মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার বেলা সোয়া একটার দিকে মো. সবুজ (৩০) নামের ওই অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়। আগুনে তাঁর শরীরের প্রায় ৩৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল।

আজ সন্ধ্যায় সবুজের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

জাবেদ উল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মারা যাওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মো. সবুজে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সবুজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে থানায় মামলা করার জন্য। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুই সন্তানের জনক মো. সবুজ চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি চান্দিনা উপজেলা সদরের বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন পরিবার নিয়ে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। ১৩ এপ্রিল রাতে চান্দিনা উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতাল–সংলগ্ন এলাকায় চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁর অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ায় নিজের শরীরের পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সবুজ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চান্দিনা সদরের হাসপাতাল সড়কে ইউনুছ মিয়ার অটোরিকশা গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ তিনজন নিজেদের অটোরিকশা রাখতেন। পালাক্রমে তাঁরা তিনজন পাহারাও দিতেন। ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় ওই গ্যারেজ থেকে দুটি অটোরিকশা চুরি হয়ে যায়। যেদিন অটোরিকশাগুলো চুরি হয়, সেদিন পাহারা ছিল সবুজের। ঘটনার পর তিনি দাবি করেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে অটোরিকশা নিয়ে যায় চোর চক্র।

পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করে গত ৪ মার্চ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় একটি মামলা করেন চুরি হওয়া একটি অটোরিকশার মালিক দুলাল মিয়া। ওই মামলায় মানিক নামের একজনকে ধরে পুলিশে দেন এলাকাবাসী। তবে কয়েকজন মাতবর স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলে মানিককে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে উল্টো সবুজকে চোর আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু সবুজের পক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার সক্ষমতা না থাকায় তিনি ওই সিদ্ধান্ত মানেননি।

আরও পড়ুনচুরির অপবাদ দেওয়ায় শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা, দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে১৪ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ গত রোববার (১৩ এপ্রিল) রাতে কয়েকজন মাতবরের ইন্ধনে সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সবুজকে আটক করে তাঁর অটোরিকশাটি নিয়ে যান এবং তাঁকে চোর বলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে চাপ দেন। এ সময় সবুজ অপবাদ সহ্য করতে না পেরে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে দ্রুত স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিভিয়ে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সবুজকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। আজ দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।

সুবজের স্ত্রী খুশি আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গরিবের জন্য আইন, বিচার—কিছুই নাই। মাতবররা চোর ধরে ছেড়ে দিছে, আর আমার স্বামীকে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করল। তাদের কারণে মানুষ আমার স্বামীকে চোর বলত। আমার স্বামী এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে মারা গেছে। আমার স্বামীর অটোরিকশাটিও ফিরিয়ে দেয়নি। আমি এখন কীভাবে বাঁচব। দুটি সন্তান নিয়ে কোথায় যাব?’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র র অপব দ দ আম র স ব ম সব জ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলের পরিকল্পনা কয়েক দিন আগে আটকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইসরায়েল গত শুক্রবার ভোর রাতে হামলা করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় খামেনির একজন উপদেষ্টাও নিহত হন।

মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানিরা কি এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেছে? না, যতক্ষণ না তারা এটা করছে, ততক্ষণ আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আক্রমণের কথা ভাবছিও না।’

এদিকে গতকাল রোববার ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখান তাকে খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে প্রশ্ন করেলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কখনো আলাপই হয়নি, এমন অনেক বিষয় নিয়েও খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আমি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’

ফক্সের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা করার দরকার, তা করি।’ নেতানিয়াহু বলেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার একটি ফল হতে পারে সরকার পরিবর্তন। তেহরানের সৃষ্ট ‘অস্তিত্বের হুমকি’ দূর করতে ইসরায়েল যা যা প্রয়োজন, তা-ই করবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চলমান এই সংঘাত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এটি সহজেই শেষ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ইরানকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, যদি ইরান কোনো আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ