বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড.  মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে দীর্ঘ পোস্ট করেন। ওই পোস্টের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে কথোপকথনের স্ক্রিনশট যুক্ত করে দেন। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ভুক্তভোগী একই বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমি আমার ডিপার্টমেন্টের রশীদুল স্যারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। শুরুতেই আমি ডিপার্টমেন্টে তার নজরে আসি আমার মুখের হাসির (উনার ভাষ্যমতে) জন্য । আমার সাথে এভাবেই উনি কমপ্লিমেন্ট দিয়ে কথা বলা শুরু করে। তারপর ইনবক্সে নক দিয়ে নানাভাবে পড়ালেখার খোঁজখবর নেয় এবং আমি সরল মনে বিশ্বাস করি, আমি অনেক দূর থেকে এসেছি তাই এভাবে খোঁজ নিচ্ছে।”

আরো পড়ুন:

ভিক্ষুককে ‌যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গণধোলাই

শিশুকে যৌন নিপীড়ন, যুবক গ্রেপ্তার

তিনি লিখেছেন, “এভাবে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের ডিপার্টমেন্টের পিকনিক হয়। সেখানে তার বউয়ের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর একদিন ওনার বউ আমাকে নক দিয়ে বলে আমাদের এলাকায় কি কি খাবার (যেটা ফেমাস) পাওয়া যায়, যেটা উনি খেতে চান। আর আমিও বাসায় গিয়ে তাকে দিয়ে আসি (যেহেতু সরাসরি চেয়েছে), এভাবেই একটা সম্পর্ক তৈরি হয় তার সাথে আমার।”

তিনি আরো লিখেছেন, “এরপর আমি আমার ডিপার্টমেন্টের চিয়ারের সাথে তার রুমে যাই দু’একবার। উনি আমাকে বলেছিলেন ক্লাসের লেকচার না বুঝলে তার কাছ থেকে গিয়ে বুঝে নিতে। এটাও আমি খুব সরল মনে বিশ্বাস করি। কারণ আমার সাথে থাকা বান্ধবীরা প্রায়ই যেত তার কাছে, আমিও তাদের সাথেই যেতাম। এভাবে এভাবে চলতে চলতে উনি ইনবক্সে কথা বলা বাড়িয়ে দেয় এবং এক পর্যায়ে আমার শাড়ি পরা ছবি চায়। ব্যাপারটা ইমিডিয়েটলি আমি আমার কাছের এক বান্ধবীকে জানাই স্যার আমার কাছে এভাবে শাড়ি পরা ছবি চেয়েছে, আমি কি দিব? সে আমাকে বলে, স্যার আমার কাছেও চেয়েছিল। আমি স্যারকে বলি, স্যার আমার শাড়ি পরা কোন ছবি আপাতত নেই।”

ভুক্তভোগী পোস্টে বলেন, “এর কিছুদিন পরে আমাদের ভাইভা হয়, আর আমি সেখানে শাড়ি পরি। আর এ সময় উনি আমার কাছাকাছি এসে বারবার ছবি তোলেন। বিষয়টা অনেক বেশি অকওয়ার্ড হলেও আমি সবার সামনে কিছু বলতে পারি না। এরপর আমি কিছুটা ইগনোর করা শুরু করলে উনি আমাকে নক দিয়ে ওনার চেম্বারে যেতে বলেন। আমি তখনও ভাবি নি এত এত লোকের ভিড়ে উনি কিছু বলবেন বা কিছু করার সাহস পাবেন।”

ভুক্তভোগী পোস্টে আরো বলেন, “এতোটুকু ভরসা নিয়ে আমি তার রুমে যাই। উনি তখন শুরুতে আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল শুরু করে বলেন, ‘তুমি এত দূর থেকে পড়াশোনা করতে এসেছ। কোনোভাবে যদি তোমার রেজাল্টটা খারাপ হয়, বাবা মার কাছে কি জবাব দিবে।’ এরপর উনি আমাকে বলেন, ‘তোমার কোনো আইডিয়া আছে একজন ভার্সিটি টিচার সম্পর্কে? তোমার পাশ ফেল সবকিছুই আমার হাতে আমি যেভাবে বলবো তোমাকে সেভাবেই শুনতে হবে। এভাবে তোমার সিনিয়র রাও পাশ করে গেছে।’ এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর করোনা চলে আসে আমিও বাসায় চলে যাই। আর আমার আইডি ডিলিট করে দিই।”

তিনি বলেন, “কিছুদিন পরে অন্য একটি আইডি খুললে উনি আমাকে খুঁজে খুঁজে আবার রিকোয়েস্ট দেয় আর মেসেজ দিয়ে বলে তুমি কি আমাকে ব্লক করে দিয়েছো। আমি তাকে বলি আমার আইডি নষ্ট হয়ে গেছে। পড়ানো সময় সবকিছু আনসার টেন থাকার কারণে আমি ভাবছি যা হওয়ার হবে। তাই তার সাথে ওই সময় কোন যোগাযোগ রাখিনি। কিন্তু বিপত্তিটা করোনা পরবর্তী সময়ে ঘটলো।”

তিনি আরো বলেন, “ডিপার্টমেন্টে আবার ব্যাক করার পর সে তার বউয়ের আইডি থেকে নক করত শুরুতে। আমি ব্যাপারটা ধরতে পারিনি। এরপর আমাদের অনার্সের প্রজেক্ট এর সময় চলে আসে। আমার রোল ডিপার্টমেন্টের অন্য একজন শিক্ষকের আন্ডারে আসে কিন্তু উনি আমাকে ফোর্স করে অ্যাপ্লিকেশন দেওয়ায় তার গ্রুপে আসার জন্য। এত কষ্ট করে এতদিন পড়াশোনা করে আসলাম এখন তিনটা কোর্সে সে যেন ফেল করায় দিতে  বাধ্য না হয়। এসব ভয়ে আমি অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়ে তার গ্রুপে আসি।”

ভুক্তভোগী লেখেন, “এভাবে প্রজেক্ট এর কাজে একদিন আমার বান্ধবীর সহ তার রুমে গেলে প্রজেক্ট নিয়ে নানা আলোচনা করার পর আমার বান্ধবীকে বলেন, ‘তুমি সিঁড়ির কাছে একটু যাও। তোমার বান্ধবীর সাথে আমার একটু কথা আছে। আমি তো বাঘ না, ওকে খেয়ে ফেলবো।’ পরে উনি সরাসরি আমাকে বলেন, ‘তুমি কি জানো ক্লাসে পড়াই, আমার পড়ানো থেকে তোমার দেখে মনোযোগ বেশি থাকে। তোমাকে দেখলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।’ এর থেকেও আরও অনেক নোংরা নোংরা সেনসিটিভ কথা বলে, যা আমি পাবলিকলি বলতে পারব না। পরে আমি ওখানে কান্না করে দিলে উনি আমার ফোন নেয় এবং লক খুলতে বলে। তারপর ওনার লিস্টে ঢুকে ওনার চ্যাট ডিলিট করে আর বলে, ‘তুমি এসবের কোন রেকর্ড রাখো নাই তো?’ পরে ওই মুহূর্তে আমার বান্ধবী চলে আসলে আমি ওখান থেকে বের হয়ে চলে আসি।”

ভুক্তভোগী আরো লেখেন, “এরপর একদম প্রজেক্ট শেষ করে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার দিনে আমি যাই। সেদিনও উনি আমাকে একা অপেক্ষা করতে বলে। আমি আমার বান্ধবীকে বলি যে, ‘তুই প্লিজ থাক আমি একা একা ভয় পাচ্ছি।’ আমার বান্ধবী বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, উনি কথা বলতে বলতে এক সময় এসে আমাকে ব্যাড টাচ করার চেষ্টা করে। তখন আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে আসি। আমি তখন কান্না করতে করতে হলের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আমার এক বান্ধবী আমার দেখা পেয়ে কথা বলে আমার সাথে। আমার কাছে জানতে চায় আমার কি হয়েছে আমি তার সাথে কথা বলে ভরসা পাই শেয়ার করার। তাই তাকে আমি সব খুলে বলি। আমার সেই বান্ধবী এবং আরো একজন বন্ধু আমাকে সাজেস্ট করে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার সময় যে ছবিগুলো তোলা হয় আমার ফোন থেকে। সেগুলো সে চাওয়ার জন্য নক দিলে আমি যেন এমনভাবে কথা বলি তার সাথে, যেন সে যে আমাকে নোংরা প্রস্তাব দিয়েছে তার কোন প্রমাণ রাখতে পারি। ওদের কথা মতো আমি তার সাথে সেভাবেই কথা বলি। আর রাতের মধ্যেই সব কিছু গোছগাছ করে হল ত্যাগ করে বাসায় চলে আসি। নিচে আমার সেই প্রমাণস্বরূপ কনভারসেশন এর স্ক্রীনশট দেওয়া হলো।”

শেষে ওই শিক্ষার্থী লেখেন, “সে যেহেতু আমার ফোন নিয়ে তার সাথে আমার সমস্ত কনভারশেসন ডিলিট করে দেয়, সেহেতু আমি তাকে আমার ক্লাসমেট বন্ধুর কথামতো হানি ট্রাপে ফেলে শেষে এই কথাটুকু বের করে সস রেখে দিছি। যার কারণে আমি তার সাথে তালে তাল মিলিয়ে কথা বলতেছিলাম।”

পোস্টে দেওয়া স্ক্রিনশর্টে দেখা যায়, শিক্ষক রশীদুল ইসলাম বলছেন, ‘মিষ্টি মেয়ে একটা!’ উত্তরে ছাত্রী বলেন, ‘থ্যাংক ইউ স্যার, আপনি খুব ভালো মনের মানুষ।’ এবার শিক্ষক বলেন, ‘তোমাকে কী যেন করতে বলেছিলাম?’ শিক্ষার্থী উত্তরে বলেন, ‘বাসায় যেতে! আর আপনার বাসায় গেলে কেউ যদি দেখে ফেলে, কি না কি হবে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রশীদুল ইসলামকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়  শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য সচিব প্রক্টর অধ্যাপক মো ফেরদৌস রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।”

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল অধ্যাপক ড.

মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং এবং হুমকি দেওয়ার বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড প র টম ন ট র আম র ক ছ র আম র আম র স আম দ র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’

বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’ 

পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।

২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক
  • টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা
  • মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা