গায়েবি মামলায় ভুগছেন জবির ১১ শিক্ষার্থী
Published: 22nd, April 2025 GMT
হঠাৎ গ্রেপ্তার হন ১১ শিক্ষার্থী। তিন দিনের মধ্যে সাময়িক বহিষ্কার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তিন থেকে পাঁচ মাস জেল খাটেন। শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। তিন বছর আগের গায়েবি মামলায় এখনও ভুগছেন।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন ইসলাম জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ মার্চ পুরান ঢাকার একটি মেসে ওঠেন। ২৪ দিন পর আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তিন মাস জেল খাটেন। বর্তমানে তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। মামলা চালাতে পরিবারের খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৯ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানার এসআই জাহিদুজ্জামান বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার টোলপ্লাজা-সংলগ্ন এলাকায় লেগুনা ভাঙচুর এবং বোমাবাজির ঘটনায় মামলা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে ফাঁসানো হয় শাহিনকে। ঘটনার সময় তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে ছিলেন।
এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৫ মার্চ কোতোয়ালি থানার এসআই রুবেল খান বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন। এ দুই মামলায় জবির ১১ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী আল মামুন রিপন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি লক্ষ্মীবাজারে সবজির দোকান চালাতেন। মিথ্যা মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন। মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিন বছরে মামলার পেছনে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া আব্দুর রহমান অলি, শ্রাবণ ইসলাম রাহাত এবং রওশন-উল ফেরদৌসকে ফাঁসানো হয়। প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে ঢাকায় আসেন তারা। তিন মাস না পেরোতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় ওলির খরচ হয় সাড়ে ৪ লাখ, রাহাতের ৪ লাখ, ফাহাদের ৪ লাখ ও রওশনের ৬ লাখ টাকা।
রাহাত বলেন, ২০২২ সালের ৭ মার্চ গেণ্ডারিয়ায় বড় ভাই মো.
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহাদি হাসান জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক সপ্তাহ জানতেন না কী অভিযোগ। জেল থেকে আদালতে নেওয়ার পর জানতে পারেন ঘটনাটি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের আসিফ। এ নির্বাচনে ছাত্রলীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন, এর মধ্যে অনেকে ডিবেট করতেন না। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় ডিবেটিং সোসাইটির প্রার্থিতা বাতিলের উদ্দেশ্যে, যেন ছাত্রলীগের আসিফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হাসিব মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন এবং ছাত্রলীগের শাইদুল ইসলাম সাঈদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন। এর সঙ্গে সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
দুটি মামলার এজাহারে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আট মাস পার হলেও সুরাহা হয়নি। কোতোয়ালি থানা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছে। এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য আজ আদালতে উঠবে। যাত্রাবাড়ী থানার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় অগ্রগতি জানাতে পারছে না পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের গায়েবি মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খুব দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. রিফাত হাসান বলেন, এর আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই মামলা সমাধানে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেব। প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘১১ শিক্ষার্থীর গায়েবি মামলা নিষ্পত্তির জন্য একাধিকবার থানায় যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে আবার কথা বলব।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ১১ শ ক ষ র থ ২০২২ স ল র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনের রিমান্ডে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মামলায় রাজবাড়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামজিদ আহমেদ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই অভিযোগের আরেক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
কাজী কেরামত আলী রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। আগে দীর্ঘদিন তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ছয়বারের এই সংসদ সদস্য ২০১৮ সালে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট রাজবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব মোল্লা কাজী কেরামত আলীসহ ১৭০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় ৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মহাখালী থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
রাজবাড়ী আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিকাঈল হোসেন কাজী কেরামত আলীকে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া আরেকটি মামলায় কাজী কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনায়েত শিকদার। আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেন।