আসামি পালিয়ে যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে এসআই’র ধাক্কা!
Published: 22nd, April 2025 GMT
মারামারি মামলার আটককৃত আসামি পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আহত করার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ সিংগাইর থানার একজন এসআই’র বিরুদ্ধে।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে ভুক্তভোগী ওই নারী মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর সিংগাইর থানার এসআই পার্থ শেখর ঘোষের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়া, একই মামলার আরেক আসামিকে ধরতে না পেরে তার মেয়ে এবং মেয়ের দেড় বছর বয়সী এক শিশুকে ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জে ও এম তৌফিক আজমের বিরুদ্ধে।
এসআই পার্থ শেখর ঘোষের ধাক্কায় আহত অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর নাম সায়মা আক্তার ওরফে সালমা। তিনি সাংবাদিক মাসুম বাদশাকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অন্যতম আসামি সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের হুমায়ুনের স্ত্রী। ধাক্কায় আহত হওয়ার পর সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নেন তিনি।
অপরদিকে, দেড় বছরের শিশুসন্তানসহ ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা নারীর নাম সোনিয়া আক্তার। তিনি একই মামলার আরেক আসামী ওয়াজউদ্দিনের মেয়ে।
পুলিশ সুপার বরাবর অন্তঃসত্ত্বা সায়মা আক্তার ওরফে সালমার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত শনিবার দুপুর ৩টার দিকে সিংগাইর থানার এসআই পার্থ শেখর ঘোষ এবং সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মারামারি মামলার আসামি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে যান। কিন্তু আসামি হুমায়ুন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায়। সে পালিয়ে যাওয়ার কারণে এসআই পার্থ ক্ষীপ্ত হয়ে হুমায়ুনের স্ত্রী সায়মা আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
সালমা অভিযোগে উল্লেখ করেন, সায়মা আক্তার এসআই পার্থকে বলেন তিনি ৮ মাসের গর্ভবতী, একথা শোনার পরও এসআই পার্থ তাকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং একপর্যায়ে সায়মা আক্তারকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। ধাক্কা খেয়ে সায়মা আক্তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়দের সহযোগীতায় সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন সায়মা আক্তার সালমা।
অভিযোগে আরো বলা হয়, এ ঘটনার পর সিংগাইর থানার ওসি জে ও এম তৌফিক আজম সায়মা আক্তারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হুমকি প্রদান করে বলেন, “হুমায়ুন আত্মসমর্পণ না করলে পরিবারের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।”
এসময় অসুস্থ সায়মাকে সহযোগিতা করতে আসা পাশের বাড়ির সোনিয়া আক্তার ও আরিফ নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ওসির নির্দেশে। পরবর্তীতে সোনিয়া আক্তারের দেড় বছরের সন্তান থাকায় ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ও আরিফকে আদালতে চালান করে দেয়।
সিংগাইর থানা সূত্রে জানা যায়, আসামি হুমায়ুন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হুমায়ুনের ভাই আক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনসহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এসআই এসআই পার্থ শেখর ঘোষ।
পুলিশ জানায়, হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার পরিবারের সদস্যরাসহ আশপাশের লোকজন পুলিশকে বাধা প্রদান করে এবং পুলিশের উপর হামলা চালায়। হামলায় এসআই পার্থ শেখর ঘোষ, পুলিশ সদস্য মাহবুবুর রহমান ও মো.
এসআই পার্থ শেখর ঘোষ অন্তঃসত্ত্বা সায়মা আক্তার ওরফে সালমাকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “সাংবাদিক মাসুম বাদশাকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার পরিবারে সদস্যরা এবং আশপাশের বহু লোক এগিয়ে এসে মব জাস্টিস পরিস্থিতি তৈরি করে হুমায়ুনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে এবং আমাদের উপর হামলা চালায়। হুমায়ুনের স্ত্রী সায়মা আক্তার ওরফে সালমাকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি অসত্য। আমার নামে তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আর সোনিয়া আক্তারকে থানায় নিয়ে আসা হলেও ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
আসামি সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজম বলেন, “আসামি হুমায়ুনের হাতে হাতকড়া পড়ানোর আগেই সে পালিয়ে যায়। আসামী পলায়নে সহযোগিতা, পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় তদন্তে সোনিয়া আক্তারের সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকি চারজন সম্পৃক্ত থাকায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোসা. ইয়াছমিন খাতুন বলেন, “একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/চন্দন/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর সহয গ ত পর ব র ঘটন য় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’
পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।
এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’