অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাতজন আপিলকারীর পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ছিল। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।

দুদকের একটি মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে অধ্যাপক ইউনূসসহ সাত ব্যক্তির করা আপিল আজ বুধবার মঞ্জুর করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ রায় দেন। রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন এ কথা বলেন।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসসহ সাতজনের আপিল মঞ্জুর করে মামলাটি বাতিল করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ছিল, মামলা দায়েরে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে এবং হাইকোর্টের আদেশ ক্রুটিপূর্ণ ছিল, প্রমাণিত হলো।’

মামলাটির কার্যধারা বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে অধ্যাপক ইউনূসসহ অন্যদের করা আপিলের ওপর গত ১৯ মার্চ শুনানি শেষ হয়। সেদিন আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ২৩ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেন। আজ রায়ে আদালত বলেন, ‘আপিল ইজ অ্যালাউড।’

আদালতে আপিলকারীদের পক্ষ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান এবং দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানিতে ছিলেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অধ্যাপক ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়। মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলাটির কার্যধারা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে অধ্যাপক ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তৎকালীন শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা গত বছরের ৮ জুলাই আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত ২৪ জুলাই হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। অন্য ছয় আবেদনকারী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম (বর্তমানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন অধ্যাপক ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিকে এরই মধ্যে রাষ্ট্র বা দুদকের পক্ষে পিপি মামলাটি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। গত বছরের ১১ আগস্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক।

লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ২১ অক্টোবর আপিল বিভাগ আদেশ দেন। পাশাপাশি কনসাইজ স্টেটমেন্ট (আপিলের সারসংক্ষেপ) জমা দিতে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আপিলের ওপর শুনানি হয়।

আপিলকারীদের আইনজীবীর ভাষ্য, মামলাটি শুনানির জন্য বিচারিক আদালতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য থাকা অবস্থায় এর আগেই তাদের (আপিলকারীদের) না জানিয়ে গত বছরের ১১ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়, যাতে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।

এর আগে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ মে মামলাটি করেছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।

আরও পড়ুনঅধ্যাপক ইউনূসসহ সাতজনের আপিল মঞ্জুর, দুদকের মামলা বাতিল২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ আল ম ম ন গ র ম ণ ট ল কম র জ য ষ ঠ আইনজ ব ইউন সসহ স ত আপ ল ব ভ গ গত বছর র র আপ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর