প্রান্তিক মানুষকে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনের পথে সহজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকের অর্থ লুটে নিচ্ছে বিভিন্ন অবৈধ সংস্থা। এবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এমন অভিযোগ উঠেছে সাইনবোর্ডধারী একটি এনজিওর বিরুদ্ধে।

জানা যায়, উপজেলার গ্রাহকদের সহজে ঋণ দেওয়ার প্রকল্প নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে ওমেন্স গ্লোবাল এমপাওয়ারমেন্ট ফান্ড। তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নে কামড়াবন্দ গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে অস্থায়ী কার্যালয় করে কার্যক্রম চালাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে অফিস তালাবদ্ধ পান ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, গ্রাহকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা সঞ্চয় রয়েছে এনজিওটির কাছে। সকাল থেকে অফিস বন্ধ। এ ঘটনা জানাজানি হতে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে সহজ কিস্তিতে ৫ লাখ টাকা ঋণ প্রদানের কাজ শুরু করে বেসরকারি এই ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি। সংস্থাটির কাছে শতাধিক গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা সঞ্চয় ছিল।

জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে উপজেলায় নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে ওমেন্স গ্লোবাল এমপাওয়ারমেন্ট ফান্ড নামের প্রতিষ্ঠানটি। সংস্থাটির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ছিল ক্ষুদ্রঋণ প্রদান এবং শর্তানুসারে ৫০ হাজার টাকা জমা করলে সহজ কিস্তিতে ৫ লাখ টাকা ঋণ প্রদান। তাছাড়া সংস্থাটির সদস্য হতে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা সঞ্চয় দিতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের। এনজিওটির কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দেয়।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের সামনের অংশে ছোট একটি সাইনবোর্ড টানানো আছে। এতে লেখা রয়েছে মাইক্রোফিন্যান্স অ্যান্ড মাইক্রোক্রেডিট এবং এর নিচে লেখা ওমেন্স গ্লোবাল এমপাওয়ারমেন্ট ফান্ড। তাছাড়া অফিসের বারান্দায় আরেকটি সাইনবোর্ড পড়ে থাকতে দেখা গেছে, সেখানে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় সেভয় আইসক্রিম ফ্যাক্টরিসংলগ্ন, রোড নং ৮, ব্লক-ডি, বিএড ভবন (২য় তলা), তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ঢাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বারহাল গ্রামের আবুল হাসেম জানান, পনেরোশ টাকা সঞ্চয় দিয়ে সদস্য হয়েছিলেন। পরে আরও ৫ হাজার টাকা জমা করতে বললে তাও করেন। এক পর্যায়ে জানতে চাইলে কত টাকা ঋণ নিতে চান, তিনি ৫ লাখ টাকা জানালে ৫০ হাজার টাকা জমা করতে বলা হয়। তিনি ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করে জমা দেন। এখন এসে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। বাড়ির মালিক সৈয়দ মনিরুজ্জামান জানান ভাড়া নেওয়ার সময় এলাকায় ছিলেন না তিনি। 

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ